Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাহফুজ আনামের বিচার দাবিতে উত্তপ্ত সংসদ

প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ইংরেজি দৈনিক ডি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের গ্রেফতার, সাংবাদিকতা থেকে তাকে বহিস্কার এবং তার বিচারের দাবিতে উত্তপ্ত বক্তব্য দিয়েছে সংসদ সদস্য সদস্যরা। আওয়ামী লীগ, জাসদ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখা হয়। এসময় মাহফুজ আনামকে আলবদর আল শামসের সাথে তুলনা করা হয়। ১৫ আগাস্টের হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের ভূমিকার ন্যায়ই মাহফুজ আনাম ভূমিকা পালন করেছে বলে দাবি করা হয়।
রোববার দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে সংসদ সদস্যরা এসব বক্তব্য দেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারের শুরুতেই ফজলে নুর তাপস বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। মাহফুজ আনাম সেই পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন। উনাকে সাংবাদিকতা থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
এসময় তাপস ডেইলি স্টার পত্রিকা বন্ধের দাবি জানান। একই সাথে এই পত্রিকার অর্থের যোগানদাতাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
সংবিধানের ধারা তুলে ধরে শেখ ফজলে নূর তাপস সংসদে বলেন, উনার (মাহফুজ আনাম) কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে সংবিধানের আর্টিক্যাল-৭ এর উপ-২ এর আওতায় রাষ্ট্রদ্রোহের আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহিতার আওতায় পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এনে তার (মাহফুজ আনাম) বিরুদ্ধে বিচার ব্যবস্থা করার জন্য মহান সংসদের মাধ্যমে আমি দাবি উত্থাপন করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে আটক করার জন্য যে নীলনকশা ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে যে অবৈধ ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা ডেইলি স্টারে তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের দেওয়া মিথ্যা, বানোয়াট ও দুর্নীতিতে সাজানো গল্প ছাপিয়েছিল। মাহফুজ আনাম বলেছেন, ডিজিএফআই যে সকল সংবাদ পাঠাতো, তার সত্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ডেইলি স্টারের এডিটর থাকা সত্ত্বেও তিনি সেগুলো কনফার্ম করেননি। সকল মিথ্যা-বানোয়াট ও সাজানো গল্পগুলো অকপটে সেই ডেইলি স্টারে ছাপিয়েছেন।
তাপস বলেন, এই মিথ্যা গল্প ছাপানোর জন্য আমি মাহফুজ আনামের রেজিগনেশন দাবি করছি। এই পত্রিকা অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি করছি। মাহফুজ আনামের মতো লোকেরা অসাংবিধানিক সরকার কায়েম করা এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য সারাজীবনই ষড়যন্ত্র করে গিয়েছে। এটা আর কোনোভাবে বরদাস্ত করা যায় না।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সাংবাদিকতা মহান পেশা হলেও ডেইলি স্টার সম্পাদক দেশকে ধ্বংস করার জন্যই এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। যেটা জাতির কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তারা কেন ওই সময় এই ভূমিকা নিয়েছিলেন সেটিও স্পষ্ট।
তিনি বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেই জন্যই শেখ হাসিনা গ্রেফতার ও রাজনীতি থেকে বহিস্কারের চেষ্টাই করা হয়নি। তাকে হত্যার প্রচেষ্টাও চালানো হয়।
স্বপন বলেন, রাতে-দিনে তারা আমদের সবক দেয়। তাদের মনে খায়েশ তাদের গাড়িতে পতাকা উড়–ক। কিন্তু তারা উড়াতে পারছেনা কারণ তাদের পেছনে জনগণ নেই। তাই তারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত করে থাকে। তারা দেশ চালাতে চায়। কিন্তু উপায় না পেয়ে আমাদের সবক দেয়।
সরকারি দলের এই নেতা তাদের রাজনীতিতে এসে রাজনীতিবিদের সমালোচনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসুন রাজনীতির মাঠে। প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) মতো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় জনগণের সাথে মিশুন। সব স্তরের মানুষের কাছে যান। তারা যদি আপনাদের সমর্থন করে তবে দেশ চালাবেন। এসিতে বসে এসি গাড়িতে চড়ে সবক দিয়ে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করবেন না। চরিত্র হনন করতে চাইলে রাজনীতির মাঠে আসুন।
তিনি বলেন, যেহেতু তিনি ষড়যন্তের কথা স্বীকার করেছেন তাই তাকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, ১৫ আগস্টে যারা কলঙ্ক ঘটিয়েছিলেন তারাও দর্প করে বলেছিলেন এই ঘটনার বিচার করার কেউ নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেই ঘটনার বিচার করেছে। এবারেও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত করে স্বীকার করেছে তাই তাদের বিচার করা হোক।
জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, মাহফুজ আনাম মিথ্যার বেসাতি দিয়ে ঢালাও খবর ছেপেছেন। মাহফুজ আনাম পেপার ট্রায়াল করেছেন। তিনি (মাহফুজ আনাম) স্বীকার করেছেন, তাকে তো থুক্কু দিয়ে মাফ করা যায় না। তাহলে পাকিস্তানি হানাদারদেরও মাফ করা যায়, তাই এর বিচার দাবি করছি।
ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম বলেন, তারা ভেবেছিল সরকার জিয়া ও এরশাদের চেয়ে অধিক সময় হয়তো ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে। তাই তারা তাদের সমর্থন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এদের মাটি থেকে আল বদর আল শামস রাজাকাররা পাকিস্থানি বাহিনীকে সমর্থন করেছিল। যেহেতু সেই অপরাধের জন্য এখন তাদের বিচার করা হচ্ছে। মাহফুজ আনামও আলবদর আল শামসের মতো অপরাধ করেছে তাদের বিচার করা হোক।
আলোচনায় আরো অংশ নেন নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগম।
প্রসঙ্গত এর আগে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও মাহফুজ আনামের শাস্তি দাবি করেন। নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বৃহস্পতিবার দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় উল্লেখ করেন, মাহফুজ আনাম, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক, স্বীকার করেছেন যে, তিনি আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অপবাদ আরোপ করতেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির গল্প ছাপিয়েছিলেন। তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের সমর্থনে আমার মাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে এই কাজ করেছিলেন। একটি প্রধান সংবাদপত্রের সম্পাদক সামরিক বিদ্রোহে উস্কানি দিতে যে মিথ্যা সাজানো প্রচারণা চালায় তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
জয় লেখেন, আমার ব্যক্তিগত মত, তার মিথ্যা গল্পের উস্কানি আমার মাকে গ্রেফতার করিয়েছে এবং ১১ মাস তিনি জেলে কাটিয়েছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই মাহফুজ আনাম আটক হোক এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার হোক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাহফুজ আনামের বিচার দাবিতে উত্তপ্ত সংসদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ