পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাহ বেগম কবরী, কবরী নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ঢাকার বাংলা সিনেমার (ঢালিউড) কিংবদন্তি এই নায়িকা অভিনীত একটি সিনেমার নাম ‘স্মৃতিটুকু থাক’। সত্যিই তিনি বাংলা সিনেমা প্রেমিদের কাছে স্মৃতি হয়ে গেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিংবদন্তি অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাবেক সংসদ সদস্য কবরী পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। গতকালই তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘গার্ড অব অনার’ শেষে বনানীর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, মুক্তিযোদ্ধা ও কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কবরী ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যু দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলা চলচ্চিত্রের বিকাশে তার অবদান মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এ ছাড়াও বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতির সংগঠন ও ব্যাক্তিত্ব তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরীর মৃত্যুর চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে। তার সহকর্মীরা নানাভাবে তাকে স্মরণ করছেন।
ঢাকাই সিনেমায় ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী চিত্রনায়িকা হয়েছিলেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ সিনেমার মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু। অতপর সিনেমা জগতে তার বর্ণিল এক অধ্যায়ের শুরু।
কবরীর ছেলে শাকের চিশতী জানান, ৭১ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুসেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ আসার পর থেকে কবরী হাসপাতালে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে কবরী গত ষাটের দশকে সেলুলয়েডের পর্দায় আবিভর্‚ত হয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে হিসেবে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে ৫০ বছরের অভিনয় জীবনে দুই শতাধিক সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই।
‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো’ এই প্রবাদকে স্বার্থক করে তুলেছেন কবরী তার কর্মের মাধ্যমে। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেয়া কবরীর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিষেকের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন কবরী। নায়িকা কবরীর সিনেমা মানেই হলে উপচে পড়া দর্শকের ভিড়।
সুতরাংয়ের সেটে প্রথম শটেই নায়ক পরিচালক সুভাষ দত্তের চড় খেয়ে কেঁদে বুক ভাসানো সেই মেয়েটি ঢাকাই ছবির ইতিহাসে আকাশচুম্বী জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তার অভিনীত সিনেমা ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘অনির্বাণ’, ‘দীপ নেভে নাই’সহ ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছেন। সিনেমায় পর্দা মাতানো কবরী বলেছিলেন, ‘জীবন হচ্ছে একটি চলচ্চিত্র। জীবন কিন্তু স্থিরচিত্র নয়।’ সেই জীবন-চলচ্চিত্রের বাঁকে বাঁকে নানা ঘটনার কথা কবরী নিজেই গ্রন্থিত করে আত্মজৈবনিক বই লিখেছেন ‘স্মৃটিুকু থাক’ শিরোনামে তার বইটি ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ করা হয়। বইটির পরতে পরতে তিনি উত্তাল একাত্তরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে ভারতের বড় বড় শহরে জনমত সংগঠন, সেলুলয়েডের বাইরে রাজনীতি জীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি, ঢাকাই সিনেমার সদর-অন্দরের পাশাপাশি এ শিল্পের উপর যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির অভিঘাতের কথাও সেখানে তুলে ধরেছেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কবরী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের বধূ কবরীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ায় ভোটের মাঠে সেই নারায়ণগঞ্জেই নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। সব জয় করেই নবম সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হন তিনি।
এর আগে ২০০৬ সালে তিনি সিনেমা পরিচালনায় নামেন। ওই বছর কবরীর পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’ মুক্তি পায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দেন। সে কাজ আর তার শেষ হলো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।