Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরবানির হাটে দর্শক আছে ক্রেতা নেই গরু বেশি দামও বেশি

প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাজধানীর কোরবানির হাটগুলো পশু দিয়ে ভরে গেছে। হাটের নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে পাড়া-মহল্লার রাস্তায় ঢুকে পড়েছে পশুর হাট। দিনে-রাতে ট্রাকভর্তি পশু আসছে। মহাসড়কগুলোতে আরও শত শত পশুবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার হাটগুলোতে গরুর আমদানি বেশি। সে তুলনায় দামও বেশি। এ কারণে গতকাল পর্যন্ত খুব একটা বেচাকেনা হয়নি। পাইকাররা জানান, তারা চাঁদরাতের অপেক্ষায় আছেন। বেশ কয়েকজন ইজারাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় বেশি গরু এসেছে এবার। পাইকারদের ধারণা, ভারতীয় গরু না আসায় এবার হাটে গরুর সঙ্কট হবে। শেষ মুহূর্তে মানুষ টাকা দিয়েও গরু নাও পেতে পারে। সে ধারণা থেকেই তারা অধিক লাভের আশায় দাম বেশি চাচ্ছে।
ইজারাদাররা জানান, আজ রোববার থেকে দাম অনেকটাই কমে যাবে। অন্যদিকে গরুবাহী ট্রাক যাতে রাজধানীর হাটে আর আসতে না পারে সেজন্য তৎপর রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। তারাই কৌশলে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে পশুবাহী ট্রাকগুলো আটকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে ২৩টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে এবার। এর মধ্যে গাবতলী হাট ছাড়া বাকি ২২টি অস্থায়ী হাট। ইতোমধ্যে সবগুলো হাট কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। কোনো কোনো হাট নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে পার্শ¦বর্তী পাড়া-মহল্লায় ঢুকে পড়েছে। অলিগলি দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে পশুর হাট। ইজারাদাররা জানান, পর্যাপ্ত গরু এসেছে এবারের হাটে। বেশি সংখ্যক গরু আসায় তারা হাটের সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তার দুই পাশে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে যানবাহন ও মানুষ চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। গতকাল শনিবার দনিয়া, যাত্রাবাড়ী ও কমলাপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে পর্যাপ্ত গরু এলেও বিক্রি নেই। মানুষ আসছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যাচ্ছেন। দনিয়া কলেজ মাঠের হাটে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, তারা হাট ঘুরে গরু দেখছেন। বিক্রেতারা দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন বলে তারা দাম না বলেই ফিরে যাচ্ছেন। আবুল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, পাইকারদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা কালকের আগে গরু ছাড়বে না। যে হারে দাম হাঁকছে তাতে তারা বেশি লাভের আশা করছে। বিপুল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এতদিন ভেবেছিলাম, ভারতীয় গরু আসেনি বলে হাটে গরুর সঙ্কট হবে। কিন্তু যত গরু এসেছে তাতে সঙ্কট তো দূরে থাক শেষ পর্যন্ত এগুলো নিয়ে ফিরে যেতে হবে পাইকারদের। আলাপকালে ফরিদপুরের বেপারী মহব্বত আলী বলেন, হাটে তিনি ২৪টি গরু এনেছেন। দেশি গরু বলে এগুলোর দাম বেশি। দাম বেশি চাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে ওই বেপারী বলেন, এখন তো দাম একটু বাড়তি থাকবেই। কাস্টমার বুঝে তারপর দাম কমবে। তিনি বলেন, আজ রোববার রাত থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হলে দাম একটু কমে যাবে। এ ব্যাপারে হাটের ইজারাদার আবুল কালাম বলেন, দনিয়া হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে। আরও গরু আসছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে প্রচুর গরু এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও গরু আসছে। রাস্তায় গরুবাহী ট্রাক যানজটে আটকা পড়েছে। সেগুলো আজকালের মধ্যে হাটে এসে পৌঁছাবে। চাহিদার বিপরীতে হাটে গরুর কোনো সংকট হবে না জানিয়ে ইজারাদার বলেন, প্রথম দিকে বেপারীরা দাম একটু বেশিই চায়। পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হলে আজকের মধ্যেই দাম কমে যাবে।
ইজারাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর হাটগুলোতে খুবই কম গরু বিক্রি হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধোলাইখালে ৫টি, গাবতলীতে ১১টি, কমলাপুরে ৭টি, রহমতগঞ্জে ৫টি ও বাড্ডায় ৬টি গরু বিক্রি হয়েছে। ধোলাইখাল পশুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি আসলাম বলেন, তুলনামূলকভাবে অনেক কম পশু বিক্রি হচ্ছে। হাট এখনও জমে ওঠেনি। রোদের কারণে দুপুরেও ক্রেতারা হাটে কম আসেন। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন তারা। আগামী দুদিনে অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। কুষ্টিয়া থেকে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনটি গরু নিয়ে ধোলাইখাল বাজারে এসেছেন নাসির। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করেননি তিনি। দরদাম হচ্ছে, কিন্তু হিসাবে মিলছে না বলে এখনই গরু ছাড়ছেন না তিনি। চাঁদরাতে দামটা আর একটু বাড়তে পারেÑএ আশায় ওই রাতের অপেক্ষায় রয়েছেন নাসির। দুই ভাই ও এক প্রতিবেশীসহ চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৫টি গরু নিয়ে কমলাপুর পশুর হাটে এসেছেন বেপারী মিলন। ২ থেকে তিন লাখ টাকা দামের চারটি, ১ থেকে দেড় লাখ টাকা দামের ৫টি এবং ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা দামের ৬টি গরু এনেছেন তিনি। শুক্রবার সকালে কমলাপুর পশুর হাটে আসেন তারা। এখনও একটি গরুও বিক্রি করেননি মিলন। তিনি বলেন, বিক্রি নিয়ে তাড়া নেই। তবে দরদাম হচ্ছে। আজকালের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যাবে, দামটাও বেশি পাবেনÑএমনটাই আশা করছেন তিনি। রাতে থাকা এবং খাওয়ায় কষ্ট হলেও চোখে-মুখে আনন্দ রয়েছে ময়মনসিংহের রহমানের। দুই ভাই ঢাকায় এসেছেন গরু নিয়ে। ৫টি গরু তাদের। দু’টি গরুর প্রতিটির দাম আড়াই লাখ টাকা করে। আর বাকি তিনটি এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে বিক্রি হতে পারে- এমনটাই ভাবছেন তিনি। এ বছর এখনও ভারতীয় গরু হাটে না ওঠায় গরুর বেপারীরা খুশি। ময়মনসিংহের এই বেপারী বলেন, এ বছর ভারতীয় গরু না আসায় দেশি গরুর সঠিক দাম পাবেন তারা। তবে ইজারাদাররা জানিয়েছেন, ভারতীয় গরু না এলেও গরুর কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না। বরং হাটগুলোতে যতো গরু উঠেছে সেগুলো বিক্রি করে ঘরে ফিরতে গেলে বেপারীদেরকে দাম কমাতে হবে। আলাপকালে একজন ইজারাদার বলেন, এই ভারত ইস্যুকে পুঁজি করেই বেপারীরা গরুর দাম বেশি হাঁকছে। তাদের ধারণা শেষ মুহূর্তে একটা সংকট সৃষ্টি হবে এবং তাতে গরুর দাম আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হবে না তার প্রমাণ হাটে গরুর কোনো কমতি নেই। ওই ইজারাদার উদাহরণ টেনে বলেন, দু’দিন আগে যে গরুর দাম ৬০ হাজার টাকা হাঁকা হয়েছিল, আজ (শনিবার) সেই গরুর দাম ৪৫ হাজারে নেমে এসেছে। তারপরেও মানুষ বিশ্বাস পায়নি বলেই কিন্তু গরুটি কেনেনি। ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার কথা উল্লেখ করে ওই ইজারাদার বলেন, শেষ মুহূর্তে চিত্রটা উল্টাও হতে পারে। অর্থাৎ একেবারে কম দামে বিক্রি হতে পারে কোরবানির গরু। কারণ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হলে বিক্রেতারা কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য। গতবারেও এমন অবস্থা হয়েছিল রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাটে।
গরু আসা ঠেকাতে সড়ক-মহাসড়কে যানজট!
সাধারণত কোরবানির ঈদের দু-এক দিন আগে মহাসড়কে যানজটের কবলে পড়তেন ঘরমুখো মানুষ। কিন্তু এবার দেশের প্রায় সব সড়ক-মহাসড়ক পাঁচ-ছয় দিন আগে থেকে স্থবির হয়ে আছে যানজটের কারণে। আর তাতে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। একই সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে আটকা পড়েছে গরুবাহী শত শত ট্রাক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে যাতে বেশি গরু উঠতে না পারে সেজন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সড়ক-মহাসড়কে কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রকৃত গরু বেপারীরা বেশ আগেই হাটে গরু নিয়ে এসেছেন। বেশি দাম পাওয়ার জন্য মৌসুমি বেপারীদের ঠেকানোর চেষ্টা চলছে এখন। তবে প্রশাসন বলছে, মূলত সড়কের পাশে গরুর হাট বসায় বিভিন্ন স্থানে যানজট হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুটি সেতুতে গাড়ি উঠতে দেরি হওয়ায় এবং অন্যান্য সড়কে গাড়ির বাড়তি চাপই যানজটের প্রধান কারণ। প্রকৃত বেপারীর দাবিদার কয়েকজনের ভাষ্য মতে, আসল বেপারীরা গরু নিয়ে আরও ৮-১০ দিন আগে হাটে হাটে চলে এসেছেন। এখন যারা বেশি মুনাফার লোভে গরু নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে দৌড়াদৌড়ি করছেন, তারা হলেন মৌসুমি বেপারী। এদের কারণে প্রকৃত বেপারীরা গরুর দাম পান না। তাই আসল বেপারীদের সিন্ডিকেট ‘ব্যবস্থা’ করে ফেলেছে। তারা আশা করছেন, মৌসুমি বেপারীরা শত শত ট্রাক গরু নিয়ে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কেই বসে থাকবে। হাটে আসার সুযোগ পাবে না। এটা কীভাবে সম্ভবÑজানতে চাইলে ফটিকছড়ির নাজিরহাটের গরু বেপারী আকবর হোসেন বলেন, বোঝেন না ভাই, সিন্ডিকেট! সিন্ডিকেট ছাড়া কিছুই হয় না। তিনি বলেন, সারা দেশে গরু-ছাগল বেপারীদের সিন্ডিকেট আছে। তাদের স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো কৌশল নিতে পারে তারা। এজন্য প্রশাসনের সঙ্গেও লিয়াজোঁ করেছে সিন্ডিকেটের লোকজন।



 

Show all comments
  • মুন্না ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ২:০৪ এএম says : 0
    কেনা শুরু হবে আজ.......
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরবানির হাটে দর্শক আছে ক্রেতা নেই গরু বেশি দামও বেশি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ