Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লবণ সংকটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়

প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ টি এম রফিক, খুলনা থেকে : গত দু’মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি লবণের মূল্য বেড়েছে ৬০০ টাকা। এবারের কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের খরচও বেড়ে যাবে। গেলবারের চেয়ে কম মূল্যে চামড়া কিনতে উদ্যোগ নিচ্ছে আড়তদার। লবণের উচ্চমূল্যের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খুলনা ও যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোরবানির চামড়ার আড়তে। এমনিতেই গেল বছরের কোরবানির পর থেকে চলতি বছরে এ অঞ্চলের চামড়ার আড়তগুলোতে মন্দাভাব বিরাজ করছে। গেলবারের টাকা ট্যানারির কাছ থেকে সম্পূর্ণ আদায় হয়নি। চলতি মূলধন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত এখানকার আড়তদাররা। এর মধ্যে বড় দুঃসংবাদ লবণের উচ্চ মূল্যে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, গেল কোরবানিতে স্থানীয় আড়তদাররা বাকিতে বিক্রি করেন। চলতি মূলধন না থাকায় ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে কিনতে হয়। সারাবছরই মন্দাভাব ছিল এ অঞ্চলের খালিশপুর, দৌলতপুর, শেখপাড়া, পাটকেলঘাটা ও যশোরের রাজারহাট চামড়া বাজারে। এ বছরের ঈদুল ফিতরের পর থেকে বস্তাপ্রতি লবণের (শিল্প লবণ) মূল্য ছিল এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৬৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। লবণের এই মূল্য বৃদ্ধিতে শঙ্কায় রয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়বে এবারের কোরবানির চামড়ার বাজারে। বর্তমানে প্রতিটি গরুর চামড়ার মূল্য বড় সাইজের এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০টাকা, মাঝারি সাইজের ৬৫০টাকা এবং ছোট সাইজের ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর প্রতিটি ছাগলের চামড়া ৩০টাকা। গত বছরের তুলনায় দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। লবণের মূল্য বৃদ্ধিতে চামড়ার মূল্য আরও কমে যাওয়ার শঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ীরা। সংগ্রহের ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে না পারলে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। সংরক্ষণের জন্য প্রতিটি গরুর চামড়ায় লবণ লাগে ১০ কেজি এবং একটি ছাগলের চামড়ায় লাগে ২ কেজি। লবণ ছাড়া চামড়া সংরক্ষণ সম্ভব নয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গত বছর কোরবানিতে ১৫-২০ হাজার গরুর চামড়া এবং ১২-১৫ হাজার ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছিল স্থানীয় আড়তদাররা। এবারে এর থেকে তুলনামূলক আরও বেশি চামড়া হওয়ার আশা থাকলেও খরচের ভয়ে অনেকেই চামড়া কিনতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। এসব চামড়া যশোরের রাজারহাট, নাটোর, ঢাকার হাজারীবাগ ও নওয়াপাড়ার এসএএফ ইন্ডাষ্ট্রিতে বিক্রি হয়ে থাকে।
খুলনা চামড়া ব্যবসায়ী শ্রমিক লীগের সভাপতি ও আমান লেদার কমপ্লেক্সের মালিক আমানুল্লাহ আমান জানান, এখনই লবণ সঙ্কট। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের মূল্য আরও বৃদ্ধি করতে পারেন। বিশ্বমন্দা এরপর আবার লবণের মূল্য বৃদ্ধিতে কোরবানিতে কাঁচা চামড়ার মূল্য আরও কমে যাবে। এতে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। চামড়া সংরক্ষণে প্রচুর লবণের দরকার। এভাবে মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকলে চামড়া ব্যবসায় অনেক লোকসানের শিকার হতে হবে। এমনিতেই এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের ট্যানারী মালিকদের কাছে গত দুই বছরের বকেয়া হিসেবে অন্তত ১০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সুমন লেদার কমপ্লেক্সের মালিক সুমন দাস জানান, লবণের মূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এবাওে লোকসানের বোঝা টানতে হবে। এমনিতেই গত বছরের টাকা অনেক বাকি পড়ে আছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে বলে তিনি অভিমত দেন।
বৃহত্তর যশোর জেলার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মুকুল জানান, সরকারিভাবে লবন আমদানির ঘোষণা দেয়ায় লবণের দাম কমতে পারে। তবে এটি আরও নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে নইলে চামড়া ব্যবসায় হুমকীর মুখে পড়বে। স্থানীয়দের চলতি মূলধন সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে। গতবারের টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। ফলে চামড়া পাচারের শঙ্কাও থেকেই যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লবণ সংকটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ