পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে। আর সুন্দরবন ধ্বংস হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা চিরস্থায়ী হবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভারতকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে। ভারতের সাধারণ জনগণ ও বিশেষজ্ঞরা রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। কিন্তু ভারতীয় কোম্পানি এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের অংশের সুন্দরবন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তাই এ প্রকল্প হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শত্রুতা চিরস্থায়ী হবে।’ কথাগুলো বললেন তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আর সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে, এটা নিশ্চিত জেনেই আমরা সুন্দরবন রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। দেশের জনগণের সম্পদ সুন্দরবন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু রামপাল প্রকল্প নিয়ে ১০টি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী প্রোকৌশলীকে দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’ গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিলিয়া মিলনায়তনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ারের করা ওই ১০টি প্রশ্নের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষে শরীফ জামিল।
সুলতানা কামাল বলেন, এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণের পেছনে বহু ব্যক্তির নিজস্ব স্বার্থ জড়িত। তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থই সরকারকে দিয়ে পূরণ করতে চাইছে। আর এজন্য সরকারের কাছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের কোনো গুরুত্ব নেই। আমাদের আন্দোলন নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে প্রচার করা হচ্ছে ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ এমন মন্তব্য। দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সুন্দরবন রক্ষা করতে চাই। এ ধরনের কথাবার্তা সংবিধানবিরোধী। কারণ সংবিধানে বাংলাদেশের সবার সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুন্দরবন বাংলাদেশের সব মানুষের সম্পত্তি। তাই এ নিয়ে কথা বলার অধিকার আমাদের আছে। শুধু অধিকার নয়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের উচিত সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে শরিক হওয়া। তিনি বলেন, প্রবাসী এক ইঞ্জিনিয়ার যে ১০টি প্রশ্ন করেছেন এবং রামপাল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যে উত্তর দিয়েছে, তা অর্ধসত্য ও ভুল। অপ্রাসঙ্গিক, বিভ্রান্তিকর ও পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যে জবাব দিয়েছে, তা অবৈজ্ঞানিক ও অপর্যাপ্ততাভিত্তিক। ‘রামপাল নিয়ে আপনাদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে নানা পাল্টা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, এর সমাধান কোথায়’ এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের কথাগুলো তুলে ধরতে হবে। যেমন আমরা একসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি তুলেছিলাম। এ নিয়ে আন্দোলন করেছি। তখন এ নিয়ে কথা বলা অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রামী জীবন, রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন তুলছি না। বরং আমরা তার অবস্থানকে সম্মান করি। সুন্দরবন নিয়ে আমরা আমাদের মতগুলো তুলে ধরছি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, রামপাল প্রকল্পে সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছি। কিন্তু কই, আমাদের প্রশ্ন নিয়ে সরকারের তো কোনো আলোচনা দেখিনি। এক প্রবাসী প্রকৌশলী যে ১০টি প্রশ্ন তুললেন, সঙ্গে সঙ্গে রামপাল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে ওই ১০ প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলা হলো যে তারা ওই ১০ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্প তৈরি করবে। আর সরকার থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হলো। এই পুরো ঘটনাটি আমার কাছে সাজানো নাটক বলে মনে হয়েছে। তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, এ সরকার ঢাকার চারপাশে নদীগুলো রক্ষা করতে পারছে না। ছোটখাটো শিল্প প্রতিষ্ঠানের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তারা সুন্দরবন কীভাবে রক্ষা করবে? সুন্দরবন রক্ষার ব্যাপারে আমরা কীভাবে তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারি, এ প্রশ্ন তো আমরা করতেই পারি। যে ডাক্তার ছোটখাটো অপারেশন করতে গিয়ে রোগী মেরে ফেলেন, সেই ডাক্তার জটিল অপারেশন করে রোগী সুস্থ করে ফেলবেন এমন আস্থা তো আমরা রাখতে পারি না। তিনি আরও বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কারণে শুধু সুন্দরবনই নয়, রামপাল কিংবা বাগেরহাটের জনগণও ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এ সরকার কাঠকয়লা আর খনিজ কয়লার মধ্যে পার্থক্য বোঝে না। ভারতের সাধারণ জনগণ ও বিশেষজ্ঞরাও রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতির কথা স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। যার কারণে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা যায়নি। কিন্তু ভারতীয় কোম্পানি এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের অংশের সুন্দরবন ধ্বংসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তাই এ প্রকল্প হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শত্রুতা চিরস্থায়ী হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।