Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে করোনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:১০ এএম

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক কারণে কাজে ফিরতে পারেননি। অনেকে কাজে ফিরলেও ঘুরাতে পারেনি ভাগ্যের চাকা। জীবন ধারনের তাগিদে অনেকে পেশা বদল করেছেন। এর মধ্যে করোনা মহামারি তাদের জীবনে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ পরিবারেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একজন। ফলে করোনার প্রভাবে হ্রাস পেয়েছে উপার্জন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ-এর এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৮ম বার্ষিকীতে ‘কোভিভ-১৯: চ্যালেঞ্জ ফর দ্য রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি সার্ভাইভর্স’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এ জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত এক হাজার চারশ জন শ্রমিকের ডাটাবেজ থেকে ২০০ জনকে নমুনা হিসেবে নিয়ে এ জরিপ চালায় সংস্থাটি।
জরিপ ফলাফলে বলা হয়, প্রাণে বেঁচে গেলেও রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় আহত অনেক শ্রমিকই আগের চেয়েও দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। এখনও ১৪ শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্য অবনতির দিকে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্য মোটামুটি স্থিতিশীল এবং ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে। ১৪ শতাংশ শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই মাথাব্যথা, হাত ও পায়ে ব্যথা, কোমর ব্যথা এমন বড় সমস্যা নিয়ে জীবন যাপন করছেন।
অন্যদিকে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে দেখা গেছে, ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এখনও মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন, যা গত বছরে ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে গত বছরের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি শ্রমিকের। তবে বর্তমানে ৬২ শতাংশ শ্রমিকের মানসিক স্বাস্থ্য মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। এ বছর ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে ভালো অবস্থানে আছেন, যা গত বছর ছিল ২১ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি শ্রমিক মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে উন্নতি লাভ করতে পেরেছেন। শ্রমিকদের আয়ের চিত্রে দেখা গেছে, এসব কাজ করে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক ৫ হাজার ৩০০ টাকার নিচে আয় করে। ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক আয় করে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ টাকা। ২৯.৫ শতাংশ লোকের আয় ১০ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে। উদ্বেগজনক হলেও সত্য ৯ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের নেই কোন আয়। অথচ এসব পরিবারে খাদ্য, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, বাচ্চাদের পড়াশুনা ইত্যাদি জরুরি খাতে ১০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়।
অন্যদিকে ৬৭ শতাংশ মানুষ কারখানাগুলোতে সঠিক নিয়মনীতি ও কর্মঘণ্টা বজায় রাখার কথা স্বীকার করলেও ৩৩ শতাংশ বলছেন, কর্মক্ষেত্রে ঝুকি নিয়েই কাজ করেন তারা। কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানা হচ্ছে না বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা।
ভার্চ্যুয়াল সংলাপের উপস্থিত প্রধান অতিথি ও সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, দেশে শ্রম আইনের বাস্তব প্রয়োগ হলে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা আদায় করা সম্ভব। তাছাড়া ক্ষতিপূরণ আইন স্বচ্ছভাবে তৈরি করা প্রয়োজন। কারখানায় সুন্দর কর্ম পরিবেশ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরি করার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন, মালিকপক্ষ এবং সরকার পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। পোশাক শ্রমিকদের জন্য সরকার থেকে করোনাকীল প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, সেটি শ্রমিকদের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে কিনা তা মালিকদের পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
গবেষণার জরিপ সম্পর্কে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ৮ বছরেও এত বিশাল সংখ্যক শ্রমিকদের এই অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ এ দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের অক্সিজেন বলা হয় শ্রমিকদের। ঔপনিবেশিক মন মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি পুরণ করতে হবে।
ডায়লগে উপস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিয়াইনেন বলেন, শ্রম ইস্যুতে নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থায় উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। আর এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এর সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে এবং এটি নিশ্চিতকরণে সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে হবে। করোনাকালীন সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার, শিল্পকারখানা ও শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির আহবান জানান তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রানা প্লাজা দূর্ঘটনার আট বছরেও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের জীবনে তেমন কোন ইতিবাচিক পরিবর্তন আসেনি। কর্মক্ষেত্রেও তাদের নিশ্চয়তা দেয়া যায়নি। তাদের মধ্যে যারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত দেখা যায়। তাই তিনি তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে থানা পর্যায়ে রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা এবং আহতদের স্বাস্থ্যবীমা প্রণয়ের আহবান জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ