পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সংক্ষুব্ধরা প্রতিকার চেয়ে রিট করেন হাইকোর্টে। রিটে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারকে প্রতিপক্ষ করা হয়। হাইকোর্ট রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করে। রিটের বিষয়বস্তুর বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানার জন্য। রুলের জবাব দেয়ার জন্য বিবাদীদের একটি সময়সীমা বেঁধে দেন আদালত। কিন্তু এই সময়সীমার মধ্যে বিবাদীদের বক্তব্য আসে না। রুলের জবাবও দেন না। এর ফলে হাজার হাজার রিটের নথি উচ্চ আদালতে পড়ে থাকে অনিষ্পন্ন অবস্থায়। মাসের পর মাস গেলেও রিটের শুনানি হয় না। বছরের পর বছর গেলেও প্রতিকার পান না রিটকারী। এক সময় হয়তো ভুলেই যান রিটের কথা।
এছাড়া উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে অনেক রায় প্রকাশিত হলেও সেটি কার্যকর হয় না। সে ক্ষেত্রে রায় কার্যকর করতে বিবাদীদের প্রতি ‘আদালত অবমাননা রুল’ও (কনটেম্পট অব কোর্ট) জারি করতে হয়। এ ধরনের রুলের জবাব প্রদান কিংবা রায় বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। অথচ সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতের নির্দেশ দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রতিপালনে বাধ্য। কিন্তু সেই ‘বাধ্যতামূলক’ বিষয়টি প্রতিপালনে বাধ্য করতে আদালতকে জারি করতে হচ্ছে আদালত অবমাননা রুল। এ বাস্তব চিত্র বেরিয়ে এসেছে খোদ প্রধান বিচারপতির বক্তব্যেই। গত ১০ এপ্রিল একটি মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমাদের রায় কার্যকর হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ পালনে যেখানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে, সেখানে কেন আমাদের আবার তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করতে হবে? রাষ্ট্রের সবার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা। আমরা কন্টেম্পট করে করে হয়রান। কনটেম্পট করেও যথাযথভাবে রায় কার্যকর হচ্ছে না। এটা দুঃখের বিষয়।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অন্তত ৪০ লাখ (৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭২৮টি)। এর মধ্যে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮টি মামলা। এর বড় একটি অংশ হচ্ছে রিট। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের যেকোনো নাগরিক রিট ফাইল করতে পারেন। সাধারণত: পাঁচটি কারণে রিটের উৎপত্তি। বন্দি প্রদর্শন রিট (রিট অব হেবিয়াস করপাস), পরমাদেশ বা হুকুমজারি রিট (রিট অব ম্যান্ডামাস), প্রতিষেধক বা নিষেধাজ্ঞামূলক রিট (রিট অব প্রোহিবিটেশন), উৎপ্রেশন রিট (রিট অব সারট্রিওরারী এবং কারণ দর্শাও রিট (রিট অব কো-ওয়ারেন্টো)। সকল প্রকার রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত বিবাদীপক্ষের বক্তব্য শোনার জন্য রুল জারি করেন। বিবাদীগণ রুলের জবাব দাখিল করলে সেটির ওপর চ‚ড়ান্ত শুনানি হয়। রিটকারী এবং বিবাদীপক্ষের আবেদন-যুক্তি-তর্ক শোনার পর হাইকোর্ট আদেশ দেন। রিট মামলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জারি করা হয় রুল। বিবাদী পক্ষের প্রতি জারিকৃত রুলের জবাব না এলে আদালত মামলার শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না। ফলে রিটের প্রেক্ষিতে রুল জারি হয়েছে অথচ জবাব না আসায় শুনানি হচ্ছে না- এমন ‘বিচারাধীন’ মামলা হাইকোর্টে হাজার হাজার। আবার রিটের আদেশ হয়েছে কিন্তু বিবাদীপক্ষ সেই আদেশ কার্যকর করছে না। এ প্রেক্ষিতে জারি হচ্ছে ‘আদালত অবমাননা’ রুল। এমন রুলেরও আটকে আছে বহু ‘নিষ্পত্তি’। রিট-জটের মধ্যেই নিত্যদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন রিট।
একটি বেসরকারি হিসেবে দেখা যায়, চলমান করোনা মহামারিকালেও দায়ের হয়েছে বহু রিট। চলতিবছর ৩ জানুয়ারী থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ১১ সপ্তাহে নতুন রিট দায়ের হয়েছে ৭ হাজার ৪১৬টি। এসব রিটের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত স্বার্থে রুজুকৃত। কিছু আছে জনস্বার্থ কিংবা ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট’ থেকে দায়েরকৃত। বিপুল সংখ্যক রিট দায়ের হলেও এ সময়ের মধ্যে কতগুলো রিট নিষ্পত্তি হয়েছে বেসরকারি হিসেবে সেটি জানানো হয়নি। তবে রিট দায়ের এবং নিষ্পত্তির মধ্যে রয়েছে সংখ্যাগত আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, যথাসময়ে রুলের জবাব না আসায় কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে রিট নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না। রিটের জবাব দেয়ার প্রশ্নে অধিকাংশ বিবাদীপক্ষেরই রয়েছে অনিহা। উচ্চ আদালতের আদেশ-নির্দেশ প্রতিপালনের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার বৈরাগ্য লক্ষ্য করা যায়।
কেস স্টাডি (এক) : গত ১৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস এবং ব্যারিস্টার নওশীন নাওয়াল রিট আবেদনটি করেন। থানার পরিবর্তে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে এজাহার দায়ের কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইবছর ১৩ নভেম্বর অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস ও ব্যারিস্টার নওশীন নাওয়াল রিটটি ফাইল করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের তৎকালিন ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
রিটে বলা হয়, দুদক নিজেই মামলা করার ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ সংশোধন করে গত ২০ জুন গেজেট জারি করে। সংশোধিত বিধিমালার ওই বিধি সংবিধানের ৩১, ৬৫ (১) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারার পরিপন্থ’ী। আর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারা অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তির অভিযোগ থানা রেকর্ড করতে বাধ্য। কিন্তু দুদকের ওই বিধিমালার কারণে এখন আর থানা দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ বা সরাসরি মামলা রেকর্ড করতে পারছে না।
দুই বছর হতে চললেও রিটের নিষ্পত্তি হয়নি। রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও দুদক সচিবকে বিবাদী করা হয়। রুলে বিবাদীদেরকে পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। দুই বছর হতে চললেও রুলের জবাব দাখিল করেননি বিবাদীগণ। এখন অবধি রিটের নিষ্পত্তিও হয়নি। রিটের প্রতিকার মেলেনি। হাইকোর্ট থেকে কোনো স্থগিতাদেশ না থাকায় এখনও থানাগুলো দুর্নীতির কোনো মামলা গ্রহণ করছে না। ওই রিটের শুনানিতে রিটকারীদের পক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম। দুদকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। এ বিষয়ে দুদকের পরিচালক পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, রুলের জবাব দানের লক্ষ্যে কমিশন থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
কেস স্টাডি (দুই) : পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)র নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে কি না জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি রিট করেন। একইবছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের তৎকালিন ডিভিশন বেঞ্চে রিটের প্রাথমিক শুনানি হয়। শুনানি শেষে শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্র অনুমোদনের আগে কেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিষেজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে না- জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
শিক্ষা সচিব, ইউজিসি চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদেরকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পিএচইডি গবেষণা অভিন্দর্ভের ৯৮ শতাংশ নকল বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এক বছরের বেশি সময় হলেও ওই রিটে এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
কেস স্টাডি (তিন) : চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতি,অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না- এই মর্মে চলতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। রিটের বিবাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও দুদক সচিব।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইকরাম উদ্দিন খান চৌধুরী। দুদকের পক্ষে প্রাথমিক শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট নওশের আলী মোল্লা। রুল জারির পর শুনানি এক মাসের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন আদালত। তবে দেড় মাস অতিবাহিত হলেও রুলের জবাব আসেনি। শুনানিও হয়নি। তবে অ্যাডভোকেট নওশের আলী মোল্লা জানিয়েছেন, আদালতের মৌখিক আদেশ জানিয়ে ইতিমধ্যে একটি চিঠি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনও জবাব আসেনি।
এদিকে দুদক সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা বিধি অনুযায়ী কমিশনের সামনে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়নি।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, রিটের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শুনানি শেষে যে রুল জারি করা হয় সেটি হচ্ছে বিবাদীপক্ষের প্রতি আদালতের কারণ দর্শানো নোটিশ। বিবাদীপক্ষকে বলা হয়, রিটের বিষয়ে তার যদি কোনো বক্তব্য থাকে সেটি যেন ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানানো হয়। যদি বিবাদীপক্ষ রুলের কোনো জবাব নাও দেয় তাতে আদালতের কোনো অসুবিধা নেই। বিবাদীপক্ষের কোনো বক্তব্য নেই-মর্মে বিবেচনা করে আদালত রিটের একতরফা শুনানি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ক্ষতি যেটি হতে পারে সেটি হচ্ছে বিবাদীর। বিবাদী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিবাদীর কোনো বক্তব্য থাকে না। রুলের জবাব না দিলে হয়তো রায়টি বিবাদীর বিপক্ষে চলে যাবে।
অনেক ক্ষেত্রে বিবাদী রুলের জবাব দেয়ার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। সেটিই হচ্ছে মামলা নিষ্পত্তি প্রশ্নে দীর্ঘসূত্রিতার প্রধান কারণ। তবে বাদীপক্ষ চাইলে ৪ সপ্তাহ পর রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানির উদ্যোগ নিতে পারেন। রুলের জবাব পাওয়া আদালতের জন্য জরুরি নয়। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। এটি আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় কার্যকর প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি হয়তো এমন মন্তব্য করেছেন। কারণ রায় কার্যকরে বাধ্য করতে হলে আদালত অবমাননা রুল জারি করতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।