পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে মিনা যাত্রার মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছেন বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে মক্কায় সমবেত প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী। তাওহীদপন্থী এসব মুসলমান মক্কায় তাদের আবাস থেকে হজের জন্য ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে ৫ দিনের হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৪শ’ বছরেরও আগে যেভাবে হজ পালন করেছেন ইসলামের মূল ৫টি স্তম্ভের অন্যতম এই হজ সেভাবেই প্রতি বছর পালন করে চলেছেন মুসলিমগণ।
৮ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর মক্কা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা সুন্নাত হলেও যানজট এড়াতে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীকে মুয়াল্লেমরা সউদী সরকারের অনুমোদনক্রমে আগের রাত থেকেই হজযাত্রীদের মিনায় স্থানান্তর শুরু করে থাকে। অনেকে অবশ্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালনের জন্য গতরাতে না গিয়ে আজ সূর্যোদয়ের পর পায়ে হেঁটে মিনায় রওনা করবেন। যারা গতরাতেই মিনায় পৌঁছেছেন তারা আজ ফজরসহ সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন।
সুন্নতি তরিকায় ৯ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার কথা থাকলেও যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে আজ সন্ধ্যার পর থেকেই হজযাত্রীদের ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী আরাফাতের ময়দানে স্থানান্তরের কাজ শুরু করবেন দক্ষিণ এশীয় মুতাওয়িফ সংস্থার নিয়োজিত মুয়াল্লেমগণ। কাল পবিত্র হজ। আরাফাতের ময়দানকেই মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ফরজ। আরাফাত ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামেরা থেকে দুপুরে হজের খুৎবা দেয়া হবে। এখানে খুৎবার পর এক আযানে দুই একামাতে যোহর ও আসর কসর (দুই রাকআত করে) আদায় করবেন হজযাত্রীরা। মুসলিম জাতির আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহাস সালামের মহামিলনের স্মৃতি বিজড়িত আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে হাজীরা আল্লাহর যিক্র ও তসবীহ তাহলিল আর দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর কাছে জীবনের সব গুনাহ-খাতার জন্য ক্ষমা চাইবেন। এছাড়াও দেশ, জাতি ও মুসলিম জাহানের শান্তি ও অগ্রগতির জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করবেন। আরাফাতে অবস্থানের মাধ্যমে হজ কবুল হলেই হজ পালনকারী মাসুম অর্থাৎ গুণাহমুক্ত হয়ে যাবেন।
সূর্যাস্তের পর হাজীরা ৮ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। মুজদালিফায় এসে একই আযানে মাগরিব এবং ইশা এক সাথে আদায় করে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন এবং মুজাদালিফা থেকে জামারায় নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। এরপর পরদিন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পূরণের লক্ষ্যে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে রাত যাপন করবেন।
মুজদালিফায় রাত্রি যাপনের পর ১০ জিলহজ সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওয়ানা হবেন হাজীরা। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাবার পূর্বে জামারাতুল আকাবায় (বড় জামরায়) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন।
জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর হাজীরা পশু কুরবানী করবেন। তবে সউদী হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আযাহি সংস্থার মাধ্যমে কুরবানী করতে হয়। এ সংস্থা দীর্ঘদিন থেকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে হাজীদের কুরবানীর ব্যবস্থা করে আসছে। হাজীরা নির্ধারিত বুথে কুরবানির টাকা জমা দিয়ে টিকেট সংগ্রহের মাধ্যমে এই কুরবানি করেন। বুথ থেকে টিকেট সংগ্রহের সময় দেয়া কুরবানির সময় পার হবার পর হাজীগণ মাথা মু-ন করে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন। একে তাহাল্লুলে আসগর বলা হয়। তাহাল্লুলে আসগরের সময় স্ত্রীসঙ্গ ব্যাতীত সবকিছু হালাল হয় আর তাহাল্লুলে আকবর-এর পর সবকিছু হালাল হয়।
তাহাল্লুলে আসগরের পর হাজীগণ পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে তাওয়াফে ইফাযা (ফরয তাওয়াফ) সম্পন্ন করবেন এবং সায়ী করবেন। এর মাধ্যমে তাহাল্লুলে আকবর হয়ে যাবে। এরপর মিনায় ফিরে এসে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করে মক্কার বাসস্থানে ফিরে আসবেন। এরপর দেশে ফিরে আসার পূর্বক্ষণে কাবা শরীফে গিয়ে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।
গতরাতে মিনায় যাবার পর জামারাতের কাছে মোয়াল্লেম নম্বর ১১, ১২ ও ২২-এর অধীনে থাকবেন বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা হাজিরা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে আসা হাজিরা থাকবেন ৩, ৫, ১৪, ৫২, ৫৩, ৫৬, ৫৭, ৬৩, ৬৫, ৬৬, ৭০, ৭২, ৭৪, ৭৭, ৭৮, ৮০, ৮১, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৭, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৮, ৯৯, ১০০, ১০১, ১০২, ১০৪, ১০৭, ১০৮, ১১০, ১১১, ১১৪, ১১৫ মোয়াল্লেম নম্বরের অধীনে। মিনায় হাজিদের সহায়তার জন্য ১৬/৫৬ নম্বর তাঁবুতে পাঁচ দিন বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের কার্যক্রম চালানো হবে।
এদিকে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এ বছর প্রায় হাজার খানেক নতুন পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে পবিত্র হারাম শরীফ এবং জামারাতে। এসব ক্যামেরা অন্যান্য বছরের চেয়ে গভীর ভাবে বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করবে। এ বছর প্রথম বারের মতো হজযাত্রীদের বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রনিক ব্রেসলেট প্রদান করা হয়েছে যা তাদের অবস্থান ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। পানি নিরোধক এবং জিপিএস-এর সাথে সংযুক্ত এই ব্রেসলেট হজযাত্রীদের সালাতের সময় এবং বিভিন্ন পালনাদি সম্পর্কে তাদের বিভিন্ন ভাষায় নির্দেশনা প্রদান করবে। গত বছর মিনায় এক দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৭৫০ জন হজযাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। তবে বিভিন্ন বার্তা সংস্থার মতে মিনায় নিহত হজযাত্রীদের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। নিহতের মধ্যে ইরানি হজযাত্রীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর এবার ইরানের কোন হজযাত্রী হজ পালনের সুযোগ পাননি।
বিমানের সিটি চেকিং : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কয়েক বছর ধরে হাজীদের সুবিধার জন্য সিটি চেকিং শুরু করেছে। অর্থাৎ ফ্লাইট ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে মক্কায় এবং ফ্লাইট ছাড়ার ৩৬ ঘণ্টা আগে মদিনায় যাত্রীর লাগেজ বিমান গ্রহণ করবে। বিমানবন্দর থেকে বিমানের লাগেজ গ্রহণ করা হবে না। একজন যাত্রী বিনা ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি মালামাল বহন করতে পারবেন। একটি লাগেজের ওজন ৩০ কেজির বেশি হবে না। তাছাড়া, সউদী আরবের নিয়ম অনুযায়ী হাজীদের নিজ নিজ ফ্লাইটের ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা আগে জেদ্দা হজ টার্মিনালে মোয়াল্লেম পৌঁছে দেন। বিমানবন্দরে এই ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বসে থাকায় অনেকের ধৈর্যচ্যুতি হয়। এই তথ্যটি অনেক হজযাত্রীর অজানা। ফিরতি ফ্লাইট শেষে হাজিরা নানা ভোগান্তির অভিযোগ করেন তথ্যটি না জানার কারণে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।