Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ

টিসিবির পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন

রফিক মুহাম্মদ : | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা। চাল-ডাল, তেল-চিনি এসব পণ্যের দাম যে ভাবে বেড়েছে তাতে সংসার চালাতে সবাই হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় রমজান ও সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’কে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেল এখন নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কিছুটা স্বস্তির জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই স্বস্তিতেও রয়েছে অস্বস্তি ও ভোগান্তি। রয়েছে মহামারি করোনার ভয়। তারপরও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠেলা-ধাক্কা আর গাদাগাদি করেই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এখানে স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে। পুলিশের সামনেই সামাজিক দূরুত্ব বজায় না রেখে গাদাগাদি করে মানুষ লাইনে দাঁড়ালেও তারা কিছুই বলছে না। এখানে পুলিশ একেবারেই নিরব দর্শক। শুধু তাই নয় অনেক স্থানে লাইনের বাইরে থেকেই পুলিশ পণ্য কিনে নিয়ে যান বলেও অনেকের অভিযোগ।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচে ছিল দীর্ঘ লাইন। তবে সেখানে তখনও টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক আসেনি। দুপুর ১২টার পর সেখানে টিসিবির ট্রাক আসে। এরপর শুরুতেই লাইনে কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হুড়োহুড়ি চলে। ঠেলা-ধাক্কা করেই সবাই গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনা শুরু করে। সেখানে সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকের মুখেই তা দেখা যায়নি। একটি টিলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা লাইনের ছবি তুলতে গেলে কেউ কেউ তখন জামার পকেটে ভাজ করে রাখা মাস্ক বের করে পরেছেন। টিসিবির ট্রাকের অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন পুলিশ। তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাকের সামনের দীর্ঘ লাইন দেখলেও সামাজিক দূরুত্ব মানার বিষয়ে কিছুই বলছেনা। এ বিষয়ে একজন পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলেই হেঁটে চলে যান।
টিসিবির পণ্য বিক্রেতা নাসির বলেন, পণ্য ট্রাকে লোড করে আসতে দেরি হয়ে যায়। বাজার থেকে দাম কম হওয়ায় এখন পণ্য কিনতে অনেকে আসছেন। দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। মানুষ বেশি হওয়ায় ঠেলাঠেলি হয়, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চান না। এখন নিজেরা যদি নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে আমরা কতবার বলে সচেতন করতে পারবো? যার চিন্তা তাকেই করতে হবে।

একই চিত্র দেখা গেছে নগরীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটের পাশে। প্রখর রোদের মধ্যে এখানেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে কিছুটা কম মূল্যে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছের না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। হান্নান নামের একজন ক্রেতা ক্ষোভের সাথে বলেন, একজনকে তেল দেওয়ার কথা ৫ কেজি কিন্তু দুই কেজির বেশি দেওয়া হচ্ছে না। পেঁয়াজের দরকার নেই, তবুও পাঁচ কেচি পেঁয়াজ নিতে হচ্ছে। দুই কেজি তেল, দুই কেজি চিনি ও ৫ কেজি পেঁয়াজের জন্য দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কোনও মানে হয় না। এখানে সামান্য কিছু টাকা কমে পণ্য পাওয়া গেলেও, যে পরিমাণ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাতে হয়, তা খুবই কষ্টকর।

টিকাটুলির ইনকিলাবের মোড়ে ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ লাইন। দৈনিক ইনকিলাবের গেইটের একটু পূর্বে থাকা ট্রাকের সামনের লাইন গোপিবাগের রাস্তায়ও অনেকদূর পর্যন্ত ছিল। প্রখর রোদের মধ্যে অনেকে ছাতা মাথায় দাঁড়ালেও লাইনে সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই ছিল না। গায়ে গা লাগিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই পণ্য কিনেছে। কেউ কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরলেও অনেকের মাস্ক ঝুলে ছিল থুতনিতে, আবার অনেকের মুখে কোন মাস্কই ছিল না। এখানে পুরুষের লাইনের চেয়ে মহিলাদের লাইন ছিল দীর্ঘ।

গোপীবাগ থেকে পণ্য কিননতে এসেছেন আসমা বেগম। তিনি ওই গলির কয়েকটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘দুই কেজি তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি ছোলার জন্য দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে লাইন অনেক বড়। জিনিস পেতে আরও কত সময় লাগবে তা আল্লাই জানে।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে টিসিবির একশত ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ট্রাক থেকে একজন সাধারণ ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে পারেন। এছাড়া ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি ছোলা ও ৮০ টাকা কেজি দরে এক কেজি খেজুর কিনতে পারেন।

বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল কোম্পানি ভেদে বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৬২০ টাকা থেকে ৬৬০ টাকা দরে। খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা দরে। চিনি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, মুসুর ডাল প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে ১৩০ টাক, পেঁয়াজ ৪০ কেজি এবং ছোলা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ