Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : দেশের ১৭ কোটি মানুষ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হবে

রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মোদি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাহেন্দ্রক্ষণে পা রাখল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ সেই অতিকাক্সিক্ষত ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ; আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশের। ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্যদিয়ে উদিত হয় সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত একখন্ড বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই দিনটিকে ঘিরে দেশের ১৭ কোটি মানুষের রয়েছে অনেক দুঃখ-কষ্ট-বেদনা; উচ্ছ্বাস, আবেগ, অনুভ‚তি আর আনন্দবেদনার মিশ্রণ। অনেক ত্যাগ, অনেক সংগ্রাম, অনেক রক্তের বিনিময়ে এসেছে এ স্বাধীনতা। স্বাধীনতার লক্ষ্যে যুদ্ধের মযদানে একাত্তুরে যে সূর্যসন্তানরা দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন; প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন; সেসব বীর সূর্য সন্তানদের জানাই বিনম্র অজস্র সালাম আর শ্রদ্ধা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছরটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অন্যান্য গৌরবের বছর বটে। এ বছরই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। ফলে এবার দিবসটি উদযাপনে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এর সাথে সাফল্যের আরো একটি নতুন পালক যোগ হয়েছে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে’ জাতিসংঘের চ‚ড়ান্ত সুপারিশ। অথচ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দিয়েছিল মার্কিন রাষ্ট্রদূত হেনরি কিসিঞ্জার।

হাঁটিহাঁটি পা-পা করে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০টি বছর পার করল বাংলাদেশ। আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ২০২১-এর বাংলাদেশ আজ অন্য রকম এক বাংলাদেশ। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্ব নেতাদের কারো কারো মতে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’, কারো মতে, ‘উন্নয়নের রোল মডেল, কারো মতে, ‘অফুরন্ত সম্ভাবনার’ এক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতে আমরা এখন অন্যরকম এক বাংলাদেশকে দেখছি।

বাংলাদেশের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সময় নেই। শুধুই এগিয়ে চলছে- চলবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে অতিমারির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানী, ভারতসহ বিশ্বের ধনী দেশগুলোতেও অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলা সক্ষমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বে ২০তম। এ অভ‚তপূর্ব অগ্রগতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকগুলো আমাদের সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। উন্নয়নের এ ধারা সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে অভাবিত উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ফলে।

এক সময়ের দারিদ্র্য আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। গত একযুগ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আর অগ্রগতির নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকরণীয় নেতৃত্বে খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারে থাকা এবং উন্নয়নমুখী অর্থনীতি নিয়ে কাজ করায় প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছে। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এই মহান উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে, আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং একটি মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যাতে কেউ আমাদেরকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে অবহেলা করতে না পারে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অনেক প্রাপ্তি নিয়েই এবার উদযাপিত হচ্ছে অন্যরকমভাবে। এমন একটি সময়ে উদযাপন হচ্ছে, যখন বাংলাদেশসহ চারদিকে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের থাবা। এর মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধানসহ দেশি-বিদেশি অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং অংশগ্রহণ করেন। আজ ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদর মোদি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ শ্রদ্ধা নিবেদন ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশের ১৭ কোটি মানুষ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করা হবে।

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে জানা যায়, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে্ব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। জুলফিকার আলী ভুট্টোর কথামতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের তালবাহনা শুরু করেন। এ সুযোগ পাকিস্তান সরকারের হিংস্র সিদ্ধান্তে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

২৫ মার্চ কালরাতে সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি যে কোনো মূল্যে শত্রæর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে সে সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তার কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র তৃতীয় খন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ঘোষণা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয় ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি। যা তৎকালীন ইপিআর এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চ‚ড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও’ (শেখ মুজিবুর রহমান, ২৬ মার্চ, ১৯৭১)।

২০১৬ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবিধানের উপক্রমণিকায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে বাংলার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভায় এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করিয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক দেন এবং ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

উপক্রমণিকায় আরো বলা হয়েছে, রক্তপাতহীন স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সামরিক জান্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের সহিত ঢাকায় আলোচনায় বসেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করতে থাকে। এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী সিদ্দিক সালিক-এর উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থে যুদ্ধের বিবরণ তুলে ধরেছেন। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি উইটনেস টু সারেন্ডার গ্রন্থে লিখেন ‘এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল। যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিও’র সরকারি তরঙ্গের (ওয়েব লেন্থ) কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।’

সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি
মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।

আজ সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।

ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদকদল স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাদ্য বাজাবেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করেছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ফেডারেশন মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। অনলাইন, ই-মেইল, ডাকযোগে, ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সিনেমা হলসমূহে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। একইভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে আজ।

দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যতœ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। একইভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডবিøউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ দুপুর ২টা হতে ঐদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।



 

Show all comments
  • মোঃ দুলাল মিয়া ২৬ মার্চ, ২০২১, ১:২৫ এএম says : 0
    জনগণের টাকা খরছ কর মন বরে কর।
    Total Reply(0) Reply
  • Arif Ahmad ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:১৮ এএম says : 0
    জাপানের প্রেসিডেন্ট আসছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আসছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী আসছেন আরো আসবেন অন্যান্য দেশের প্রধানমন্ত্রী! তাদের বেলায় কোন আপত্তি নেই, এদেশের সাধারন মানুষের! আমাদের আপত্তি শুধু এই গুজরাটের কসাইকে কোনভাবে বাংলাদেশের মানুষ চায় না! এমনকি অনেক হিন্দুরাও আছে তারাও মোদিকে বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Snow Fall ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:১৮ এএম says : 0
    রাজনীতিবিদরা ভোটের আগে যে ধর্মীয় সফরে আসে না, রাজনৈতিক কারনেই আসে, এটা বোঝার জন্য রকেট সাইন্সের উপর পিএইচডি করা লাগেনা
    Total Reply(0) Reply
  • Umar Faruk ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:১৮ এএম says : 0
    ভারত নিজেদের স্বার্থ ছাড়া এই দেশ কে কিছুই দিবে না।তা বারবার প্রমানিত হয়েছে।এদের কাছে যত নত হবে ততো শোষিত হবে।এরা এই দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব নিয়েও গভীর ষড়যন্ত্রের ছক আঁকতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Aftab Rony ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:১৯ এএম says : 0
    ঘটনা তাহলে এই।।।। মোদী আমেরিকা গিয়ে ট্রাপ্প হয়ে ভোট চাওয়ার পাটি। সেহুত সামান্য বাংলাদের মানুষ জুতা মারতে চাইছে তাই বলে বাংলাদেশ সফর বাদদিবে এত গুলি মতুয়া ভোটার হারাবে।।।। হাজার জুতা মারলেও সে আসবে কারন সেতো তার ভোটের প্রচারে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসবে।।। হা হা হা।।।।।।।। আর আমার দেশের নেতারা তাতেও মহা খুশি।।।।। কারন তাদের দয়ায়তো চেয়ারটা আাছে।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Rahad Sarkar Rasel ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:২০ এএম says : 0
    নরেন্দ্র মোদি আমাদের পার্শবর্তী দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাদের আমাদের সাথে সীমান্ত, বাণিজ্যহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যেমন অনেক সম্পর্ক আছে , তেমনি সমস্যাও আছে। এভাবে তাকে বয়কটের ডাক দিয়ে দুই দেশের আন্তঃসম্পর্কীয় সমস্যাগুলোর সমাধান পাওয়া যাবে? কখনও না! বরং আপনারা আন্দোলন করেন - নরেন্দ্র মোদি এসে যেন আমাদের দুই দেশের মাঝে যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আছে, তা সমাধানের আশ্বাস দেন এবং আমাদের সরকারও যেন এ বিষয়ে তাদের সাথে গুরুত্বের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যান।
    Total Reply(0) Reply
  • Šūrjo Farīd ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:২৩ এএম says : 0
    ভারত থেকে বলছি, মুদিকে আপনারা রেখে দেন। আমরা আর ফেরত চাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Nakib Khan ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:২৩ এএম says : 0
    ধর্মীয় কারণের চাইতে রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বেশি বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনে তারা তাদের ইমেজ সৃষ্টি করতে চাইতেছে যে বাংলাদেশে বসবাসরত মতুয়া সম্প্রদায়ের সাথে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকদের কাছ থেকে ভোট আদায়ের চেষ্টা করা
    Total Reply(0) Reply
  • Shahadat Hossain ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:২৩ এএম says : 0
    হে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ অনেক হয়েছে আর সময় নাই ঘর হতে বেরিয়ে আস। তাগুত /বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই কর।
    Total Reply(0) Reply
  • রফিকুল ইসলাম ২৬ মার্চ, ২০২১, ২:২৪ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ ধরা পরে গেছি সমস্যা নেই মরতেও রাজি আছি তবুও মোদি আসতে পারবে না!
    Total Reply(0) Reply
  • ওমর ফারুক ২৬ মার্চ, ২০২১, ৮:১৯ এএম says : 0
    কসাই মুদি বাংলাদেশের শত্রু, আওয়ামীলীগের খালাত ভাই ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ