পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অতীত এবং ক্ষমতাগ্রহণের পরে ভারত জুড়ে যে ধর্মীয় সহিংসতা উস্কে দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশে মোদিকে স্বাগত জানানোর মতো কোনো পরিবেশ নেই। পীর সাহেব সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, মোদির আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাহার করে নিন। অন্যথায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক নেতার দ্বারা কলঙ্কিত করার দায় আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী ও সমকালীন জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আজ পুরানা পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, নরেন্দ্র মোদি ভারতে বৈষম্য, সংখ্যালঘুদের ওপরে অত্যাচার-নিপীড়ন, ধর্মীয় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মানুষকে পিটিয়ে মারা, কাশ্মীরের মানুষের স্বাধীনতা কেঁড়ে নেয়া এবং সিএ-এর মতো বর্ণবাদী আইন করে মানুষের নাগরিকত্ব হরণ করেছেন। একই সাথে তিনি প্রতিবেশিদের সাথে সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসী আচরণ করছেন। বাংলাদেশের সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা, বাংলার মানুষের প্রাপ্য পানি নিয়ে অবৈধ কারসাজি, কুটকৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিকূলে বাণিজ্য ঘাটতি জিইয়ে রাখা, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং আগ্রাসী বিনিয়োগ করে বাংলাদেশকে দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহনে বাধ্য করা; ইত্যাদি কারণে নরেন্দ্র মোদিকে বাংলার মানুষ স্বাগত জানাতে পারে না। নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হওয়ার নৈতিক যোগ্যতা রাখেন না।
বরং নরেন্দ্র মোদির মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই মাইলফলকে উপস্থিত থাকা স্বাধীনতার মূল চেতনার সাথে সাঙ্ঘর্ষিক। সেসব বিবেচনায় আমরা নরেন্দ্র মোদির আগমণের বিরোধিতা করছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রিত হতে পারেন না। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহায়তা করলেও বিগত ৫০ বছরে পারস্পরিক বিভিন্ন ইস্যুতে ভারত যেভাবে অসৎ প্রতিবেশি সুলভ আচরণ করেছে, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছে তাতে ভারতের সহযোগীতা ম্লান হয়ে গেছে।
পীর সাহেব বলেন, সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে তাদের দলীয় উৎসবে পরিণত করেছে। সরকার দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা দিয়ে জনতার মাঝে বিভেদ তৈরি করে রেখেছে। একটি জাতীয় আনন্দঘন মুহুর্তকে এভাবে দলীয়করণ করার নিন্দা জানাচ্ছি এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে সর্বদলীয় জাতীয় কমিটি গঠন করে এই উৎসবকে সার্বজনীন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, খন্দকার গোলাম মাওলা, আলহাজ আমিনুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আলহাজ আব্দুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, প্রিন্সিপাল ফজলে বারি মাসউদ, মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা শোয়াইব, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মাওলানা নেছার উদ্দিন, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, এডভোকটে শওকত আলী হাওলাদার।
পীর সাহেব বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এই ভূখ-ের মানুষ আজন্ম ধর্মপরায়ণ। ইসলাম এবং এখানকার মানুষ ধর্ম নিয়ে সহিংসতা বা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে সমর্থন করে না। একারণেই হাজার হাজার বছর ধরে এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ একত্রে বসবাস করেছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের শাল্লা অবধি নানা সময়ে কথিত সাম্প্রদায়িক হানাহানির কথা শোনা যায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে মুসলমান ও ইসলামপন্থীদের ওপরে দায় চাপানো হয়।
কথিত সাম্প্রদায়িক হানাহানির প্রত্যেকটি ঘটনায় কিছু মিডিয়াতে প্রচুর পরিমানে তথ্য বিকৃতির ঘটনা ঘটে এবং প্রতিবারই ইসলামপন্থীদের ওপরে দায় চাপিয়ে স্বার্থান্বেষীরা স্বার্থ হাসিল করতে চায়। শাল্লাতেও একই নাটকের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। অনতিবিলম্বে কায়েমী স্বার্থবাদী বলয়ের বাইরের উলামায়ে কেরাম, সংখ্যালঘু প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পেছনের স্বার্থান্বেষী অশুভচক্রকে খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করুন।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। প্রতিদিন দাম বাড়ছে। সম্প্রতি কোনো কোনো পণ্যের দাম অল্প দিনের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রমজানে সমগ্র মুসলিম দেশে নিত্যপণ্যের দাম কমানো হয়। আর বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর কুৎসিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এটা দুঃখজনক।
পীর সাহেব বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দেশের সকল ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু প্রথম দফা নির্বাচনে নানাস্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী এবং তাদের দলীয় মাস্তানরা আমাদের প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে মনোনয়ন জমা দানে বাধা, মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগসহ নানা রকম আচরনবিধি বিরোধী ও অগণতান্ত্রিক অপকর্ম করেই যাচ্ছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর আমাদের অনেক প্রার্থীকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের রাজনৈতিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সুশাসন এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই আনন্দঘন মূহুর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে কতিপয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন পীর সাহেব চরমোনাই। আগামী ২৬ মার্চ ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা-মহানগর, উপজেলা ও ইউনিয়নে পতাকা র্যালীসহ আলোচনা সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।