Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয়

পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেলেন রোগী করোনার মহাদুর্যোগে দেশ : চৈত্রের দাবাদাহে রোগী নিয়ে ছুটছেন স্বজনরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

শৈশব হতে জননীর সেবা করিতেন দিবাযামী/ দুপুর রাত্রে জননী জাগিয়া ডাকিলেন, ‘বাছাধন/-বড়ই পিয়াস পানি দাও’ বলি মুদিলেন দু’নয়ন’। কবি কালিদাসের লেখা বায়েজিদ বোস্তামী’র এই ‘মাতৃভক্তি’ কবিতা স্কুল জীবনে পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে সকল মানুষের সেরা প্রাপ্তি ‘মা’। করোনাভাইরাসের অতিমারিতে বাংলাদেশ যেন এমনই কবি কালিদাসের বায়েজিদ বোস্তামী’র মতো মোহাম্মদ রায়হানকে আবিষ্কার করল। রাজধানীর উত্তরখানের বাসিন্দা রায়হানের মাতৃভক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল ‘গুরুতর অসুস্থ মা মনোয়ারা বেগমকে বাঁচাতে জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার। মনোয়ারাকে বাঁচাতে ছেলে রায়হান অ্যাম্বুলেন্সে মাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটেছেন। কোনো হাসপাতালই তার মার প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারেনি। চৈত্রের দাবাদাহে মা’কে বাঁচাতে ঘাম ঝড়িয়েছেন রায়হান। গুরুতর অসুস্থ মাকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেন। সেখানে ভর্তি করানোর পর অক্সিজেন সাপোর্ট মেলেনি। পরে সেখান থেকে রেফার করা হলে মাকে নিয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও আল রাজী ইসলামী হাসপাতাল যান রায়হান। কিন্তু কোথাও মাকে বাঁচানোর ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা পাননি। অতঃপর রায়হান গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাকে নিয়ে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানেই অ্যাম্বুলেন্সেই তার মা মনোয়ারা মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসার অভাবে মাকে বাঁচাতে না পারা অসহায়-নিরুপায় ছেলে রায়হানের কান্নার দৃশ্য ভাইরাল। কাঁদতে কাঁদতে রায়হান বলছিল ‘একের পর এক রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে গিয়েও মাকে জরুরি অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারেনি।’

মা’কে নিয়ে রায়হানের একের পর এক হাসপাতালে ছুটে বেড়ানোর এই একটি ঘটনায় প্রমাণ দেয়- দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গেছে। হাতপাতালের চিকিৎসকরা দিন-রাত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিয্ক্তু উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য দুর্যোগ’ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আপনি ও আমি কেউ নিরাপদ নই’। তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার্থে বিএসএমএমইউতে দ্রুততম সময়ে শতাধিক সাধারণ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ শয্যার বৃদ্ধি করা হবে।

করোনাভাইরাসের অতিমারিতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। করোনা পরীক্ষা করতে গিয়ে এবং মৌসুমের গরমজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা রাজধানীর একের পর এক হাসপাতালে রোগী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথাও ভর্তি করাতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউর জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকায় অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না। চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজধানীর হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে।’

রাজধানীর উত্তরখানের রায়হানের মতো আরেক যুবক বগুড়া থেকে করোনা আক্রান্ত বাবার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকায় একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ঘুরে বাবাকে ভর্তি করাতে পারেননি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়া বাবাকে অক্সিজেন দিয়ে বগুড়া থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় এনে একটি শয্যার জন্য হাসপাতাল হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন। সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে তিনি তার বাবাকে ভর্তি করান। সেখানেও তার হয়েছে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এই যুবক করোনা আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালের ভর্তি করনোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘ঢাকাতে প্রায় ৮-১০টা হাসপাতালকে নক করেছি। সবাই বলছে, সিট ফাঁকা নেই। এর মধ্যে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে সিট হবে বলে কনফার্ম করল। কিন্তু যাওয়ার পরে ওরা বলছে, ওদের ওখানে ইয়োলো জোনে বা নির্ধারিত সাধারণ ওয়ার্ডে কোন সিট খালি নেই। আরেকটা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো। তারা রোগীর অবস্থা না জেনেই সিসিইউতে ভর্তি করল। কিন্তু তার সিসিইউর দরকার ছিল না। তারা বলল, সাধারণ সিট নেই। সিসিইউতেই রোগী রাখতে হবে।’

রাজধানীর ঢাকার সরকারি হাতপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি হাসপতালে রোগীতে ঠাসা। হাসপাতালগুলোতে ‘ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই’ অবস্থা। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা পরিশ্রম করছেন, রাজ জেগে দিন-রাত পরিশ্রম করে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। নার্স ও অন্যান্যরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। অনেক হাসপাতালে করোনা রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গতকাল ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল, কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আইসিডিডিআরবিতে ঘুরে এবং বিভিন্ন ডাক্তার ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। করোনা রোগীর মতোই মৌসুমী রোগের রোগীর চাপও বেড়ে গেছে প্রতিটি হাসপাতালে। ঢাকার বাইরে থেকেও জেলা পর্যায় থেকেও রোগীরা ঢাকায় আসছেন চিকিৎসার আশায়। কিন্তু ঢাকায় পর্র্যাপ্ত সিট না থাকায় তারা রোগীর সেবা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অতিমারি করোনাভাইরাসের শনাক্তের কারণেই রোগীদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বেসরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে সাধারণ অন্য রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করোনা হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীর ভিড় কমবে। সাধারণ রোগীদের ভর্তির জন্য এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতালে ছুটাছুটি করতে হবে না। রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।

এ দিকে গতকালও রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে বিক্ষোভ করেছে করোনা পরীক্ষা করতে আসা রোগীরা। রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সক্ষমতা রয়েছে দৈনিক ১৮০টি নমুনা নেয়ার। কিন্তু পরীক্ষা করতে আসছেন দ্বিগুণেরও বেশি। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে নমুনা দিতে না পারায় ক্ষোভ জানিয়েছেন রোগীরা। এক রোগী জানান, তিনি আগের দিন ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গেছেন। গতকাল আবার আসছি, কখন পাবেন জানেন না। হাসপাতালে আসা আরেক নারী জানান, কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। একজন আরেকজনের গায়ের ওপর পড়ছে। নমুনা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। রিপোর্ট নিতে আসা একজন জানান, তিনি নমুনা আগেই দিয়েছেন; কিন্তু মোবাইলে ম্যাসেজ আসেনি। এখন রিপোর্ট নিতে এসে দেখেন সব বন্ধ রয়েছে। বুথ খোলা হয়নি।

মূলত রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ফাঁকা নেই সাধারণ শয্যা বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। সামর্থের তুলনায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে আসা রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেকেই করাতে পারছেন না টেস্ট। হাই ফ্লো অক্সিজেন বেডগুলো পরিপূর্ণ থাকায় অন্যান্য রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে সিলিন্ডারের মাধ্যমে। চিকিৎসকরা বলছেন, সেখানেও তৈরি হয়েছে সংকট। আর এত রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। মুগদা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৪টি আইসিইউ ১০টি এইচডিইউ ও ৩৩০টি শয্যার মধ্যে ফাঁকা নেই একটিও। চিকিৎসক জানালেন হাই ফ্লো অক্সিজেন বেড ২৭০টি ছাড়া ক্রিটিকাল রোগীদের সিলিন্ডারের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে অক্সিজেন। সেখানেও রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অক্সিজেন সংকট। চিকিৎসক জানান, এখানে কোনো বেড নেই। যেভাবে রোগী আসছে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও করোনা পরীক্ষা করতে আসছেন অসংখ্য রোগী। মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব। আর নমুনা দিতে ভোগান্তির নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রায় অভিন্ন চিত্র রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোতেও।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে শনাক্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মহামারি তাড়া করে ফিরে এখন এ ভাইরাস ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে দেশের ৩১টি জেলায় আবারও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ২ আগস্ট দেশে একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ পাঁচ হাজার ৩৫৮ জন আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে দিয়ে সেই রেকর্ড ভাঙে। পরদিন গত বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) একদিনে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সসহ শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমান অবস্থাকে ‘জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ উল্লেখ করে দেশের শতভাগ মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি (প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, ঘরের বাইরে গেলেই শতভাগ মানুষের মাস্ক পরিধান করা, ঘন ঘন সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা) মেনে চলার পরামর্শ দিলেও সেদিকে অধিকাংশ মানুষেরই ভ্রুক্ষেপ নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ দুই তিন সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষণারও পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার জীবন ও জীবিকার কথা ভেবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকার ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়নে পাঁচ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। কিন্তু তা কার্যকরে যে কঠোর তদারকি প্রয়োজন সরকার সেদিকে যাচ্ছে না।

এরই মধ্যে চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সবকিছু বন্ধের সিদ্বান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামে রেকর্ড সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতি ওষুধের দোকান এবং কাঁচাবাজার ছাড়া সবগুলো সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে বন্ধ থাকবে। বিপণিবিতান, খাবারের দোকানসহ যাবতীয় সব দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা পরিস্থিতি ক্রমান্বতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে- এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের ১৮ নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের বেখেয়ালি চলাফেরা আগামীতে আরো বিপর্যয় নিয়ে আসবে। আমরা যতই হাসপাতালগুলোতে বেড বৃদ্ধি করি, এতে করোনা আক্রান্ত রোগী কমাতে পারব না। আমাদের আক্রান্তের উৎপত্তিতে আরো সচেতন হতে হবে।’

দেশে করোনার লাগাম টেনে ধরাই যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মাসওয়ারি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা যথাক্রমে মার্চ ১ হাজার ৬০২, এপ্রিল ৬৩ হাজার ৬৪, মে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪, জুন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩০, জুলাই ৪ লাখ ১০ হাজার ৩৪৯, আগস্ট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৪, সেপ্টেম্বর ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫২, অক্টোবর ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৭, নভেম্বর ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৯, ডিসেম্বর ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৭, জানুয়ারি ৪ লাখ ২৪ হাজার ১২৪, ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০৫ ও মার্চ ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৪৯ জন। মাসওয়ারি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫১, ৭ হাজার ৬১৬, ৩৯ হাজার ৪৮৬, ৯৮ হাজার ৩৩০, ৯২ হাজার ১৭৮, ৭৫ হাজার ৩৩৫, ৫০ হাজার ৪৮৩, ৪৪ হাজার ২০৫, ৫৭ হাজার ২৪৮, ৪৮ হাজার ৫৭৮, ২১ হাজার ৬২৯, ১১ হাজার ৭৭ জন ও ৬৫ হাজার ৭৯ জন। মাসওয়ারি পরিসংখ্যানে মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে- ৫, ১৬৩, ৪৮২, ১১৯৭, ১২৬৪, ১১৭০, ৯৭০, ৬৭২, ৭২১, ৯১৫, ৫৬৮, ২৮১ ও ৬৩৮ জন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পহেলা এপ্রিল ৫৯ জন এবং ২ এপ্রিল ৫০ জন মোট ১০৯ জন মারা যায়। গতকালও করোনা শনাক্ত হন ৬ হাজার ৮৩০ জন। দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় এর ঠিক ১০ দিন পর ১৮ মার্চ।



 

Show all comments
  • Md Nayeem Hassan ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
    রাষ্ট্র গুলি করে মানুষ মারে স্বাস্থ্যসেবা দুর্নীতি করে মানুষ মারে।।।। উন্নয়ন কি খাওয়া যায় না পারা যায়।।
    Total Reply(0) Reply
  • Milon Mondal ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
    সময় এসে গেছে,সরকার পরিবর্তন হওয়ার, আর সেটা জনগন কে করতে হবে। আইন ব্যাবস্থা দুর্বল,বিচার বিভাগ ক্ষমতাসিন দলের হয়ে কথা বলে,সাস্থ ব্যাবস্থা নিন্মমানের,খাদ্যদ্রব্যের মুল্য আকাশ সমান,নিশ্চই সে সরকার জনগন চাইবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed Akram ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    সরকার যেভাবে চালাবে জাতি বাধ্য হয়ে সেভাবেই চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammod Ali Rasel ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    দিন শেষে উন্নয়নের সবক
    Total Reply(0) Reply
  • Alaudin Alo ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    সবার প্রতি আল্লাহ সহায় হোন
    Total Reply(0) Reply
  • Mamunur Rashid ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
    এখন আর উপদেশ কিংবা নির্দেশনা নয়" স্বাস্থ্যবিধি মানতে এখনই বাধ্য করা উচিত" ভ্রাম্যমান আদালত নয়, পুলিশকে আগের মতো অ্যাকশনে নামানো উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Morshed Shahed ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
    আইসিইউ নাই,চিকিৎসা ব্যাবস্থার উন্নতি নাই আছে শুধু চেতনা,গর্ব আর সাফল্যের গালগল্প।
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৪ এএম says : 0
    জনগনের করের টাকায় হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে, হাজার কোটি টাকায় শতবর্ষ পালন, আতশবাজি, ডিজিটাল সাইনবোর্ড, লালনীল বাতির ঝলকানিতে সারাদেশে আনন্দের বন্যা এসব আনন্দ ফুর্তি বাদ দিয়ে করোনা রোগীর চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ আইসিইউ বেড কিনলে করোনা রোগীদের কষ্ট কিছুটা হলে লাঘব হতো। হে আল্লাহ তুমিই আমাদের একমাত্র ভরসা।
    Total Reply(0) Reply
  • Owahiduzzaman Fakir ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 0
    হাসপাতালের অবস্থা ভয়াবহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Sps ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ বাংলাদেশটাকে রক্ষা করুন, বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা খুবই ক্ষীণ হয়ে গেছে, যার কারণে এরকমভাবে সংক্রমণ বাড়তেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সচেতনতা মেনে না চলবেন ততদিন পর্যন্ত এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Bonny ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    যাঁদের চরিত্রর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কোনো আদর্শ নেই তাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকার কারণে আমাদের দেশের এই অবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • Khokon ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    Desher montri, mp derke bideshe keno chikitsha korte hoi? Montrider bidese chikitsha bondho korte hobe. Lut kora takai montrira Singapore noito America gia chikitsha kore ar shadharon jonogon bina chikitshai more. Jotodin montrider bideshe chikitsha nishidho na hobe totodin kono chikitsha khate unnoti hobena. Montrider jodi bideshe chikitsha korte hoi tahole keno medical college deshe ache? Desher doctor ra ki kichu janena jar jonno bidesh jai harami lutera montrira.
    Total Reply(1) Reply
    • Mojibur Rahman ৩ এপ্রিল, ২০২১, ২:০৪ এএম says : 0
      You are correct
  • salman ৩ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৫৭ এএম says : 0
    Bangladesh na ki Unnon Sil desh, Unnon er Roll Model? World Jake Follow kore? Dash naki Canada, Singapor?? Ata holo desh'er ashol Chitro !!!!
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহীম ৩ এপ্রিল, ২০২১, ৮:৩৭ এএম says : 0
    করোনা বেড়ে যাওয়ার মূল কারন বাংলার জনগণের অন্যায় ও জুলুম চোখ বুজে সহ্য করা ও স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ না করা।
    Total Reply(0) Reply
  • fastboy ৩ এপ্রিল, ২০২১, ৯:৩২ এএম says : 0
    সময় এসে গেছে,সরকার পরিবর্তন হওয়ার, আর সেটা জনগন কে করতে হবে। আইন ব্যাবস্থা দুর্বল,সাস্থ ব্যাবস্থা নিন্মমানের,খাদ্যদ্রব্যের মুল্য আকাশ সমান,নিশ্চই সে সরকার জনগন চাইবে না।হাসপাতালের অবস্থা ভয়াবহ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ