পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাহাড়ের পর্যাপ্ত গরু গয়াল ছাগল নামছে সমতলে
শফিউল আলম : ফটিকছড়ির বড় বেতুয়া গ্রামের গৃহস্থী মাওলানা মীম হাবিবউল্লাহ নিজের গোয়ালে সযতেœ লালিত-পালিত উঠতি ‘বিরিষ’ (বৃষ) গরুর জন্য সাড়ে ৪শ’ টাকায় ৭ আঁড়ি ধানের কুঁড়ো কিনেছেন। প্রতিদিন রুটিন করে খাইয়ে গরুকে হৃষ্টপুষ্ট করে কোরবানির হাটে খুব ভাল দরদামেই বৃষ গরু বিক্রি করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তবে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করার বড়ি খাওয়াতে মোটেও রাজি নন তিনি। কক্সবাজারের পেকুয়ায় মানিক তার নিজের খামারে লালিত-পালিত ১৯টি বড়সড় গরু পালাক্রমে কোরবানির হাটে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটির গড় মূল্য এক লাখ টাকায় উঠবে বলে তিনি আশা করেন। এভাবে মানিক কিংবা মাওলানা হাবিবউল্লাহর মতো বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক গৃহস্থী ও খামারী কোরবানির জন্য নিজেদের গোয়ালে পালিত গরু নিয়ে প্রস্তুত। প্রতিদিন হাটেও নিয়ে যাচ্ছেন তারা। কোরবানির হাটে ভাল দামে বিক্রির জন্য গোয়ালে ‘বিরিষ’ বা বৃষসহ বিভিন্ন ধরনের গরু, মহিষ, ছাগল, কেউ কেউ শখ করে পাহাড়ি গোয়াল পালন করে বড় করেছেন। সর্বত্র গৃহস্থীর ঘরে গরু রয়েছে এখন পর্যাপ্ত। সেই গরু হাটে-বাজারেও আসছে পর্যাপ্ত হারে। কোরবানি পশুর কোথাও ঘাটতি বা কমতি নেই। আবার পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা থেকে পাহাড়ের পরিপুষ্ট ও মেদবিহীন গরু, গয়াল, ছাগল সমতলে আসছে পালে পালে। তাছাড়া কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ‘ভাল’ দাম পাওয়ার আশায় অন্য বছরের মতোই বেপারিরা প্রতিদিন কয়েকশ’ ট্রাকে করে গরু, ছাগল চট্টগ্রামের কোরবানি পশুহাটগুলোতে নিয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের ঈদুল আযহায় কোরবানিকে ঘিরে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে গরু, ছাগল, মহিষসহ কোরবানি পশুর জোগান রয়েছে খুবই পর্যাপ্ত। কোরবানি পশুর ঘাটতি হওয়ার কোন কারণ নেই। আবার দামও গত বছরের প্রায় সমান থাকতে পারে শেষ বাজার অবধি। গরু, ছাগল, মহিষের জোগান নিয়ে কোরবানি দাতা তথা ক্রেতা এবং বিক্রেতা কারও মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছায়া দেখা যাচ্ছে না। তারা মনে করেন, গত বছরের মতো এবারও ভারত থেকে গরু না এলেও কোরবানি পশুর ঘাটতি হবে না। বরং দেশীয় গরু, ছাগল, মহিষ দিয়েই কোরবানির চাহিদা বা প্রয়োজন পুরোপুরি মিটে যাবে। তাছাড়া অনেক গৃহস্থী বলেছেন, ভারতীয় গরু না এলেই বরং ভাল। কেননা ভারতীয় গরু এলে দেশীয় গৃহস্থীর সযতেœ লালিত-পালিত গরু হাটে ভাল দাম পাবে না। তাছাড়া ভারতীয় গরুর অবর্তমানে দেশীয় অগণিত খামারের স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তা খামারীরা কোরবানি পশুর ভাল দাম পেতে চান।
এদিকে সারাদেশের মধ্যে এককভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে তথা বন্দর নগরীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় সারা বছরে গরু জবাই হয় সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ‘চাটগাঁইয়া মেজবান (মেজ্জান)’, বিয়ে-শাদিসহ নানা উপলক্ষে সারা বছর প্রচুর গরু জবাই হয়। আর হরেক জাতের গরুর ভিড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো ‘রেড চিটাগাং’ হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের ‘লাল বিরিষের (বৃষ)’। তদুপরি কোরবানিতে ‘লাল বিরিষ’র কদর আরও বেড়ে যায়। চাটগাঁর মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো মাঝারি কিংবা বড় সাইজের ‘লাল বিরিষ’ কিনে কোরবানি দিয়ে থাকেন। এটা চট্টগ্রামে বলতে গেলে সামর্থ্যবান লোকদের ঘরে ঘরে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এতে করে কোরবানির হাটে ‘লাল বিরিষ’র চাহিদায় রয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র মতে, চলতি বছরে চট্টগ্রামে ৫ লাখ বা এর কিছু বেশিসংখ্যক কোরবানি পশুর প্রাক্কলিত চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রামে গতবছর ২০১৫ সালে ৪ লাখ ৯৪ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়। বর্তমান সময় পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে, চট্টগ্রামের কোরবানির পশুহাটে অন্ততপক্ষে ৫ লাখ অর্থাৎ চাহিদার সমসংখ্যক গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, গয়াল ইত্যাদি রয়েছে। ভারত থেকে কোন গরু না এলেও মিয়ানমার থেকে কিছু গরু আমদানি হচ্ছে। তবে এবার মিয়ানমারের গরু আসছে গতবছরের তুলনায় কম। পাহাড় থেকে পাহাড়ি গৃহস্থের গোয়ালে সযতেœ লালিত গরু ও গয়াল আসছে পর্যাপ্ত হারে। এতে করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোরবানি পশুর সঙ্কটের কোন কারণ নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পথে পথে বিভিন্ন অপকৌশলে চাঁদাবাজি, নীরব ও প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, হয়রানি এবং হাটে হাটে যথেচ্ছভাবে ‘খুঁটি বাণিজ্যের’ কারণে কোরবানি পশুর দাম বেড়ে যায়। এহেন চাঁদাবাজি ও হয়রানি কঠোরহাতে রোধ করা সম্ভব হলে কোরবানি পশুর দরদাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই থাকবে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দামও থাকবে সহনীয় পর্যায়ে। চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় হাটে-বাজারে এবং সড়কে চাঁদাবাজদের মাথাচাড়া দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বেপারীদের কাছ থেকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে গবাদি পশুর ৩০২টি স্থায়ী খামারে বছরজুড়েই গরু, ছাগল, গয়াল, মহিষ পালন করা হয়ে থাকে। এর বাইরে কোরবানি উপলক্ষে আরও প্রায় ৩ হাজার অস্থায়ী খামার গড়ে উঠেছে। গত ৬/৭ মাস যাবত এসব খামারে কোরবানির পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। তাছাড়া কোরবানি উপলক্ষে অসংখ্য গৃহস্থীর গোয়ালে গরু, ছাগল, গয়াল পালিত হচ্ছে। এতে করে স্থানীয়ভাবে কোরবানি পশুর বিশাল জোগান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর ঘাটতির কারণ নেই। চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ গরু, সোয়া ১ লাখ ছাগল এবং ৪০ হাজার মহিষ কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তাছাড়া আরও রয়েছে ভেড়া ও চাটগাঁর স্পেশাল পাহাড়ি গয়াল। গত মওসুমের মতো এবারও সব জাতের কোরবানির পশুকে ছাপিয়ে ‘লাল বিরিষে’র চাহিদা ও কদর সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে মনে করেন কোরবানিদাতা এবং বিক্রেতারা। কোরবানির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোরবানির হাট-বাজারগুলো দ্রুতই জমজমাট হয়ে উঠছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।