পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে। নগরীর আন্দরকিল্লায় অবস্থিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি (এমএসআর) ক্রয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী দুর্নীতি করেছেন বলে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল বুধবার দুপুরে জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও কোতোয়ালি আসনের সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর হাতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন এ তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী এবং সদস্য বিএমএ’র যুগ্ম সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দুর্নীতির বিষয়ে অধিকতর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) লিখিতভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কোনো বাজেট বরাদ্দ ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির এমআরআই (বিটিআই-.০৩৫, এমআরআই সিস্টেম) ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। কিন্তু ওই মেশিনের ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (বিএএসডিএ অব চায়না) দাম চেয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এএসএল থেকে কেনা কালার ডপলার চারটি, হিটাচি কালার ডপলার ২ডি অলোকা (মডেল এফ-৩১) জাপান প্রতিটি ৬৫ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। কিন্তু ম্যানুফেকচারিং প্রতিষ্ঠানের দেশি এজেন্টের কাছ থেকে প্রাপ্ত কোটেশনে ওই আইটেমের প্রতিটির মূল্য ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগ এসেছে, ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী প্রকিউরিং এনটাইটির (পিই) প্রধান ছিলেন। একই ব্যক্তি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) এবং টেকনিক্যাল সাব কমিটির (টিএসসি) সভাপতি ছিলেন। যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর)-২০০৮ দ্বারা অসমর্থিত এবং প্রতারণার (পড়বৎপরাব/ভৎধঁফঁষবহঃ ঢ়ৎধপঃরপব) পর্যায়ভুক্ত। ২০১৪ সালের ২৫ মে টিএসসির সভায় চার সদস্যের কমিটির মধ্যে কেবল সভাপতি ডা. সরফরাজের সই ছিল।
এছাড়া ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল সিএসসি/হিসাব/২০১৪-২০১৫/১০৭৭৪/১ নম্বর স্মারকে ঢাকার মিরপুরের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজকে আটটি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, আটটি আইসিইউ বেড ও একটি কার্ডিয়াক পেসেন্ট মনিটর চাহিদা-বহির্ভূতভাবে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকায় কার্যাদেশ দিয়েছেন। অফিসের মেমো রেজিস্টার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত স্মারক নম্বরটি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে জারি করা হয়নি। তবে ১০৭৭৪ (৬) স্মারকমূলে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজকে অন্য ১০টি আইটেম সরবরাহের জন্যে ২ কোটি ৯৮ লাখ ১২ হাজার ৫শ’ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্যাদেশ নম্বর ১০৭৭৪ (৬) মূলে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ থেকে সিসিইউ এবং অপারেশন থিয়েটারের যে ১০টি আইটেমের যন্ত্রপাতি কেনা হয় তার একটিও দাখিলকৃত টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশান, ক্যাটালগ, কান্ট্রি অব অরজিন বা গুণগতমান অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল হাসপাতালে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দের বাইরেও যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া চাহিদাপত্রের বাইরেও দুটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বেশকিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। প্রতিবেদনে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দামের এমআরআই মেশিন ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এবং সাড়ে ২৪ লাখ টাকার হিটাচি কালার ড্রপলার মেশিন ৬৫ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০ ধরনের যন্ত্রপাতি অস্বাভাবিক অতিরিক্ত মূল্যে কেনা হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
আলোচনা শেষে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি বলেন, এ তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় কয়েকটি অনিয়ম হয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনায় গণখাতে ক্রয়বিধি পিপিআর-০৮ অনুসরণ করা হয়নি। একই ব্যক্তি তৎকালীন সিভিল সার্জন (ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী) একসঙ্গে ক্রয়সংক্রান্ত তিনটি কমিটির প্রধান ছিলেন। এটা ক্রয়বিধির লঙ্ঘন। আর মালামাল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট থেকে নেয়া হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর আলোচনাকালে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, অধিকতর তদন্ত করার জন্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরকে বলব। দুদকেও চিঠি পাঠাব। এর পেছনে আরও যদি কেউ জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক বলেন, কেনাকাটার জন্য গঠিত কারিগরি উপকমিটির সভায় প্রধানের (সরফরাজ খান) সই ছাড়া বাকি তিন সদস্যের সই নেই। তাহলে ওই সভার ভিত্তিতে কীভাবে যন্ত্রপাতি কেনা হলো?
তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, এ যন্ত্রপাতি কেনাকাটা আরব্য উপন্যাসের মতো একটি ব্যাপার। এখানে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, এটি ব্লাড ওয়ার্মার। ১৫ হাজার টাকার যন্ত্রটি কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। নিম্নমানের যন্ত্রটির ওপর আমেরিকার স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকটি যন্ত্রকে জাদুর বাক্স আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটি অটোস্কোপ, ডাক্তার কান দেখার জন্যে ব্যবহার করেন। ১০-১২ হাজার টাকার এ যন্ত্রটি কেনা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। তিনি একটি চুক্তির দলিল দেখিয়ে বলেন, এ স্ট্যাম্প কেনা হয়েছে ২০১৪ সালের নভেম্বরে কিন্তু চুক্তি সই হয়েছে চার মাস আগে জুলাইতে। তার মানে ঘাপলা আছে।
সভায় হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেবার মান তদারক করার জন্য একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হয়।
জেনারেল হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএমএ সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুরশিদ আরা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, আনজুমান আরা বেগম, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, হাসপাতালের মেট্রন নীলিমা ধর, মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।