Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিম বঙ্গের নাম পরিবর্তন : বাংলাদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ কম

প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোবায়েদুর রহমান : গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার বিশেষ অধিবেশনে বিপুল ভোটাধিক্যে পশ্চিম বঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাব মোতাবেক এই প্রদেশটির নাম অতঃপর ইংরেজীতে হবে ‘বেঙ্গল’ এবং হিন্দিতে ‘বাঙ্গাল’ রাখার পক্ষে ভোট দেয়া হয়েছে। এখন পশ্চিম বাংলার নাম বাংলায় রূপান্তরিত হওয়া শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। নিয়ম মোতাবেক এই প্রস্তাবটি এখন ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভায় প্রেরণ করা হবে। লোকসভা পশ্চিম বঙ্গের বিধান সভার প্রস্তাবটি অনুমোদন করলেই এই প্রদেশটির নাম বদলে যাবে। তাই বলছিলাম যে, এটি এখন সময় এবং আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার। ইতোমধ্যেই এই প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দেয়ার জন্য ভারতীয় লোকসভার কাছে পাঠানো হয়েছে।
ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন ভারতের ২৯ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ডাকেন তখন মুখ্যমন্ত্রীদেরকে তাদের প্রদেশের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী বক্তব্য রাখার জন্য আহ্বান করা হয়। ইংরেজীতে ওয়েস্ট বেঙ্গলের আদ্যাক্ষর হলো ‘ডব্লিউ’। তাই বক্তব্য রাখার জন্য পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ডাক পড়ে সব শেষে। তখন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অনেকের আসন ফাঁকা থাকে। কারণ, তারা ইতোমধ্যেই বক্তব্য দিয়ে চলে গেছেন। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মমতা ব্যানার্জী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, যদি তার প্রদেশের নাম পরিবর্তন করে বাংলা রাখা হয় তাহলে সেই প্রদেশের আদ্যাক্ষর হবে ‘বি’। তাহলে তার ডাক পড়বে ২ নম্বরে। সে ক্ষেত্রে অবশিষ্ট ২৭ টি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা তার বক্তব্য শুনবেন।
দ্বিতীয় ভাষা উর্দু
ইত্যবসরে কলকাতায় আরেকটি কাজ করা হয়েছে। সেটি হলো পশ্চিম বঙ্গে উর্দুকে দ্বিতীয় সরকারী ভাষার মর্যাদা প্রদান। এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, ২০০১ এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি মোতাবেক পশ্চিম বঙ্গের যেসব এলাকায় ১০ শতাংশ বা তার বেশি মানুষ উর্দু ভাষায় কথা বলেন সেই সব এলাকায় উর্দুকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মন্ত্রিসভার সদস্য শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী বলেন, রাজ্যের উর্দু ভাষীদের একটি দীর্ঘকালের দাবি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পূরণ করা হলো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রাজ্যের উর্দু ভাষীদের কাছে নির্বাচনের পূর্বে ওয়াদা করেছিলেন যে, যদি তার দল আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতায় যেতে পারে তাহলে উর্দু ভাষীদের এই দাবি পূরণ করা হবে। ২০১৪ সালের মে মাসে নির্বাচনে বিপুল ভোটাধিক্যে মমতা ব্যানার্জীর দল জয়লাভ করে। এবং জয়লাভ করার পর মমতা উর্দু ভাষীদেরকে দেওয়া তার ওয়াদা পূরণ করলেন।
নাম পরিবর্তন ও বাংলাদেশ
রাজ্যটির নাম পশ্চিম বঙ্গ থেকে বাংলা বা বেঙ্গলে পরিবর্তন করা পশ্চিম বঙ্গের একান্ত ঘরোয়া ব্যাপার। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারীভাবে কোন বক্তব্য থাকার কথা নয় বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার কথা নয়। কিন্তু সরকারীভাবে কোনো বক্তব্য না থাকলেও বাস্তবে একটি সমস্যা দেখা যায়। সেটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান হলো ‘জয় বাংলা’। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশ সরকারের অফিসিয়াল শ্লোগান হয় জয় বাংলা। এই জয় বাংলা বোঝাতে অবশ্য বাংলাদেশকে বোঝানো হয়। অবশ্য পশ্চিম বঙ্গ যখন বাংলা হয়ে যাচ্ছে তখন জয় বাংলা বলতে যদি পশ্চিম বঙ্গকেও বোঝানো হয় তাহলে বাধে যত গোল। আরো একটি বড় সমস্যা আছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম লাইন হলো, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। রবীন্দ্রনাথের এই গানটির অন্তর্নিহিত অর্থে মমতা ব্যানার্জীর বাংলাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে এবং টেলিভিশনের বিভিন্ন প্রোগ্রামেও ঐ সঙ্গীতটি গাওয়া হয়। তখন অবশ্য পশ্চিম বাংলার কেউ গানটি গাওয়ার সময় সম্মান দেখিয়ে দাঁড়িয়ে যান না। কারণ, তারা এটিকে নেহায়েতই অনেকগুলি রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধ্যে একটি হিসেবে গেয়ে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে যখন এই গানটি সমষ্টিগতভাবে গাওয়া হয় তখন সেটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয়। তাই জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা নিজ নিজ আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যান। এখন পশ্চিম বঙ্গের নাম বাংলা হওয়ায় নতুন করে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় কিনা সেটি দেখার বিষয়।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে
বিএনপি জোট যদি কোনো সময় ক্ষমতায় আসে তাহলে এটি নিয়ে কোন সমস্যা বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে না। কারণ, বিএনপির দলীয় শ্লোগান হলো, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। বিএনপি যখন ক্ষমতায় যায় তখন তার অফিসিয়াল শ্লোগান হয় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। তাই বিএনপির শাসনামলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ব্যাপারে যেমন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ কোন সমস্যার সৃষ্টি করেনি, তেমনি পশ্চিম বঙ্গের নতুন নামকরণেও কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
নামকরণের ব্যাপারটি মৌলিকভাবে একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। পশ্চিম বঙ্গ তার নাম বাংলা রাখলেও যেমন বাংলাদেশীরা বিভ্রান্তির ফাঁদে পা দেবেন না, তেমনি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময়ও বাংলাদেশীরা অখ- বাংলাকে মনের অজান্তে হলেও বিবেচনায় আনবেন না। অখ- বাংলা নয়, খ-িত বাংলাদেশের মানচিত্রই তাদের হৃদয়ে সব সময় অঙ্কিত থাকবে।



 

Show all comments
  • সুমন ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:১৫ পিএম says : 0
    আমারও মনে হচ্ছে এগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি কোন অবকাশ নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইমন ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:১৭ পিএম says : 0
    লেখাটির জন্য লেখককে অসংখ্য মোবারকবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • bikash ৯ মার্চ, ২০২১, ৫:০৮ পিএম says : 0
    বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আশাকরি আমরা তিস্তার পানি পাব। তাই বিজেপি ক্ষমতায় আসা দরকার পশ্চিম বঙ্গে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশ্চিম বঙ্গের নাম পরিবর্তন : বাংলাদেশে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ কম
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ