পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : ‘এত যে খোঁজখবর নেন, লেখালেখি করেন, তাতে তো কোনো ফল পাওয়া যায় না। আমরা মাঠে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে লাভবান হতে পারি না। আর বসে থেকে পকেট ভারি করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাদের সিন্ডিকেট ব্যবসা চলছেই। লাগাম টেনে ধরার কথা বলা হলেও বাস্তবে কখনই কেউ ব্যবস্থা নেয় না। যারা বন্ধ করবে তারা মাঠে নামেন না। কারা সিন্ডিকেট ব্যবসা পরিচালনা করে, কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তা জিজ্ঞাসা করে খামোখা সময় নষ্ট করেন না’Ñ আক্ষেপের সুরে এসব কথা বললেন সবজি ভা-ার হিসেবে পরিচিত যশোরের বারীনগর বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা নিশ্চিন্তপুর গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী। এ অঞ্চলে কোন নির্দিষ্ট মৌসুম নয়, শীত ও গ্রীষ্মে সমানতালে বারোমাসই রকমারী সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। দেশে মোট চাহিদার ৬৫ ভাগ সবজির যোগান হয় এই অঞ্চল থেকে। এখানকার সবজি উৎপাদক চাষি, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। শুধু সবজি নয়, ধান ও পাটসহ অধিকাংশ কৃষিপণ্যের পাইকারী বাজারে কারা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে লাভবান হচ্ছে তা ওপেনসিক্রেট। কোন প্রতিবাদ নেই। কৃষিপণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা না থাকায় কৃষক আর্থিকভাবেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমের রূপদিয়া, ভান্ডারখোলা, বারীনগর, খাজুরা, কালীগঞ্জ, কলারোয়া, গোপালপুর, ভাটই, গাড়াগঞ্জ ও শেখপাড়াসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের হাট চিত্র হচ্ছে, কৃষক ফসল উৎপাদনে বিরাট সফলতা আনতে সক্ষম হলেও কৃষিপণ্য হাটে বিক্রি করতে এসে থমকে যাচ্ছেন। তারা আর্থিভাবে লাভবান হতে পারছেন না। লাভবান হচ্ছেন কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসলে মধ্যস্বত্বভোগীরা। বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষক পাচ্ছেন না কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য। দিনে দিনে তাদের হতাশা বাসা বাধছে। অভাবগ্রস্ত ও দায়দেনায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ভিত। সবজি, পাট, ধান, রজনীগন্ধা উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টির অঞ্চলটির কর্মবীর কৃষকদের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে কোথায় কি সমস্যা, কিভাবে সমাধান করা যায়, এক ফসলের দাম দিয়ে পরবর্তী ফসল আবাদেও অন্তরায় কোথায়- তা সরেজমিন তদন্ত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকছে। অথচ এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা তারা সেটি করছেন না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতি বিশারদগণ বলছেন, কৃষিখাতে সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপে দেশে কৃষিজাত আয় বৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশ রয়েছে। কৃষিতে আসছে শতভাগ সাফল্যও। সরকারের নির্দেশনাও ছিল কৃষিনির্ভর তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুত করার। কিন্তু বাস্তবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সকল কর্মকর্তা একযোগে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হওয়া এবং সমন্বয়ের অভাবে কৃষকের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না। এবার ধানের মূল্য পায়নি। অনেক কৃষকের উৎপাদন খরচ ওঠেনি। ধান ওঠা মৌসুমে মূল্য একেবারেই কম ছিল। কিন্তু সাধারণ অভাবী কৃষকের পক্ষে ধান মজুত রেখে পরবর্তীতে মূল্য বাড়লে বিক্রি করা সম্ভব হয় না জরুরি দায়দেনা পরিশোধ এবং সংসার খরচ যোগাড়ের কারণে। পাটের মূল্যও পাওয়া যায়নি আশানুরূপ। জমি চাষ, বীজ বপন, পরিচর্চা, শ্রম ব্যয়, কাটা, পচন, ধোয়া, শুকানো, বাজারে তোলাসহ যাবতীয় খরচ ধরলে পাটচাষিদের খুব বেশী লাভ থাকে না পাট বিক্রি করে। জমি ফেলে রাখা একেবারেই লোকসান এ কারণেই তারা বারবার মার খাওয়ার পরও আবাদ ও উৎপাদ করে থাকেন।
কয়েকজন পাটচাষি অভিযোগ করলেন, ‘আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাট উৎপাদন করি, দেখি সোনালী স্বপ্ন, লাভ তো দূরের কথা লোকসান হয় প্রায় প্রতিবারই, এবারও লোকসানের পাল্লা ভারী হয়, এতে পাট আবাদ ও উৎপাদনে আগ্রহ কমে যাচ্ছে’। কৃষক ধানের উপযুক্ত মূল্য পাননি এবার। অনেক কৃষককে লোকসানে ধান বিক্রি করতে হয়েছে। সাধারণত কৃষিপণ্য উঠার সময় মূল্য পান না কৃষক। বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে শুধু ধান ও পাটের মূল্য নয়, সব কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচের সাথে হিসাব করে মূল্য নিধারণের সুযোগ নেই। তাছাড়া মাঠের মূল্য আর বাজার মূল্যের পার্থক্য বিরাট। সেজন্য আর্থিক ভিত নড়বড়ে হওয়ায় কৃষক পরিবারে হাসি নেই। তারা উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে দারুণ মনোকষ্টে ভুগছেন। আবার উপকরণের মূল্য বাড়ছে ঠিকই। সার্বিক দিক দিয়ে কৃষির গুণগত পরিবর্তন, আধুনিকায়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার বিষয়টি বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। তাছাড়া সরকারী উদ্যোগে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও আধুনিক কলাকৌশল, উন্নত বীজ সরবরাহ এবং চাষিদের জ্ঞান ও দক্ষতা নিশ্চিত করার বিষয়টি বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে।
কৃষকের কথা, কৃষি উপকরণের মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় কৃষিপণ্যের মূল্য কখনোই পান না তারা। কৃষকের কোন পণ্যের উৎপাদন খরচ কত, আর কত মূল্য নির্ধারণ করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না আবার ভোক্তাও ঠকবেন না- এসব তথ্য মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সরকারী উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থ সংরক্ষণ ও কৃষকদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হওয়ার ক্ষেত্রে সরকার কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে বলে হাটে মাঠে কৃষকদের মুখে অভিযোগ উচ্চারিত হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও বাজার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অমনোযোগিতা কৃষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। সরকার কৃষকদের স্বার্থে ধান ও চাল সংগ্রহ করে থাকে। তারও ন্যূনতম সুফল পান না কৃষকরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অথনীতিবিদদের কথা, খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ ছিল। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও গবেষণার ফসল মাঠে পৌঁছে দিয়ে কৃষিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার উপয্ক্তু পরিবেশও বিদ্যমান। অথচ কৃষিখাতটি পিছিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ভিত দুর্বল হওয়াটা অশনিসংকেত। গ্রামগঞ্জে কৃষির অর্থনীতির উপরই নির্ভরশীল সিংহভাগ মানুষ। কর্মবীর কৃষকরা রাজনীতি ও অর্থনীতির ঘোরপ্যাচ বোঝেন না। তারা চান চাষাবাদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা ও উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত মূল্য। শুধু কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না উঠায় কৃষকদের হতাশা বাসা বাঁধছে। প্রতিটি আবাদ মৌসুমে উৎপাদক চাষি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, মুনাফালোভী ও আড়তদারদের হাতে জিম্মি থাকেন। ফসলের বাম্পার ফলনের সুবিধা চাষি ও ভোক্তাদের চেয়ে তুলনামুলকভাবে বেশী পায় সিন্ডিকেট চক্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।