পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সঞ্চালন লাইনে লিকেজ হওয়ায় রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মিরপুর, শ্যামলী, গ্রিনরোডসহ আরো কিছু এলাকায় চুলা জ্বলছে না। বিতরণ সংস্থা তিতাস এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে। মেরামত শুরু করেছে। রাত আটটার আগে সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। অনেক এলাকায় গ্যাস না থাকার কারণে রান্না-বান্না করতে পারেনি নগরবাসী। আবার অনেক পরিবারের লোকজন হোটেল থেকে চড়া দামে খাবার কিনে খেয়ে দিন পার করেছেন।
জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ শাখা-উত্তরের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার পারভেজ ইনকিলাবকে বলেন, আমি বাজার ছালেহেপুর ব্রিজের নিচে জনপথ বিভাগের সড়ক উন্নয়ন কাজের সময় তিতাস গ্যাসের উচ্চচাপ গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ মেরামত শুরু করেছে। রাতেই সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিতাসের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা মির্জা মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে জানান, ঢাকার আমিন বাজারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক উন্নয়ন কাজের সময় তিতাস গ্যাসের উচ্চচাপে গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, মিরপুর, গ্রিনরোডসহ বেশকিছু এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকবে। লিকেজ মেরামত কাজ সম্পন্ন হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সম্মানিত গ্রাহকদের অসুবিধার জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এদিকে হঠাৎ এই গ্যাস সঙ্কটে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের বাসিন্দা ফারজানা বেগম জানান, গ্যাস থাকবে না সেটা আগে মাইকিংক করত। কিন্তু মোহাম্মদপুর এলাকায় তা করেনি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ধানমন্ডী নামাবাজার এলাকার তাসলিমা আক্তার জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে ছিলাম। পরে হোটেল থেকে নাস্তা, ভাত ও সবজি নিয়ে ছেলে মেয়ের খাওয়া হয়েছে। তবে গ্যাসের কারণে ভাত সবজির ও মাছের দাম বৃদ্ধি করেছে হোটেল মালিকরা।
গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেশকিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ খুব কম। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই গ্যাস নেই। তিতাস গ্যাসের জরুরি নম্বরে ফোন করে জানা যায়, আমিন বাজারে মাটির অনেক গভীরে ১৬ ইঞ্চির একটি পাইপ ফেটে যায়। সড়কে কাজের সময় গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এই লিকেজ হয়। এর কারণে মিরপুরের কিছু এলাকা, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, কলাবাগানসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি বলেছে, দেশে দৈনিক ২ হাজার ৫শ’ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২ হাজার কোটি ঘনফুট। সে কারণে ক্রমানুসারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা এক নারীনেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঝে-মধ্যে সমস্যা হলে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু সেটি যদি বছরের পর বছর ধরে চলে সেটি কারো পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এখন তো শীত কাল নয় তারপরও এলাকায় সকল ঘরে গ্যাস থাকে না।
পেট্রোবাংলার একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শেভরন বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের একটি ক‚প থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ১০০ মিলিয়ন, অর্থাৎ গড়ে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। সেখানে এর চেয়ে থিকনেস (পুরুত্ব) পোরোসিটি (বালিকনার মাঝে ফাঁকা স্থান, যেখানে পানি, তেল ও গ্যাস থাকে) এবং পারমিয়াবিলিটি (প্রবাহের ক্ষমতা) অনেক বেশি হওয়া সত্তে¡ও হবিগঞ্জ এ/২ ও এ/৩ ক‚প থেকে দৈনিক ২০ হতে ৩৫ এবং গড়ে মাত্র ২৬ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন করছে। ২০০৯ সাল থেকে অনেক বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় একটি খাবার দোকান থেকে খিচুড়ি কিনে ফিরছিলেন সালেহা আক্তার। সঙ্গে তার দুই শিশুসন্তান। তিনি বলেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই দেখি গ্যাসের চাপ কম। কোনোরকমে রুটি ভাজতে পেরেছিলাম। দুপুরের রান্না করতে পারিনি।
মিরপুরের পীরেরবাগ, আগারগাঁও, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড ও কলাবাগান এলাকা ঘুরে খাবারের দোকানে মানুষের ভিড় দেখা যায়। জিগাতলায় সুলতান ডাইনস নামের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতার বেশ ভিড়। যাদের সঙ্গতি আছে, তারা রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনতে পেরেছেন। তবে নিম্নআয়ের মানুষের অনেককে খেতে হয়েছে রুটি ও কলা। তেমনই একজন পীরেরবাগের সাফিয়া আক্তার। তিনি বলেন, খন্ডকালীন গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে তিনি দুপুরের খাবার গৃহকর্তার বাসায় খান। তবে গতকাল গৃহকর্তার বাসায় রান্না হয়নি। তারও খাওয়া হয়নি। দোকান থেকে একটি রুটি ও একটি কলা কিনে খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। মেয়ের জন্যও তাই নিয়েছেন। মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায়ই শোনা যায় রাস্তায় কাজ করতে গিয়ে গ্যাসের পাইপ, পানির পাইপ ফেটে যায়। এগুলোর পেছনে অবহেলা, গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
মোহাম্মদপুর টাউন হলের জান্নাত থেকে চার প্যাকেট তেহারি কিনে ফিরছিলেন শিক্ষা অফিসের জামাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বললেন, সকাল থেকে বাসায় গ্যাস নেই। না খেয়ে অফিসে এসছি। দুপুরে স্ত্রী ফোন করে খাবার নিয়ে যেতে বলেছেন। মঙ্গলবার বেলা দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মানুষের ভিড়ে দোকানির কাছে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। শুধু শোনা যায়, আমারে দুই প্যাকেট’, আমাকে চার হাফ’ দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।