Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিলকট রিপোর্ট বিচারের আওতায় নিতে মার্কিন আদালতের কাছে আবেদন

ইরাক যুদ্ধের জন্য বুশ ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এক ইরাকি মহিলা ইরাকযুদ্ধের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় ব্রিটেনের চিলকট রিপোর্টের কিছু অংশ বিচারের আওতায় নেয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছেন।
সুন্দুস সালেহ নামের মহিলা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জর্জ ডব্লিউ. বুশ, ডিক চেনি, ডোনাল্ড রামসফেল্ড, কন্ডোলিজা রাইস ও পল উলফউইজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল যে ইরাক যুদ্ধ এক অবৈধ আগ্রাসনের ফল। যুক্তরাষ্টের ক্যালিফোর্নিয়ার নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে তার নিজের ও অন্যান্য ইরাকিদের পক্ষে এ মামলা দায়ের করা হয়।
আদালত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সালেহর মামলাটি খারিজ করে দেন এ যুক্তিতে যে আসামিরা যখন ইরাক যুদ্ধের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করেন তখন তাদের দায়িত্বের আওতার মধ্যেই তা করেছিলেন। এরপর সুন্দুস সালেহ নাইনথ সার্কিট মার্কিন আপিল আদালতে আপিল করেন।
সালেহ তার আপিলে যুক্তি প্রদর্শন করেন যে বুশ কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে এ কাজ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে হামলা করা উচিত, এর বৈধ নীতিগত কারণ থাক বা না থাক। তারা সাদ্দাম হোসেনের সাথে আল-কায়েদার সম্পৃক্ততার ভুয়া অভিযোগ করেন ও জনগণের কাছে তার বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের হুমকি সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলেন।
সালেহর আইনজীবী ইন্দর কুমার বাখ্যা করেন যে ন্যুরেমবার্গ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের অভিযোগের ক্ষেত্রে দেশীয় দায়মুক্তি অপরাধ স্খালন করে না। জার্মানরা যা কিছু করেছিল আইন মেনেই করেছিল। আমরা ন্যুরেমবার্গ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে এ মামলায় দেশীয় দায়মুক্তি প্রয়োগের আবেদন প্রত্যাখ্যানের জন্য নাইনথ সার্কিটের কাছে আবেদন করছি।
গত ২২ জুলাই সালেহ ইরাক যুদ্ধ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের চিলকট রিপোর্টের অংশ বিশেষ বিচারের আওতায় নেয়ার জন্য নাইনথ সার্কিটের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্রিটিশ প্রিভি কাউন্সিলর ও সাবেক আমলা স্যার জন চিলকটের নেতৃত্বে ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি ৬ বছর পর ২০১৬ সালের ৬ জুলাই এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। সালেহ এ রিপোর্টের ৪টি অনুচ্ছেদ বিচারের আওতায় নেয়ার জন্য আদালতের কাছে পেশ করেন। এগুলো হল : ২৪. প্রেসিডেন্ট বুশ ২০০১ সালে শেষে ইরাকে শাসক পরিবর্তনের নীতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
৬৮. ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রধান স্যার রিচার্ড ডিয়ারলাভ পরামর্শ দেন যে মার্কিন প্রশাসন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এ সংযম প্রদর্শনে কাজ হবে না বলে বছরের শেষদিকে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং সাদ্দাম হোসেনকে অস্ত্র পরিদর্শকদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সাদ্দাম হোসেনকে একটি চরমপত্র দেয়ার কথা বিবেচনা করছে। পাশাপাশি এসব শর্তারোপ করছে যা সাদ্দাম হোসেনের জন্য মানা অসম্ভব।
৭৪. ২৫ মার্চ মিঃ স্ট্রর (ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী) পরামর্শে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে অস্ত্র পরিদর্শকদের পুনরায় ইরাকে প্রবেশ করতে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাদ্দাম হোসেনের প্রতি চরমপত্র দেয়া উচিত। এটা ইরাকে শাসক পরিবর্তনের মার্কিন উদ্দেশ্য গ্রহণ করা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্তরাজ্যের গাঁটছড়া বাঁধার পথ সৃষ্টি করবে। এ থেকে বোঝা যায় যে ইরাকে শাসক পরিবর্তন বেআইনি ছিল।
৮৯. স্যার রিচার্ড ডিয়ারলাভ রিপোর্ট করেছিলেন, তাকে বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেÑ শুধু প্রশ্ন হচ্ছে যে তা কীভাবে এবং কখন। তাকে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র পরিদর্শনের চাপ এত প্রবল করতে চায় যাতে ইরাক মার্কিন নীতির সামনে টিকতে না পারে।
রিপোর্টে বুশ ও ব্লেয়ারের মধ্যে নোট বিনিময়ের কপি যুক্ত করা হয়েছে যাতে তারা ২০০১ সালের অক্টোবরে ইরাকে হামলার করার কথা আলোচনা করেন।
ইরাকে হামলা চালানোর আট মাস আগে ব্লেয়ার বুশকে লিখেছিলেন, যাই ঘটুক না কেন, আমি আপনার সাথে থাকব। ২০০২ সালের জুলাইতে ব্লেয়ার বুশকে লেখেন যে সাদ্দামকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এলাকাকে মুক্ত করবে যদিও তাতে ইরাকিদের মধ্যে আগ্রাসনের শিকার হওয়ার উপলব্ধি সৃষ্টি হবে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০০২ সালের ২০ মার্চ যেদিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইরাকে হামলা করে সেদিন পর্যন্ত সাদ্দাম হোসেন কোনো আশু হুমকি ছিলেন না।
সালেহ ২০১৫ সালে বার্তাসংস্থা ট্রুথআউটকে বলেছিলেন, ইরাক আগ্রাসনের ফলে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এ আগ্রাসন ইরাকের অকাঠামো, ভবন ও ঐতিহ্যই শুধু ধ্বংস করেনি, লাখ লাখ পরিবার ও তাদের স্বপ্নকেও ধ্বংস করেছে। সূত্র হাফিংটন পোস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিলকট রিপোর্ট বিচারের আওতায় নিতে মার্কিন আদালতের কাছে আবেদন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ