Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চোরাই পশুর সিন্ডিকেট

ফয়সাল আমীন : | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

সীমান্ত দিনে প্রতিদিন শত শত পশু নামে সিলেটে। ওপেন সিক্রেট এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাকারবারী একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটে শরিক স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনীতিক প্রভাবশালীরা। সেই চোরাই পশুকে স্থানীয় ভাবে বলা হয় ‘বোঙার’ পশু। বোঙার পশু বিক্রির জন্য রয়েছে নিরাপদ একাধিক হাট। সেই হাটের সাথেও ভাগবাটোয়ারা সর্ম্পক সংশ্লিষ্টদের। সেরকম একটি হাট সিলেট সীমান্তবর্তী এলাকা কানাইঘাটের সড়কের বাজার।

সেই হাটে গত ২ এপ্রিল বিক্রিত ১০টি মহিষ নিয়ে ঘটছে তোলপাড়। গত এ সপ্তাহ ধরে চলছে এ নিয়ে নানা নাটকীয়তা। চোরাইপথে নিয়ে আসা এ ১০টি মহিষ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেঁধেছে স্বার্থগত বিরোধ। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট স্বার্থ হাসিলে থানা পুলিশকে নিয়ে আসছেন সামনে। কিন্তু কৌশলগত এই ছকে মেটানো যায়নি সেই বিরোধ। অবশেষে একটি মামলা রেকর্ড করেছে কানাইঘাট থানা পুলিশ। দৃশ্যমান এ ঘটনার অড়ালে লুকিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। সেই রহস্য ফাঁস হলে, গা-বাঁচাতে পারবে না, চোরাইকারবারী, মুখোশধারী চোরাই সিন্ডিকেট। তবে এ ঘটনা এখন সীমান্তবর্তী কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের সীমান্তের চোরাই পশু কারবারিদের পরিণত হয়েছে গলার কাঁটায়। স্থানীয় জকিগঞ্জের সোনাসার এলাকার আব্দুল মজিদের পুত্র মাছুম আহমদ দাবি করছেন, এ পশু ‘বোঙার’ নয়, এগুলো স্থানীয় কালিগঞ্জ বাজার থেকে গত ২৭ মার্চ ক্রয় করেছেন তিনি। কিন্তু স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মাছুম আহমদ চোরাকারবারী চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। পাশ্ববর্তী দেশে তার শক্ত অবস্থান। সেখানকার পশু কারবারীদের সাথ তার দহরম-মহরম। চোরাইপথে আসা পশুর মূল্যে তার মাধ্যেমে টাকা থেকে রূপি করে পৌঁছে দেন তিনি। অথচ তিনি যে পশুকে নিজের বলে দাবি করছেন, সেগুলোও বোঙার। বোঙার বিষয়টি আড়াল করতেই নিজের মালিকানা প্রমাণে পশু ক্রয়ের রসিদ তৈরি করেছেন তিনি।
স্থানীয় একাধিক পশু কারবারিদের মতে, কানাইঘাটের সড়কের বাজারে বিক্রিত পশু বলতে গেলে ষোল আনাই চোরাইপথের। সেই বাজারের বিক্রিত ১০টি মহিষের মালিকানা কোনভাবেই বৈধ দেখানো সুযোগ নেই। তারা এও বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পশু কারবারিরাও এ বাজারে মহিষ কিনতে আসেন, দরদামে সস্তা বিবেচনায়। সকলের জানাশুনা, এ হাটের পশু চোরাইপথের। অপরদিকে, গত ২রা এপ্রিল সড়কের বাজারে ১০টি মহিষ বিক্রির জন্য তোলেন কানাইঘাটের লোভাছড়া বড়গ্রামের সুলতান আহমদ। কিন্তু তার এই পশু ১৪ লাখ টাকা মুল্যে কানাইঘাটের দর্পন নগর পশ্চিম গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসানের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি।
সুলতান বলেন, তার এ পশু বিক্রির পূর্বে জকিগঞ্জের সোনাসার গ্রামের মনসুর আহমদ ৭ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছিলেন। তবে তার কাছে বিক্রি করেননি তিনি। বেশি দাম পাওয়ায় বিক্রি করে দেন আবুল হাসানের কাছে। এ কারণে মহিষ বিক্রির পর মনসুর, গিয়াসসহ বাজার সিন্ডিকেট মহিষগুলোকে ‘চোরাই’ মহিষ আখ্যায়িত করে, উঠে পড়ে নামেন সুলতানের বিরুদ্ধে। এরই ধারাবাহিকতায় জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজারের রসিদ দেখিয়ে মহিষগুলোকে মাসুমের দাবি করে অভিযোগ করেন কানাইঘাট থানায়। কিন্তু মহিষ বিক্রির রসিদ স্থানীয় সড়কের বাজারে থাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতার সময় দেয় পুলিশ। কিন্তু বাজারের সিন্ডিকেট এতে পাত্তা দেয়নি। তাদের সাজানো ছকে সুলতানকে কবজা করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠে। ১০টি মহিষের ক্রেতা কানাইঘাটের ব্যবসায়ী আবুল হাসান গত ২রা এপ্রিল মহিষগুলো সড়কের বাজার থেকে ক্রয় করেন জানিয়ে বলেন, হুট করে তো পশু হাটে আসে না, তেমনি হুট করে বাজারে বিক্রিও হয়নি। দীর্ঘ সময় পশু দেখা হয়, পছন্দ অপছন্দের বিষয়ও রয়েছে, তারপর দরদাম। এভাবে তিনি পশুগুলো ক্রয় করেছিলেন, কিন্তু সে সময় এ পশু নিয়ে আপত্তি উঠেনি। ক্রয় সাব্যস্থ হওয়ার পর, রসিদ করতে তাকে সহযোগিতা করেন বাজার কর্তৃপক্ষের পক্ষে সাহাব উদ্দিন ও মুসলিম। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে বাড়ি আসার পর কানাইঘাট থানার এসআই ময়নুল তার কাছ থেকে রসিদসহ মহিষগুলো নিয়ে যান। অথচ ক্রয় রসিদ থাকার র্পও তাকে ফেলা হয়েছে ভোগান্তিতে।
একটি সূত্র জানায়, বাজার সিন্ডিকেটের ইশারায় কাজ করেন এস আই মইনুল। সেই বাজার সিন্ডিকেট সবদিক ম্যানেজ করে বাজারের উপর ধরে রেখেছে নিজস্ব আধিপত্য। তারা যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে পশু হাট ঘিরে। এদিকে, বাজারের ইজারাদার জয়নাল আবেদীন জানান, এ মহিষ বিক্রিতে প্রতারণা ও রসিদ চুরি করেছেন সুলতান আহমদ। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করছেন তিনি। কিভাকে প্রতারণা বা চুরি হয়েছে সে ব্যাপারে বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি। তবে দাবি করছেন রাতে আধারে জোরপূর্ব রসিদগুলো তার কাছ তেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার এমন দাবীকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন মহিষ ক্রেতা আবুল হাসান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, ওই ১০ মহিষের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বাজারের। মহিষগুলো বাজারে তোলা হয়নি। অভিযোগও সত্য নয় ক্রেতা আবুল হাসানের। রসিদ চুরির দায়ে বাজার কর্তৃপক্ষ সুলতানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তবে জকিগঞ্জের সোনাসার গ্রামের আলোচিত পশুকারবারী মাসুম আহমদ স্থানীয় কালিগঞ্জ বাজারের রসিদ দেখিয়ে ১০টি মহিষ চুরির অভিযোগে একটি মামলা করেছেন কানাইঘাট থানায়। মামলায় সুলতান মিয়াসহ আসামি ৪জন। কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) জাহেদুল হক বলেন, বিষয়টি যেহেতু ব্যবসায়ীদের। ঘটনাটি মিমাংসায় সময় দেওয়া হয়েছিলো ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তারা ঘটনা শেষ করেনি। এখন মামলার তদন্তে বের হবে অভিযোগের আসল তথ্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চোরাই পশুর সিন্ডিকেট

১৩ এপ্রিল, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ