Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তদন্তের খোঁজ না নেয়াকে অস্বাভাবিক বলছে পুলিশ

প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার সাথে বাবুল আক্তারের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সে বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও বাদী হয়েও মামলা তদন্তের খোঁজ-খবর না নেয়াকে ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে চান না তারা। ফলে বাবুল আক্তারকে নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।
এদিকে মামলার তদন্ত দৃশ্যত হিমাগারে চলে গেলেও ফের আলোচনায় বাবুল আক্তার। স্ত্রীহারা পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার এখন চাকরিহারা। এরপর তার ভাগ্যে কি আছে তা নিয়ে এখন সর্বত্রই জোর আলোচনা। সন্দেহভাজন কয়েকজন আসামী গ্রেপ্তার, দু’জন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত, হত্যার কারণ স্পষ্ট না হওয়া এবং বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যেই পুলিশ দাবি করেছে, মামলা তদন্ত ‘সঠিক পথে’ রয়েছে।  
জানা যায়, আলোচিত হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বাবুল আক্তারের উপর নাখোশ। তাদের কথাবার্তায় সাবেক ওই সহকর্মীর ভূমিকা নিয়ে বিরক্তির ভাব প্রকাশ পেয়েছে। মামলার বাদী হয়েও বাবুল আক্তার মামলার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে গণমাধ্যমে দেয়া মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের কিছু বক্তব্যে অসন্তুষ্ট তারা।
তবে তারাও এই মুহূর্তে এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোন প্রতিক্রিয়া কিংবা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না বাবুল আক্তারও। তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অবশ্য চাকরি ফেরত আনতে আইনী লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন। তিনি আগেই দাবি করেছেন, বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নেননি তাকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে। বাবুল আক্তারের শাশুড়িও ইতোমধ্যে কন্যা হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
বাবুল আক্তারকে নিয়ে অনেকটা টানা-হেঁচড়ার মধ্যেই দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম দৃশ্যত থেমে গেছে। কিলিংস্কোয়াডের কথিত দুই সদস্য কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। ‘গুম’ হয়ে গেছে হত্যকা-ের মূলহোতা আবু মূসা। তিন মাস পার হলেও খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। পুলিশের দাবি মতে মূলহোতা মুছা শিকদারে আটকে আছে হত্যার রহস্য। তাকে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ, যদিও মুছার পরিবারের দাবি তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে অনেক আগে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সঠিক পথে আছে। আমরা হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন ও মূলহোতাকে ধরতে কাজ করছি। বাবুল আক্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে মামলার বাদী, তবে এখনও পর্যন্ত মামলার তদন্ত বিষয়ে সে কোন যোগাযোগ করেনি। আমরাই বরং তার সাথে যোগযোগ করেছি। বিষয়টিকে স্বাভাবিক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, মূলহোতা আবু মূসা ওরফে মুছা শিদারসহ আরও কয়েকজনকে আমরা খুঁজছি। তাদের পাওয়া গেলে হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যাকা-ের রহস্য সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না। এই খুনের সাথে আরও কারা জড়িত সেটাও নিশ্চিত হওয়া যাবে তদন্ত শেষ হলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) নগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার মো: কামরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে খুনি চক্রের সদস্যদের কয়েকজনকে ধরা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকা-ে জড়িতদের নাম ঠিকানা পুলিশের হাতে দাবি করে তিনি বলেন, ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সিআইডির টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে ওই অস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে।
গত ৫ জুন সকালে নগরীর ব্যস্ততম জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে খুন হন মিতু। ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। মোটরসাইকেল আরোহী খুনিরা প্রথমে তাকে গুলি করে ও পরে কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশ প্রথমে এই খুনের সাথে জঙ্গি গোষ্ঠী জড়িত বলে সন্দেহ করে। ওই দিন বাবুল আক্তারের বাসায় গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সন্দেহের তীর ছুঁড়েন জঙ্গিদের দিকে। এর জের ধরে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার হয় কয়েক হাজার মানুষ।
এদিকে মূলহোতা আবু মূসাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। স্ত্রী তামান্না সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করে বন্দর এলাকার বাসা থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে ঢাকায় নিয়ে বাবুল আক্তারের মুখোমুখি করা হয়েছে বলেও তামান্না দাবি করেন। এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করছে পুলিশ।
মূসা রহস্যজনক নিখোঁজ থাকলেও তার বড় ভাই সাইদুল শিকদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি সরবরাহ করেছিল সাইদুল। মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে ঢাকায় বাবুল আক্তারকে ডিবি অফিসে নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ফের বাসায় দিয়ে আসা হয়। ওই ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় হয়। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে মঙ্গলবার বাবুল আক্তারকে পুলিশ সুপারকে অব্যাহত দেয়া হয়। স্ত্রী খুনের পরদিন থেকে বাবুল আক্তার তার মা-হারা দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুরের বাড়িতে আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তদন্তের খোঁজ না নেয়াকে অস্বাভাবিক বলছে পুলিশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ