Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চকবাজারে নেই ইফতারির হাঁকডাক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৫ এএম

রমজান মাস এলেই রাজধানীসহ সারাদেশে দেখা যায় ইফতারের জমজমাট বাজার। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার করোনামহামারীর সংক্রমণ রোধে কঠোর লকডাউনের মধ্যে শুরু হয়েছে মাহে রমজান। বেশিরভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। ফুটপাতেও দেখা যায়নি জমজমাট ইফতারের পসরা। রাজধানী ঢাকায় চারশ বছরেরও পুরনো ঐতিহ্য চকবাজারেরও ভাসমান ইফতারির দোকানগুলো বসেনি। করোনা মহামারির কারণে দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধের কারণে এবার চকবাজারে দোকান খুলে ইফতারি বিক্রি করছেন অনেখে। তবে তাতে আগের মতো উৎসব আমেজ বা জৌলুস নেই।
লকডাউনের কারণে গত বছরের মতো এবারও রাজধানীর ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতারসামগ্রী বিক্রি করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করছেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। এ কারণে ঢাকার কোথাও বসেনি ভাসমান ইফতারির দোকান।
প্রতিবছর রোজা শুরুর আগে থেকে চকবাজারের সার্কুলার রোডে বসে ইফতারের দোকান। কিন্তু এবার কোনো দোকানতো বসেইনি, নেই ক্রেতা সমাগমও। কেউ কেউ বসার চেষ্টা করলেও তাদের তুলে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ কারণে চকবাজার শাহী মসজিদ রোড ও চক সার্কুলার রোড এ বছর একেবারে ফাঁকা।
পুলিশ বলছে, সরকারি নির্দেশনার কারণেই রাস্তা বা ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতারসামগ্রী বসতে দেওয়া হচ্ছে না। মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরবাসীর পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
চকবাজারের ইফতারির বিশেষ আকর্ষণীয় খাবর ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। এছাড়াও এই বাজারের বটি কাবাব, সুতা কাবাব, রেশমি কাবাব, জালি কাবাবের সুনাম রয়েছে। এখানে ১৫ থেকে ২০ প্রকারের কাবার বিক্রি হয়। বেচাকেনা হয় রান্না করা আস্ত খাসি ভুনা, আস্ত কোয়েল ভুনা, নানান ধরনের টিকিয়া, শাহী জিলাপি, ফিরনি, লাবাং, বোরহানি, মাঠাসহ নানাধরনের খাবার। কথিত আছে, অনেক আগে এসব খাবারের বেশির ভাগই রান্না হতো মুঘল দরবারের হেঁসেলে।
চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আসলাম জানান, এবার চকবাজারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। প্রথম রোজায় দুপুর ১টা থেকে এই এলাকায় ইফতারের পসরা বসে আসছে বছরের পর বছর। এবার কিছুই নেই। বিকালে কয়েকটি দোকান ইফতার বিক্রি শুরু করলেও তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এছাড়া সেখানে মাইকিং করে দোকান বন্ধ রাখতে আহবান জানানো হয়।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সীমিত আকারে ইফতার বিক্রি করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ধানমন্ডি-৬ নম্বরের ওয়েসিস, ধানমন্ডি ২ নম্বর রোডের স্টার কাবাব এবং সাত মসজিদ রোডের লায়লাতি। ওয়েসিস দোকানের ভিতরেই ইফতার সামগ্রী বিক্রি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রেতারা জানান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে তারা ইফতার বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। তবে বিকাল ৫টার মধ্যে দোকান আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধানমন্ডির স্টার কাবাবের দায়িত্বরত ম্যানেজার নুরুদ্দিন জানান, দুপুর ২টা থেকে সীমিতভাবেই শুধু কয়েকটি ইফতার আইটেম বিক্রি করেছে তারা। এর মধ্যে আছে হালিম, দই বড়া এবং কাবাব। লায়লাতির ব্যবস্থাপক জানান, দোকানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বাইরে থেকে পার্সেল নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ইফতার সামগ্রীও সীমিত।
হোটেল রেস্তোরাঁয় ইফতার বিক্রির কোনও নির্দেশনা দেওয়া নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব এম. রেজাউল করিম সরকার। তিনি বলেন, রমজান মাসে হোটেল রেস্তোরাঁ ইফতার বিক্রি খুব একটা যে লাভজনক, তা নয়। শুধুমাত্র কর্মচারীদের বেতন-বোনাস আর আনুষঙ্গিক খরচ নিশ্চিত করতে আমরা অন্যান্য বার খোলা রাখতাম। এবার তেমন কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কারণ সরকার বলেছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে খোলা রাখতে। কিন্তু এই কাজটি সব জায়গায় সম্ভব না। তাই আমরা অনেকেই বিক্রি বন্ধ রেখেছি। তাছাড়া অভিজাত এলাকাগুলোতে যদি কেউ সামাজিক দ‚রত্ব নিশ্চিত করে এবং শুধু খাবার নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রেখে খুলতে পারে সেটা আমরা পরামর্শ হিসেবে অনেককেই জানিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইফতারির হাঁকডাক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ