পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দৌলতদিয়া ৪ ফেরিঘাটের সবগুলোই চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব ঘাট পূর্ণ মাত্রায় সচল না থাকায় দৌলতদিয়া এবং সাটুরিয়া উভয়প্রান্তে গাড়ির লাইন গতকাল ৬ কিমি ছাড়িয়ে যায়। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী উভয় যানবাহনকে। বৃহস্পতিবার রাতে সচল হওয়া ঘাটগুলো যে কোনো মুহূর্তে নদীভাঙনে ফের বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্য সঙ্কটে ফেরিগুলো পূর্ণ মাত্রায় লোড নিয়ে চলাচল করতে পারছে না। ফলে এ রুটের দুই পাড়ে যানবাহনের লাইন ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া কাওড়াকান্দি থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যানবাহনের তীব্র সংকটে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ ভাড়ায়ও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না যাত্রীরা।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দীর্ঘ যানজট
আরিচা ও দৌলতদিয়া সংবাদদাতা : তীব্র ¯্রােত ও নদীভাঙনের কারণে বন্ধ থাকা দৌলতদিয়ার চারটি ঘাটই পুনঃস্থাপন করে সচল করা হয়েছে। কিন্তু যে হারে নদী ভাঙছে তা কতক্ষণ টিকে থাকে বলা মুশকিল। ঘাট এলাকায় তীব্র ¯্রােত ও নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফলে যে কোনো সময় ঘাটগুলো আবার নদীভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে উভয় ঘাটে যানজটের আরো অবনতি ঘটেছে। শুক্রবার দ্ইু পারে ছোট-বড় মিলে দেড় সহ¯্রাধিক যানবাহন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। উভয় ঘাটে টার্মিনাল উপচিয়ে ফেরির জন্য অপেক্ষমাণ যানবাহনের লাইন মহাসড়কে বিস্তৃতি লাভ করে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উথলী মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাটুরিয়া ঘাট লিংক রোড পুরোটাই ঘাটমুখী যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে। অপরদিকে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘাট থেকে মহাসড়কের গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানবাহনের লাইন হয়। শনিবার থেকে ফেরিতে ট্রাক পারাপার ঈদের আগে ৩ দিন এবং ঈদের পরে ৩ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে শুক্রবার ঘাটে আটকে পড়া শত শত ট্রাক শ্রমিক ফেরি টিকিটের জন্য বিক্ষোভ করে। শুক্রবারও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার,বাস, অন্যান্য ছোট গাড়ি পার করায় পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার প্রায় হয়নি। এতে ঘাটে আটকে পড়া ট্রাক বিকল্প পথে গন্তব্যে রওয়ানা হতে পারছে না যানজটসহ নানাবিধ কারণে। এমতাবস্থায় ট্রাক শ্রমিকদের ঘাটেই ঈদ উদ্যাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয়ার পর থেকে দৌলতদিয়ার এ প্রান্তে পদ্মায় দেখা দেয় প্রবল ¯্রােত। সেইসাথে শুরু হয় নদী ভাঙন। আর ভাঙনের কবলে পড়ে দৌলতদিয়ার সবগুলো ফেরিঘাট।
ক্ষতিগ্রস্ত ঘাটগুলো মেরামত করা হলেও তা খুব বেশি সময় স্থায়ী হচ্ছে না। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জানতে পারে দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাট সচল হয়েছে। এতে একযোগে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস ও কোরবানির গরুবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন নদী পারের আশায় দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে শুরু করে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিস জানায়, সবকটি ঘাট অনেকটা নামমাত্র চালু হয়েছে। গতকাল ২নং ফেরিঘাটটি চালুর পর মাত্র দুইটি ছোট ফেরি সেখানে লোড-আনলোড করা সম্ভব হয়েছে। তীব্র ¯্রােতের কারণে সেখানে কোন ফেরি ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ৩নং ফেরি ঘাট চালু হলেও শুধু দুটি পকেট দিয়ে যানবাহন উঠা-নামা করছে। যে কোন মুহূর্তে এ ঘাটটি আবার নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে। ৪নং ফেরি ঘাটেরও দুটি পকেট দিয়ে যানবাহন উঠা-নামা করতে পারছে। এ পরিস্থিতিতে নৌরুট কতটা স্বাভাবিক তা বলা যায় না।
বিআইডব্লিটিএ’র আরিচা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ দৌলতদিয়ার সবকটি ঘাট চালু রাখতে তাদের কর্মীরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রকৃতির কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেও ঘাট স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। ঘাট ক্রমান্বয়ে ভাঙছে এবং পন্টুন পেছানো হচ্ছে।
এদিকে ঘাট সমস্যা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে নদী পার হতে আসা হাজার হাজার যাত্রীবাহি বাসসহ কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ঘাটে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েছে। এতেকরে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দৌলতদিয়ার দুইটি বিশাল টার্মিনাল পরিপূর্ণ হয়ে ফোরলেন সড়কের বাম পাশে দুই লাইন করে থাকা যানবাহনের সারি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশু বোঝাই ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করায় আটকে থাকা যানবাহনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রীবাহি বাস রয়েছে। এতে সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সেবা গ্রীনলাইন পরিবহনের সুপারভাইজার মো. ইবাদুল ইসলামের সাথে কথা হয় শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ এলাকায়। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস ব্যহত হচ্ছে। এতে অনেক যানবাহনই বিকল্প রুটে চলাচল করছে। গতকাল রাতে বিভিন্ন টেলিভিশনের স্কলে দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিকের খবর পেয়ে ঘাটে এসে এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আপনারা জনগনকে এ ধরনে খবর দিয়ে দুর্ভোগে ফেলবেন না।’
এ সময় অনেক পরিবহনের সুপারভাইজার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রীসহ এখানে এসে সিরিয়ালে আটকা পরেছি। কখন ফেরির নাগাল পাব জানি না। বাসে থাকা মহিলা ও সাধারন যাত্রীদের যে কি ভয়াবহ অবস্থা তা বলে বোঝাতে পারব না। অনেক যাত্রী অবস্থা বুঝে পরিবহন থেকে চলে গেছে। কিন্তু দু-একজন থাকলেও আমাদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।’
দৌলতদিয়া কর্মরত বিআইডব্লিউটিসি’র ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রুটে ১৬টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে গরুবাহি ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। এতে কিছু যাত্রীবাহী বাস ঘাট এলাকায় আটকা পড়ছে।
শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দিতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন
মাদারীপুর জেলা ও শিবচর সংবাদদাতা : শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঢল নেমেছে। লঞ্চ, ফেরি, স্পিডবোটসহ সব নৌযান ও যানবাহনে গতকাল ছিল যাত্রীদে উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছে। শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনের দীর্ঘ লাইনের সাথে কাওড়াকান্দি ঘাটেও গরুবাহী ট্রাকসহ যানবাহনের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। নাব্য সংকটে ফেরি পারাপার বিঘিœত ও ধারণক্ষমতার কম যান নিয়ে ফেরি চলায় সংকট বাড়ছে। কাওড়াকান্দি থেকে লোকাল বাসগুলো দুরপাল্লায় চলাচল করায় যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। স্পীডবোট ও দক্ষিণাঞ্চলগামী সকল যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় যাত্রী দূর্ভোগের সীমা নেই। এদিকে কাওড়াকান্দি ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন না থাকায় যানবাহনগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তবে দুপুরের পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করায় ঘাট পরিস্থিতি কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
সরেজমিনে বিআইডব্লিউটসিসহ একাধিক সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিনাঞ্চলের স্বল্প দুরত্বের এ রুটে লঞ্চ ও স্পীডবোট হয়ে ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নামে। লঞ্চগুলো প্রায় দিনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছে। স্পীডবোটগুলো যাত্রী প্রতি দেড়শ টাকার ভাড়া দুইশ টাকা নিচ্ছে। পদ্মা নদী পার হয়ে কাওড়াকান্দি ঘাটে এসে যাত্রীরা পড়ছেন চরম বিপাকে। কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস মাইক্রোবাসসহ আভ্যন্তরীণ সকল যানবাহন পাল্লা দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীদের দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে বাড়ি পৌঁছাতে। কাওড়াকান্দি থেকে কালনাঘাট এর মাইক্রোবাসগুলো ১৫০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৫০০ টাকা, খুলনায় ৬শ টাকা, বরিশালে ৫শ থেকে ৬শ টাকা। কাওড়াকান্দি থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে যাওয়া সকল যানবাহনই নিচ্ছে অন্তত দ্বিগুণ ভাড়া। এর মধ্যে বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাইক্রোবাস ও লোকাল বাসগুলো। লোকাল বাসগুলো আভ্যন্তরীন রুটে চলাচল বন্ধ করে দুরপাল্লায় চলাচল করায় স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৪৫ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিয়ে ভাঙা যেতে হচ্ছে লোকাল যাত্রীদের। এদিকে একটি নৌচ্যানেলের কয়েকটি পয়েন্টে নাব্যতা সংকটে ওয়ানওয়ে হয়ে পরায় ফেরিগুলো পারাপারেও অতিরিক্ত সময় লাগছে। ফলে ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন, গরুবাহী ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ ৫ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ছিল ঘন্টার পর ঘণ্টা। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন না থাকায় সকাল থেকে যানবাহনগুলো যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানো-নামানোয় ঘাট এলাকায় বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতর সৃষ্টি হয়। তবে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্ঠা চালিয়ে যান। দুপুরের পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হলে সুশৃংখল পরিস্থিতি বিরাজ করে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ বলেন, কাওড়াকান্দি-শিমুলীয়া নৌরুট হয়ে সকাল থেকেই দক্ষিনাঞ্চলের ঘরমূখো যাত্রীদের ঢল নেমেছে। যাত্রীদের নির্বিঘেœ ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ঘাটে অবস্থান করছে। কোনো প্রকার যাত্রী হয়রানি হলে সাথে সাথে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনসারউদ্দিন বলেন, চাপ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভাড়ার বিষয়টি সহনীয়ই রয়েছে। তবে অপর প্রান্ত থেকে শূন্য আসায় কিছুটা বেড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।