Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিট শক আতঙ্ক

বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ উত্তরের বোরো চাষিরা আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছেন

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

‘হিট শক’ বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন এক আতঙ্কের নাম। গরমকালে লু হাওয়া বা গরম বাতাসের প্রবাহ নতুন কিছু নয়। সাধারণত আম, জাম, কাঁঠাল ও তাল পাকার সময়ে এই লু হাওয়া বা গরম বাতাস প্রবাহিত হয়ে থাকে। তবে আগামী সপ্তাহে কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
তবে চলতি বছর প্রকৃতি পরিবেশে এক ভিন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। গত বর্ষা মৌসুমে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ব্যাপকভাবে ফসলহানি হয়েছে। খাদ্য বিভাগের হিসেবে গত আমন মৌসুমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হয়। গত রবি মৌসুমে শাক সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে প্রথম বারের মত আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। ধানের মন একেবারে ভরা মৌসুমেই ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় ওঠে। ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হওয়ায় চালের দামেও রেকর্ড হয়েছে। চালের দাম বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় ওঠানামা করছে।
কৃষি ও খাদ্য বিভাগ এবং উৎপাদক চাষিরা সবাই তাকিয়ে আছে বোরো ফসলের দিকে। ইতোমধ্যে সুমানগঞ্জ জেলায় আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী গত তিন যুগে এত দীর্ঘ সময় বৃষ্টিহীন ছিল না উত্তর জনপদ। বিশেষ করে খরা মৌসুমে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ ব্যবস্থা সম্পূর্ন ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল।
তারপরও নভেম্বর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত একাধিকবার হালকা, ভারি ও মাঝারি বর্ষণে তরতর করে বেড়ে ওঠে বোরো ধানের ক্ষেত। মধ্য মার্চ থেকে আগাম লাগানো বোরো ধানে ‘গামড়’ (ধানের ফুল ) আসতে শুরু করে। এ সময়টা ধানের গোড়ায় পানি ও আকাশের রোদ প্রয়োজন হয়। মাঝে মধ্যে বর্ষণে ধানের গা ধোওয়ার কাজটা হয়ে যায়। চলতি বছরের দীর্ঘস্থায়ী খরায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে চলতি মাসের ৪ তারিখে কোথাও ঘূর্ণিবায়ু, কোথাও শিলা বৃষ্টি আবার বিভিন্ন স্থানে ধান ক্ষেতের ওপর দিয়ে ‘হিটশক’ নামের গরম বায়ু প্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের নাটোরসহ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা হওড়াঞ্চলের কিছু স্থানসহ সারাদেশেই কমবেশি বয়ে যায় হিট শক। হিট শক বয়ে যাওয়ায় কপাল পুড়েছে বোরো চাষিদের।
কৃষি ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক মাঠে নেমে জরিপ পরিচালনাসহ বোরো ধান চাষিদের বহুমুখী দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, হিট শক থেকে বোরো ধান রক্ষায় দিক নির্দেশনা দিতে মাঠে নেমেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তারা। এদিকে চাষি পর্যায়ে ‘হিট শক’ নিয়ে শঙ্কা কাঠছেই না। তারা বোরো ধান রক্ষায় দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছেন।
উল্লেখ্য, গত আমন মৌসুুমে ধান চালের উচ্চ মূল্যের কারণে বোরো চাষিরা একটু বেশি আগ্রহী ছিলেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আজিজার রহমান জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল ইসলাম জানান, বোরো ধানের ফলন নিয়ে তারাও চিন্তিত। কারন গত আমন মৌসুমের ফলন বিপর্যয়ের কারনে সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি। হিট শকসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে বোরোতেও ফলন বিপর্যয় হলে বিপাকে পড়বে খাদ্য বিভাগও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিট শক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ