Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেয়ের লাশ কোলে রাতভর বসে মা

প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে আবারও সরকারি হাসপাতালে চরম অবহেলার অভিযোগ। এবারের ঘটনা উত্তর প্রদেশের মীরাট। বাগপত জেলার একটি দরিদ্র পরিবার অভিযোগ করেছে, মীরাটের একটি সরকারি হাসপাতালে রক্ত যোগাড় করতে না পারায় মৃত্যু হয়েছে তাদের শিশুকন্যার। সেখানেই শেষ নয়, মেয়ের লাশ কোলে নিয়ে মা’কে সারারাত রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে। কারণ অ্যাম্বুলেন্সের জন্য যে ভাড়া চাওয়া হয়েছিল সেটি তাদের অর্ধেক মাসের রোজগাড়ের সমান।
বাগপত জেলার বাসিন্দা ইরফানা নামের এক নারী বলছেন, ‘আমার আড়াই বছরের মেয়ে গুলনাদ এক মাস ধরে খুব জ্বরে ভুগছিল। কাছের হাসপাতালে ডাক্তারেরা রোগটাই ধরতে পারেনি। জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার অবস্থা খারাপ হওয়াতে মিরাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রক্ত যোগাড় করার জন্য ৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। কোথা থেকে অত টাকা পাব? কয়েক ঘণ্টা পরে মেয়ে মারা যায়। চিকিৎসাই করা গেল না’। সেখানেই শেষ হয়নি হতদরিদ্র এই পরিবারের হেনস্থা।
মেয়ের লাশ ৫০ কিলোমিটার দূরের গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেও একটা অ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করতে পারেনি ওই পরিবারটি। ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে শুধু জীবিতদের নেয়, লাশ নেবে না। আর অন্য অ্যাম্বুলেন্স ২৫০০ টাকা চাইল। ডাক্তারদের হাতে পায়ে ধরেছি, কেউ সাহায্য করল না। সারারাত মেয়েকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছিল’ -স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইরফানা।
ভারতের ইংরেজি সংবাদ চ্যানেল এনডিটিভি’র এক সাংবাদিক বাগপত জেলায় ইরফানার গ্রাম নেওয়ারাতে গিয়েছিলেন। ওই চ্যানেলে যে ছবি সম্প্রচারিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই পরিবারটি ঘর বলতে একটা প্লাস্টিকের ছাউনি। আশেপাশে একই ধরনের আরও কিছু ছাউনি রয়েছে। দিনমজুর ওই পরিবারটির রোজগার দিনে ১৫০ টাকা।
তাদের পক্ষে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে মেয়ের জন্য রক্ত যোগাড় করা বা লাশ বয়ে নিয়ে আসার জন্য ২৫০০ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা সাধ্যের অতীত।
রাত পার হবার পরে কিছু মানুষের কাছ থেকে এক প্রকার ভিক্ষা করে টাকা যোগাড় করে একটি গাড়ি ভাড়া করেন ইরফানা আর তার স্বামী।
ভারতের সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামোয় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সম্প্রতি মৃত্যুর পরেও সরকারি পরিষেবা না পাওয়ার ঘটনা একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে। যেদিন ইরফানার পরিবারের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটছে, সেই একই দিনে মধ্যপ্রদেশের এক ব্যক্তিকে মৃত স্ত্রীর লাশ সৎকারের জন্য আবর্জনার স্তূপ ঘাঁটতে হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, নিমাচ জেলায় এক ব্যক্তির কাছে মৃত স্ত্রীর লাশ সৎকারের জন্য কাঠ কেনার পয়সা ছিল না। তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি। বাধ্য হয়ে তিন ঘণ্টা ধরে আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে টায়ার, কাগজ, প্লাস্টিক, পাতা প্রভৃতি সংগ্রহ করে স্ত্রীকে দাহ করেন জগদীশ ভিল নামের ওই ব্যক্তি।
এর আগে উত্তর প্রদেশেই অসুস্থ ছেলেকে কাঁধে নিয়ে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে ছুটতে হয়েছিল এক অসহায় বাবাকে। ছেলেটি বাবার কাঁধেই মারা যায়। ওই একই দিনে উড়িষ্যা রাজ্যে স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বয়ে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল এক ব্যক্তিকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেয়ের লাশ কোলে রাতভর বসে মা

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ