Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

৬ মাসে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন

প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোহাগ খান : বাংলাদেশ ব্যাংকের খসড়া আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকিং খাতের সার্বিক আর্থিক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ কম দেখাতেই এই ঋণ অবলোপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক।
ঐ নির্বাহী পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও জানান, ব্যাংকগুলো গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা অবলোপন করেছে। এর মধ্যে গত ২০১৫ সালে অবলোপন করা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। অবলোপনকৃত অর্ধেকের বেশি ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের।
বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় থাকা মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ আর্থিক বিবরণী (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপনকৃত ঋণ বলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। নীতিমালার আওতায় ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে এবং মামলা দায়ের করে তা অবলোপন করতে হয়।
২০১৩ সালের পূর্বে মামলা দায়ের না করে কোনো ঋণ অবলোপন করা যেত না। তবে মামলার খরচের চেয়ে অনেকাংশে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কম হওয়ায় ২০১৩ সালের শেষভাগ থেকে মামলা না করেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি মন্দ ঋণ অবলোপন করেছে ২০১৩ সালে, তবে এবছর তা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ২০১৩ সালে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। কিন্তু এবছর প্রথম ছয় মাসে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ অবলোপন হওয়ার পরেও খেলাপী ঋণের হার কমানো না যাওয়ায় অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
এতে বছর শেষে অবলোপনকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে তারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবলোপন চলছে পুরো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। অবলোপনকৃত ঋণ অবশ্যই খেলাপি ঋণ। তবে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে অবলোপন করা ঋণ বাদ দিয়ে হিসাব করে সাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। বর্তমানের ৬৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণসহ হিসাব করলে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপির পরিমাণ ১.৫০ লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে। এর বাইরে প্রায় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করেছে ব্যাংকগুলো। গত ডিসেম্বর শেষে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এই ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকে অবলোপন করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
একাধিক প্রবীণ ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃত্রিমভাবে আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন রোধ করতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঋণ অবলোপনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। যদিও অবলোপন প্রক্রিয়ার ফলে অনেক সময় ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয় না। তবে ব্যাংকগুলো অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে এবং আলাদাভাবে অবলোপনের হিসাব সংরক্ষণ করে তা আদায়ে তৎপরতা চালায়। ফলে আমানতকারীর স্বার্থহানির কোনো সুযোগ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৬ মাসে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ