Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশজুড়ে খরার দহন

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৬ এএম

টানা পাঁচ মাস খরার দহন অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে সারা দেশ। ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ফেটে চৌচির। বিশুদ্ধ পানির কষ্ট-দুর্ভোগে পড়েছে শহর-গ্রাম-গঞ্জের কোটি মানুষ। সেচের পানির সঙ্কট তীব্র। বোরো নিয়ে দিশেহারা কৃষক। বিপাকে লাখো মাছচাষি। গত ডিসেম্বর-২০২০ থেকে গেল মার্চ পর্যন্ত টানা ৪ মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৪ শতাংশই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অর্থাৎ বলতে গেলে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও ঝরেনি। আবার প্রচন্ড গরমের মধ্যেই এ সময়ে হঠাৎ করে হয় শিলাবৃষ্টি, দমকা হাওয়াসহ বজ্রপাত-বজ্রবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়, সামুদ্রিক নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় ভারতীয় ঢলে ও অতিবৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। চলমান খরতপ্ত আবহাওয়ার সঙ্গেই সামনের দিনগুলোতে চতুর্মুখী দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চোখ রাঙাচ্ছে।

চলতি এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার আবহাওয়া বিভাগের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় জানা গেছে, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি থেকে প্রবল কালবৈশাখী ঝড় এবং দেশের অন্যত্র ৫ থেকে ৭ দিন মাঝারি থেকে মৃদু কালবৈশাখী ঝড়, বজ্র ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

এ মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে) এবং সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এপ্রিলের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতীয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে নদ-নদীর পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে গত মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশই কম বৃষ্টি তথা বৃষ্টিবিহীন অবস্থা অতিবাহিত হয়। এরআগে গত ফেব্রæয়ারি মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৯৯ শতাংশ কম বৃষ্টির রেকর্ড হয়। গত জানুয়ারি মাসে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ৯৭.৭ ভাগই কম বৃষ্টি হয়।

গত ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৯৮.৮ শতাংশই কম। অর্থাৎ টানা চার মাসে দেশে বাস্তবে বৃষ্টিই জরেনি। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা ও পূবালী বায়ুর প্রভাব ও সংযোগের অভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বর্ষার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমন আগামী জুন মাস নাগাদ। গত মার্চ মাসে দেশে দিনের সর্বোচ্চ ও রাতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১.৭ এবং ১.১ ডিগ্রি বেশিই ছিল। গতকাল বিকেলে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।

অসহনীয় তাপদাহ বৃদ্ধির আভাস
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের দুয়েক জায়গায় বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ ১১ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া নিকলি, নেত্রকোনা, ফেনী, সিলেট, কুতুবদিয়ায় হালকা বৃষ্টি ঝরেছে। কোথাও কোথাও বজ্রসহ সাময়িক বৃষ্টি ঝরে। তবে দেশজুড়ে খরা ও তাপদাহ পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ঈশ^রদীতে ৩৮.৮, রাজশাহীতে ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন উত্তর জনপদের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া ও ডিমলায় ১৮.৮ ডিগ্রি সে.।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ