পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জনৈক এক আলেমকে মারধরের গুজব ছড়িয়ে ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও থানায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে স্থানীয় উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা। তান্ডব চলাকালে ইউএনও-এসিল্যান্ডের দুটি সরকারি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা ও লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এই তান্ডব চালায়। মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলাকারীরা তিন ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তাদের এই হামলায় রক্ষা পায়নি উপজেলা পরিষদ চত্বরের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল। এতে সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জুবায়ের হোসেন নামে যুবক নিহত হয়েছেন। ৮ পুলিশ-র্যাব সদস্যসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। নিহত জুবায়ের উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের আশরাফ আলী মোল্যার ছেলে।
জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি। এসময় একজনকে মারধর করার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে পার্শ্ববর্তী নটাখোলা গ্রামের মো. জাকির হোসেন মোল্যাসহ কয়েকজন আহত হয়। জাকির হোসেনকে আহত করার খবরে সেখানে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরও গ্রামবাসী জড়ো হন। খবর পেয়ে সেখানে সালথা থানার এসআই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌঁছালে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে এসআই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। এরপর জনৈক এক আলেমকে আটক করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে সালথা থানা অভিমুখে রওনা হয়ে থানা ঘেরাও করে। পরে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিস, স্থাপনা, বাসভবন ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় ইউএনওর গাড়ি ও এসিল্যান্ডের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ হামলায় রক্ষা পায়নি সাংবাদিকের একটি মোটরসাইকেলসহ তিনটি মোটরসাইকেল।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবু বলেন, আমি শুনেছি, ফুকরা বাজারের ঘটনায় এসিল্যান্ড কাউকে আঘাত করেনি। সমাজের কিছু দুষ্কৃতিকারী গুজব ছড়িয়ে বিষয়টি অন্যদিকে ধাবিত করেছে। তবে এসিল্যান্ড মারুফা সুলতানা খান হিরামণি বলেন, তিনি রুটিন ওয়ার্কে বিভিন্ন বাজারে গিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে ফুকরা বাজারে যান। সেখানে দুটি দোকান খোলা ছিল, তাদের বন্ধ করতে বলা হয়েছিল।
সালথা থানার ওসি আশিকুজ্জামান বলেন, সহকারী কমিশনারের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফুকরা বাজারে পুলিশ পৌঁছায়। সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এতে এসআই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশকে অশান্ত করার জন্য এ ঘটনা ঘটায়। এসময় আমার বাসভবনের সাথে থাকা গ্যারাজে দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং বাসা ভাঙচুর করে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ ভবনে ঢুকে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরিকল্পতিভাবে এই হামলা করা হয়েছে। সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর জানান, আমার বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সালথা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ সদস্যসহ র্যাব, আনসার সদস্যরা ৫৮৮ রাউন্ড শটগানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে। এসময় আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ সদস্য আহত হন। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপির কনিষ্টপুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী বলেন, প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটাকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি সারাদেশে সহিংসতা করছে। এরই ধারাবাহিতায় সালথায় তারা হামলা চালিয়েছে। যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। সালথার জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।