Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিক্রিত ফ্ল্যাট বন্ধকী দেখিয়ে বিডিডিএলের ঋণ প্রতারণা: পথে বসার উপক্রম ৩১ মালিকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২১, ৮:০২ পিএম

একটু স্বস্তিতে মাথাগোঁজার আশায় জীবনের সঞ্চিত সব অর্থ দিয়ে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ষাটোর্ধ্ব এসএম শাহাবুদ্দিন। এ জন্য ফ্ল্যাট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড (বিডিডিএল) কর্তৃপক্ষকে বুকিং মানি, ডাউন পেমেন্ট এবং মাসিক কিস্তির টাকা পরিশোধের পর স্বপ্নের সেই ফ্ল্যাটে বসবাসও শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে মালিকানা দলিল বুঝে পেতে সমুদয় রেজিষ্ট্রি ফিও মানি রিসিটের মাধ্যমে নিয়মমাফিক পরিশোধ করেন।

কিন্তু যে ফ্ল্যাটে তিনি উঠেছিলেন সেখানে বসবাসের ৮ বছর পর হঠাৎ করেই জানতে পারেন ফ্ল্যাট কিনে তিনি বিডিডিএল থেকে প্রতারিত হয়েছেন। কারণ তার কেনা ফ্ল্যাটটিকেই বিডিডিএল গোপনে ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধকী সম্পদ দেখিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের ঋণ। সেই ঋণও বিডিডিএল পরিশোধ করেনি। এর ফলে শাহাবুদ্দিনের কেনা ফ্ল্যাট এখন বন্ধকী সম্পদের আওতায় ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পদে পরিণত হয়েছে। এতে করে জীবনের মেষ সময়ে এসে সাহাবুদ্দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে যে কোনো সময় আশ্রয়হীণ হওয়ার শঙ্কায় ভোগছেন। শুধু শাহাবুদ্দিন একাই নন। একই ঘটনায় অভিন্ন প্রতারণার শিকার হয়েছেন আব্দুল হান্নান, বিউটি বেগম, ইউসুফসহ ৩১ ফ্ল্যাট মালিক।

শনিবার (৩ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্ল্যাট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড (বিডিডিএল) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ উঠে আসে। রাজধানীর সেগুণবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ক্ষতিগ্রস্ত ও সংক্ষুব্ধ ফ্ল্যাট মালিকদের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে ঘটা এই প্রতারণার ঘটনাটি রাজধানীর পূর্ব রামপুরায়, ৩২৩ ডিআইটি রোড, আফতাব টাওয়ারের বিক্রিত ফ্ল্যাটকে কেন্দ্র করে। আর প্রতারক হলো বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড (বিডিডিএল) এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজামুল সাঈদ ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ বাতেন খান গং।

আফতাব টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে এর ৩১টি ফ্ল্যাটের মালিকানা ছিল বিডিডিএল’র। ২০০৬ সাল থেকে এই ভবন নির্মাণ ও বিক্রির কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের পর পর্যায়ক্রমে ফ্ল্যাট মালিকদের হাতে চাবি বুঝিয়ে দিলে ক্রয়মূল্যে দাবিদাররা আফতাব টাওয়ারে বসবাস শুরু করে। সমস্যাটি শুরু হয় অবৈধ ও অনৈতিকভাবে বিডিডিএল কর্তৃপক্ষ সব বিক্রিত ফ্ল্যাটকে বন্ধকী দেখিয়ে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে গোপনে ঋণ নেয়ার পর।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিডিডিএল দুই দফায় ২০০৮ সালে ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড এর কাছ থেকে মোট ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। যা বিডিডিএল কর্তৃপক্ষ ফ্ল্যাট বিক্রির আগে-পরে কোনো ফ্ল্যাট মালিককেই অবহিত করেননি। এই ঋণটি তারা গোপনে নেন এবং এর বিপরীতে তাদের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা ফ্ল্যাটটিকেই বন্ধকী রাখেন। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই আফতাব টাওয়ার ভবনের সামনে ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড ভবনটি তাদের কাছে বন্ধকী সম্পদ এমন সাইনবোর্ড ঝুলানোর পরই তারা জানতে পারেন। বিষয়টি ফ্ল্যাট মালিকদের নজরে আসলে পরদিন তারা রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর পাশাপাশি বিডিডিএল পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করেন। মামলা করা হয় দেওয়ানি আদালতেও।

একই সঙ্গে ফ্ল্যাট মালিকরা চেষ্টা চালিয়ে যান ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড এর অনাপত্তিপত্রসহ (এনওসি) ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটের রেজিষ্ট্রি দলিল বুঝিয়ে দেয়ার। কিন্তু এ বিষয়ে বিডিডিএল কর্তৃপক্ষ মিথ্যা প্রতিশ্রূতি দিয়ে এখন পর্যন্ত শুধু কালক্ষেপণ করছেন। কিন্তু তারা ফ্ল্যাট মালিকদের রেজিষ্ট্রি দলিলও ফিরিয়ে বা বুঝিয়ে দেননি এবং ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ঋণের টাকাও পরিশোধ করেননি।

এমন পরিস্থিতিতে আদালত পিবিআই ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) কে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী পিবিআইএর কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন তদন্তে নেমে বিডিডিএল পরিচালনা পরিষদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগর সত্যতা খুঁেজে পায় এবং তিনি রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এবং ২৩/২৭/৩১ ধারাসহ পেনাল কোড ৪১৮/৪২৩/১০৯ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফ্ল্যাট মালিকরা জানান, বিষয়টি এখন আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও তাদের আশঙ্কা ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেডকে নিয়ে। এ প্রতিষ্ঠানটিও বিডিডিএল এর বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে। ওই মামলায় ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণের কথা বলা হলেও প্রায় এক যুগে ওই টাকা সুদাসলে ১৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিডিডিএল উধাও হয়ে গেলে কিংবা ঋণ পরিশোধ না করলে বন্ধকী হিসাবে রাখা তাদের কেনা ফ্ল্যাট ফাস্ট ফাইন্যান্সের চোখ পড়লে বা জব্ধের উদ্যোগ নিলে তাদের পথে বসা ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

এ পরিস্থিতিতে বিডিডিএলের প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগী ফ্ল্যাট মালিকরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আদালত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ