Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২৫ দিনের ব্যবধানে ফের বন্ধ জিকে প্রকল্পের পাম্প

ভারতের পানি প্রত্যাহারে শুকাচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের নদনদী

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

গঙ্গা নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় পদ্মাসহ উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় ৪০টি নদীতে তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে। পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে আাবার বন্ধ গেছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে সেচ প্রকল্প) পানি সরবরাহ। পনি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীতে ঠিকমতো পানি না পাওয়ায় আবারো এ ঘটনা ঘটেছে। তারা আরো জানান, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন করতে গিয়ে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া, তারা এ বছর বৃষ্টির দুষ্প্রাপ্যতাকেও এ ঘটনার জন্য দুষছেন।

জিকে পাম্প হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, গত রোববার ভোরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জিরোতে নেমে আসে দুটি প্রধান পাম্প। তারপর গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় আরো ১২টি বিভিন্ন ধরনের স্বয়ংক্রিয় সম্পূরক পাম্প। গত ২৬ মার্চ প্রথম বন্ধ হয়ে যায় পাম্প। ৫ এপ্রিল তা চালু ফের হয়। মিজানুর রহমান জানান, পাম্প হাউসের ইনটেক চ্যানেলে এখন মাত্র চার মিটার আরএল (রিডিউসড লেভেল) পানি পাওয়া যাচ্ছে। সেচের পানি সরবরাহ করতে হলে ইনটেকে পানি থাকতে হবে ১৪ দশমিক পাঁচ মিটার আরএল। পানি সরবরাহ চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে যায়।

জিকের কর্মকতারা জানাচ্ছেন, সেচ প্রকল্পটি পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল। পদ্মায় পানির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে চলে আসছে প্রকল্পটি। সেখানে পানি কম থাকলে জিকের ইনটেকে পানিপ্রবাহ নেমে যাবে এবং তারা পানি সরবরাহ করতে পারবেন না। প্রতিবছর জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে শুরু হয় জিকে প্রকল্পে পানি সরবরাহ। এ বছর ১৫ জানুয়ারি সেচ পাম্প চালু করা হয়েছিল এবং অব্যাহত ছিল পানি সরবরাহ। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানো হয়। এ পানিতে দুটি মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম চলে। এই চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় এ সেচ কার্যক্রম বিস্তৃত।

প্রকল্পের মূল পয়েন্ট কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পানি সংরক্ষণ খাল থেকে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুরে পানি সরবরাহের শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালে সেচ দেয়া হয় এ প্রকল্প থেকে। জিকে প্রকল্পের হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ গত রোববার থেকে কমে যেতে থাকে। গত মঙ্গলবার দুপুরে একেবারে কমে যায়। তারা বলছেন, পানি কমে যাওয়ার কারণ, ভারত এখন গঙ্গা থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়া বেসিনের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা নদীর এ পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয় ১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশের ‘ঐতিহাসিক’ গঙ্গা-পানি চুক্তির আলোকে।

জিকে প্রকল্পের হাইড্রোলজি বিভাগের নিবার্হী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, গঙ্গার পানি চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য পানি নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের প্রতিনিধি দল ফারাক্কা পয়েন্ট ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। গত জানুয়ারি থেকে দুই দেশের যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রতি ১০ দিন অন্তর পানির পরিমাণ পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানিপ্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে এবং অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত। তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানি প্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ।

জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, এই সময়টিতে বাংলাদেশ ২২ হাজার বা ২৩ হাজার কিউসেক পানি পাবার কথা। তবে আমরা এর চাইতে কম পাচ্ছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ৩০ সালের চুক্তি অনুযায়ী আমরা এখনো পানি পাইনি। যার ফলে পদ্মাসহ উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় ৪০টি নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এই কর্মকর্তা জানান, জিকের সেচ চালু রাখতে এবার তাদের একটু বেশিই হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ এবার বৃষ্টির দুষ্প্রাপ্যতা ঘটেছে। তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে নদীতে পানিপ্রবাহ অব্যাহত থাকে। তখন পানি প্রত্যাহার হয়ে গেলেও পদ্মায় বৃষ্টির নাব্য থেকে জিকে পানি টেনে নিতে পারে। কিন্তু এবার সেমনটি করতে পারছে না। তিনি বলেন, জিকে পাম্পে পানি আনতে পদ্মা নদী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের একটি ইনটেক চ্যানেলের সহায়তা নিতে হয় বলে পানির সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে একটু সমস্যা হয়। জিকের সেচের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে পাম্প বন্ধের খবরে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়া জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় কৃষকদের হাতের নাগালে পানি প্রয়োজন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁধবাজার এলাকার কৃষক বসির আলী ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, দুই বিঘা জমিতে বিলম্বে ধান রোপণ হওয়ায় পানি প্রয়োজন তার। জিকের পানি না পেয়ে তাকে স্যালো মেশিনের পানি ক্রয় করতে হলে তার লোকসানের শেষ থাকবে না। তবে জিকের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হচ্ছে ভারতের পানি প্রত্যাহার। তিনি মনে করেন শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

 

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ পিএম says : 0
    The government have destroyed our mother land, if our mother land rule by Qur'an then India never dare to harm us from any corner.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিকে প্রকল্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ