পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য তুলে বিক্রির আগ্রহ নেই খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ ডিলারদের। নামে-বেনামে সুলভমূল্যে পণ্য উত্তোলন করে তা কালো বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে অধিক লাভে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণেই খুলনায় টিসিবি থেকে কোনো সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। সুলভমূল্যে টিসিবি’র পণ্য কিনে অধিক মুনাফার লাভে অসাধু ডিলারদের মাধ্যমে তা খুব সহজেই চলে যাচ্ছে কালোবাজারে। গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত খুলনার একাধিক বাজারে অভিযান চালিয়ে টিসিবি’র ১৮৪ বোতল (কন্টেইনার) সয়াবিন এবং ১০ বস্তা চিনিসহ ৭ জন কালোবাজারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পণ্যের অস্থিতিশীল বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেয়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) উদ্যোগ খুলনায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মহানগরী ও খুলনা জেলাসহ বিভাগের ১০ জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ি এবং বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলা মিলে খুলনা অঞ্চলের ৫৩৬ ডিলারের মধ্যে অধিকাংশ ডিলারেরই পণ্য বিক্রি করার জন্য পৃথক কোনো দোকান নেই। হাতে গোনা কয়েকজন ডিলারের দোকান থাকলেও তাতে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির সাইনবোর্ড নিয়মিত টানান না তারা। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য টিসিবি যেসব পণ্য ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে সেগুলো সাধারণ ক্রেতারা কোথায়, কার কাছ থেকে কিনবেন তা খুঁজে পান না। খুলনায় টিসিবি’র ডিলারদের নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারি দলের একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের কারণেই সাধারণ মানুষের হাতে টিসিবির কোনো পণ্য যাচ্ছে না। আগেই তা কালোবাজারে চলে যাচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। ব্যবসায়ীদের নানান ফন্দি-ফিকির ও কূটচালে সরকারের নেয়া বিশেষ পদক্ষেপ কোনো কাজেই আসছে না খুলনায়। নগরীর কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চেয়েছেন খুলনায় এবার ন্যায্যমূল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে কিনা। কারণ টিসিবির পক্ষ থেকে প্রচারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে এ খবর পৌঁছায়নি। উপজেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির চিত্র তো আরও ভয়াবহ। উপজেলার ক্রেতা সাধারণ টিসিবি কর্তৃক সরকারের এ ধরনের ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্যোগের খবর জানেনও না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদারসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা হলো- মহানগরীর ময়লাপোতা মোড়ের অদূরে ফারাজীপাড়া রোডস্থ টিসিবির ডিলার মেসার্স আকবর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলীর ভাই মো. আল-আমিন শিকদার (২৫), নগরীর দৌলতপুর বাজারের হানান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আসাদুজ্জামান কাজল (৪০), একই বাজারের রশিদ স্টোরের মালিক মো. আব্দুল্লাহ (৩০), ইমরান স্টোরের মালিক মো. আলমগীর (২৮), খালিশপুরস্থ চিত্রালী সুপার মার্কেটের বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মো. বাদল (৪০), চিত্রালী সুপার মার্কেটস্থ টিসিবির ডিলার মো. ফুলমিয়া (৫৫) এবং মোস্তফা স্টোরের মালিক গোলাম মোস্তফা (৫৫)। আটককৃতদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে খোলা বাজারে বিক্রির তেল ও চিনি উদ্ধার করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম জানান, একজন ডিলার হিসেবে টিসিবি থেকে সর্বোচ্চ ৫ কার্টুন তেল উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ফারাজীপাড়া রোডস্থ টিসিবির ডিলার মেসার্স আকবর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪১ কার্টুন, অর্থাৎ ১৬৪ বোতল সয়াবিন তেল।
যা তিনি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার গোডাউনে মজুদ কওে রেখেছিলেন। চিত্রালী সুপার মার্কেটস্থ টিসিবির ডিলার মো. ফুলমিয়া তার প্রতিষ্ঠানে খোলা বাজারে বিক্রি সংক্রান্ত কোনো ব্যানার/কাপড় না ঝুলিয়েই সাধারণ দোকানের মতো মালামাল বিক্রি করছেন। এমনকি অভিযান টের পেয়ে তিনি দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়া আটককৃত অন্যরা খোলা বাজারে বিক্রির মালামাল কালোবাজারে কিনে অতিরিক্ত মূল্যে খুচরা বাজারে বিক্রি করছিলেন। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থ নেয়া হচ্ছে। টিসিবি’র খুলনা আঞ্চলিক প্রধান মোঃ রবিউল মোর্শেদ বলেন, মনিটরিং-এর জন্য জনবল কম। নেই নিজস্ব কোনো যানবাহন। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী ইচ্ছা থাকলেও সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়ে উঠে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।