Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌসুমি রোগের প্রকোপে হাসপাতালে হুড়োহুড়ি

তীব্র গরমে সর্দি-কাশি-জ¦র গলাব্যাথা ডায়রিয়া হঠাৎ বৃদ্ধি : করোনার সন্দেহ-আতঙ্ক

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

অহেতুক ভিড়, হুড়োহুড়ি, কোলাকুলিতে আক্রান্ত বাড়বেই। সন্দেহ হলেই করোনা টেস্ট করান : স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি প্রফেসর ড. এম এ ফয়েজ

চৈত্রের খরতাপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ। বাতাসে যেন মরুর আগুনের হলকা। তাপমাত্রা ৩৮-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের তাপমাত্রাও ২৭ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে উঠে যায়। দিনে-রাতে গা-জ¦লা গরম। একটানা সাড়ে ৪ মাস যাবত অনাবৃষ্টি-খরা পরিস্থিতিতে বিরাজ করছে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতিকর বৈরী আবহাওয়া। শুষ্ক-রুক্ষ, তপ্ত-খটখটে আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলোবালি ও ধোঁয়ায় দূষণমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচন্ড গরমে, বায়ুদূষণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট। শহর-গ্রাম-গঞ্জে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়া।

সেই সাথে করোনাভাইরাস মহামারীর সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছেই। অন্যদিকে তীব্র গরমে সর্দি-কাশি-জ¦র, গলাব্যাথা, মাথাব্যাথা, টনসিল ও ফুসফুসের জটিলতা, হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়া, চর্মরোগ, রক্তচাপের তারতম্য ইত্যাদি মৌসুমী রোগব্যাধিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে হুড়োহুড়ি করছেন রোগী এবং তাদের স্বজনরা। জেলা-উপজেলা, ওয়ার্ড-ইউপি পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, বেসরকারি ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারেও বাড়ছে রোগীর ভিড়।

তারা বেশিরভাগই হাসপাতালে ছুটছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ, ভীতি-আতঙ্ক নিয়েই। কোনটা করোনা? কোনটা মৌসুমী রোগ? সব মিলিয়ে সর্বস্তরের জনমনে বিভ্রান্তি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এরফলে হাসপাতালসমূহে ওয়ার্ড কিংবা কেবিনে কোন শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চমেক হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা-শিশু জেনারেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ইউএসটিসি হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, চসিক জেনারেল হাসপাতালসহ চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা-উপজেলার হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে এখন রোগী ও স্বজনদের ভিড়ে বেহাল অবস্থা।

এ বিষয়ে প্রখ্যাত মেডিসিন ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এম এ ফয়েজ গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবকে বলেন, গরমকালে মৌসুমী রোগব্যাধি থাকেই। তবে এখন করোনার কারণে মানুষজন বিভ্রান্তিতে ভুগছে। আমি বলবো, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বদহজমী খাবার খেলে ডায়রিয়া তো হবেই। নিজেরা নিজেদের মতো করেই করোনা সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে হবে। অহেতুক হাসপাতালে ভিড়, হুড়োহুড়ি, কোলাকুলি করলে সংক্রমণ বাড়ছে, আরও বাড়বেই। সন্দেহ হলেই করোনা টেস্ট করতে হবে। আর টেস্ট হলেই প্রায়ই দেখা যাচ্ছে রিপোর্ট পজেটিভ।

তিনি বলেন, মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েই যেন খুব সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। আর চারদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির যে পরিস্থিতি, তা খারাপ অবস্থারই দিক-নির্দেশ করে। মানুষের জীবনধারায়, অভ্যাসে, চরিত্রের যে পরিবর্তন দরকার ছিল তা হয়নি। কিন্তু ভাইরাসের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য আরও খারাপের দিকেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এর সূক্ষ্ম এবং চলমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নুর মোহাম্মদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অতিরিত্র গরম ও খরার মৌসুমে সর্দি-কাশি-জ¦র, গলাব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার মতো মৌসুমী রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এসব মৌসুমী রোগের সাথে করোনার উপসর্গের মিলও রয়েছে। এ অবস্থায় এন্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহারে সাবধানতা দরকার। করোনা অথবা মৌসুমী রোগ কিনা এ নিয়ে সন্দেহ কিংবা ভয়-আতঙ্কে না থেকে বরং উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাসপাতালে অহেতুক ছোটাছুটি ও ঝুঁকি নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে জরুরি ক্ষেত্রে হাসপাতালে যেতে হবে। প্রয়োজনে করোনা টেস্ট করাতে হবে।

তিনি বলেন, হাসপাতাল-ক্লিনিকে অকারণে ছোটছুটি করলে গুরুতর অসুস্থ বিশেষ করে করোনায় আক্রান্তদের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। তাছাড়া এতে করে সুস্থদেরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। তিনি মৌসুমী রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষায় বেশিহারে বিশুদ্ধ পানি পান, বাইরে গেলে ধুলোবালি দূষণ ও মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন।

চট্টগ্রামেও করোনায় সংক্রমণ, আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গতকাল চট্টগ্রামে করোনায় আরও ২ জন মারা গেছেন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১১৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত ২৮৭ জন। শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ২৮৩ জন। গতকাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে আরও জানা গেছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবসহ চট্টগ্রামের ৬টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে মহানগরীতে ২৬৭ জন এবং উপজেলায় ২০ জন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার ৩ দিন পর চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।



 

Show all comments
  • তানিম আশরাফ ২ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 1
    করোনার মধ্যে মৌসুমি রোগী আরও দুর্ভোগ তৈরি করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • রাইহান শেখ ২ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
    সরকারকে আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • ব র্নী শেখ ২ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
    স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি করে। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • বাকী বিল্লাহ ২ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি আমাদের হেফাজত করো।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিকুল ইসলাম ২ এপ্রিল, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
    হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MOHAMMED+ISMAIL+KABIR+AHMED ২ এপ্রিল, ২০২১, ১:৩৮ এএম says : 0
    ALLAH NAFORMANI KORLE ASMANI GOJOB ASHE EI KOTATA QURANE ACE ALLAH THEKE QHOMA & HELP NA CHAHIYA ONNO KICHUTE KAJ HOBE AMAR MONE HOI NA
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোগ

১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ