পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : কারখানার কাজ যারা ছেড়ে দিয়েছিল তাদের সবার বাড়ি গিয়ে দেখা করল সে। এমন সময় গেল যাতে রোশান তাদের কথা শুনতে না পায়। সবাই একমত হলো যে গ্রামের পুরুষেরা ঘুমিয়ে থাকাকালে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা এমন এক লোকের কাছে যাবে, যিনি তাদের কাজ করার পথে সৃষ্টি হওয়া বাধা দূর করতে পারবেন।
মেওয়াটি নারীদের দলটিকে তার বাড়ির আঙিনায় ঢুকতে দেখলেন। উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন তিনি। আর দু’মাস পরই স্থানীয় নির্বাচন। শীতের শেষে ভালুক যেমন শিকারের আশায় চাঙ্গা হয়ে ওঠে, তাকেও তেমনি চাঙ্গা মনে হয়। কয়েকদিন পর সেপ্টেম্বরের এক সকালে তিনি তার লক্কড়-ঝক্কর মার্কা মারুতি-জিপসি জিপে চড়ে বসলেন। সাথে কিছু লোক। সগর্জনে ছুটে চলার পর এক সময় জিপ গিয়ে থামে রোশানের বাড়ির সামনে। মেওয়াটি জিপ থেকে নামার পর তার সাথে আসা লোকেরা রোশানের বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে পড়ে অবস্থান নেয়। দড়ির খাটিয়ায় বসার পর দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। মেওয়াটি রোশানকে বলেন, আমি মনে-প্রাণে তোমার সাথে আছি। মৃত্যু পর্যন্ত তোমার পক্ষেই থাকব। রোশান বলে, আমি তা জানি। আমি মরব, কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব না। মেওয়াটি গ্রামের সব লোককে জড়ো করে বললেন, ভারতের সংবিধানে সবার সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। মেয়েদের কাজ করতে বাধা দেয়া যাবে না। আর গীতা ও তার বন্ধুদের ক্ষমা করে দিতে হবে।
মেওয়াটি তার পকেট থেকে ভাঁজ করা ৩ হাজার টাকা তুলে দেন রোশানের হাতে। গীতাদের অবাধ্যতা ভুলে যাওয়ার জন্য এ টাকা যথেষ্ট। রোশানকে বলেন, ওদের দিকে একটু খেয়াল রেখ।
পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রোশানের ভাই মন্দিরের বাইরে চিনি ছিটিয়ে দেয় যা একঘরে ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটায়। গীতা ও তার বন্ধুদেরকে জড়িয়ে ধরে অন্য মেয়েরা।
তবে ব্যাপারটা পুরোপুরি শেষ হল না। রাতে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিল। বাবার আপসকামিতায় প্রচন্ড ক্রুদ্ধ ধর্মেন্দর রোশানকে ঘাড় ধরে গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে।
দু’দিন পর রাতের বেলা খারখাউড়া পুলিশ পিপলি খেরা গ্রামে সহিংসতা ঘটার খবর পেল। ডিউটি অফিসার অঙ্কিত চৌহান গ্রামে এসে দেখলেন অল্প লোকই উপস্থিত আছে। তবে একদল মহিলাকে দেখতে পেলেন তিনি। তার মনে হল এরা ধ্বস্তাধ্বস্তি করেছে। তিনি তাদের মুখে আঁচড় ও কাটাকুটির দাগ দেখলেন, গুরুতর কিছু জখম নয়। কিন্তু এসেছেন যখন কিছু একটা করতে হয়। বেঁটে, উত্তেজনা প্রবণ এক লোককে আটক করলেন তিনি। গীতাদের অভিযোগে লোকটির নাম ছিল। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আধুনিক জীবন ধারা গ্রহণ করা জরুরি। তারপর তিনি তার দায়িত্ব পালন করার তৃপ্তি নিয়ে গাড়িতে উঠে থানার দিকে রওনা হলেন।
পুলিশের গাড়ির আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই গ্রামের বাইরের আখ ক্ষেত থেকে বেরিয়ে আসে ধর্মেন্দর, তার ভাইরা, চাচাতো ভাই ও চাচারা।
রাতে আাঁধারের চাদরে ঢাকা পড়ে গোটা গ্রাম। রাতে কয়েক ঘন্টা বিদ্যুতের বাতি জ¦লে। প্রতি ঘরে একটি মাত্র বাল্ব, টিমটিমে আলো।
প্রেমবতী দেখল প্রায় দু’ডজন লোক এগিয়ে আসছে। তারপর ইটের টুকরো নিক্ষেপ শুরু হয়। সে গীতা ও অন্য মেয়েরা একটি ছোট ঘরে আশ্রয় নেয়। সবাই মেঝেতে বসে। মোমবাতির আলোয় সবার ভীত মুখ দেখে প্রেমবতী। সে বলে, ওরা আমাদের চিহ্নিত করেছে।
পিংকি কাঁদতে শুরু করে।
গীতা তার সেলফোন থেকে অবিরাম মেওয়াটিকে ফোন করছিল। কিন্তু মেওয়াটির সাড়া মেলেনা। মাইল খানেক দূরেই তিনি থাকেন। পরে তিনি বলেন, ঐদিন রাতে তার ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে কোনো কল রিসিভ করা যায়নি।
সাব ইন্সপেক্টর চৌহান এক দিনে দু’বার একই জায়গায় যেতে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি বলেন, এ নাতরা সবাই মাতাল হয়ে থাকে। সে সময় তাদের ঠেলে নর্দমায় ফেলে দিলেও সেখানেই পড়ে থাকে। আর তাদের মহিলারা বেশি কথা বলে , এ আমার উপর হামলা করেছে, ও আমার উপর হামলা করেছে Ñ এই সব।
গীতাদের উকিল সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো দরকার নেই যিনি সংযম প্রদর্শনের নির্দেশ জারি করেছিলেন। কোনো কোনো সময় কোনো সম্প্রদায়কে তাদের ভিতরের মতপার্থক্য নিজেদেরই মিটিয়ে ফেলতে দেয়া উচিত। তাছাড়া ১৪০ কোটি লোকের দেশ ভারত। পুলিশ প্রতিজনের পিছনে দাঁড়াতে পারে না।
সেদিন রাতে যখন পরিষ্কার হল যে গীতাদের ভালো মত অবরুদ্ধ করা হয়েছে তখন ধর্মেন্দর ও তার সহযোগীরা চলে গিয়েছিল। তবে তাদের রোষের শিকার হয় গীতার স্বামী সঞ্জয়। পাশের বাড়িতে টিভির সিরিয়াল দেখছিল সে। সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি আসার পথে ধর্মেন্দরদের চোখে পড়ে যায় সে। তার মাথার পিছনে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত হানার পর জ্ঞান হারায় সে।
সঞ্জয়কে আঘাত করে দুঃখবোধ করেছে ধর্মেন্দর। সঞ্জয় যে ভালো লোক তা স্বীকার করে সে বলে, সে খারাপ লোক হলে আমরা বলতাম যে ঠিকই হয়েছে। কিন্তু আসলেই সে ভালো লোক। তবে এ আঘাতটা প্রয়োজন ছিল। কেউ আহত না হলে অন্যদের শিক্ষা হয় না।
সঞ্জয়ের আঘাত থেকে রক্ত ঝরেছিল বেশ। অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল সে। পুলিশ এসেছিল। তারা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল তাকে। পাঁচদিন ছিল সে সেখানে। এমনিতেই সে শান্ত ধরনে মানুষ। বাড়ি ফিরে এসে আাে চুপচাপহয়ে যায়। রাস্তায় বের হয় না ভয়েÑ যদি আবার কেউ হামলা করে। বলে, রাতের অন্ধকারে যারা মেরেছে তারা আবারো মারতে পারে।
গীতার মধ্যে আগের সাহস আর ছিল না। লোকে যখন তাকে সঞ্জয়ের কথা বলল সে বলল যে ছাদ থেকে পড়ে আঘাত পেয়েছে। অন্য মেয়েদের সাথে নিজেও ঘরে আটকা পড়ার কথা অস্বীকার করে সে। গ্রামে প্রভাবশালেিদ সাথে বিরোধ আর বাড়াতে চাইছিল না সে। সে বলল, তারা ক্ষমতাশালী। তারা শক্তিশালী। তারা আমাদের কুকুরের মত মেরে ফেলতে পারে।
সঞ্জয় যেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরে এল সেদিন বিকেলে পুুরুষ আত্মীয়দের নিয়ে মন্দিরের বাইরে দড়ির খাটিয়ায় বসে আড্ডা জমায় রোশান। সে বলে ফৌজদারি মামলা এড়াতে সঞ্জয়কে সে চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩ হাজার টাকা দেবে। আর পুলিশ যাতে ঝামেলা না করে সে জন্য তাদের দেবে ৪ হাজার টাকা। সবাই তাতে সম্মতি জানায়।
রোশান যে গ্রামের মেয়েদের কারখানা কাজে ফেরার অনুমতি দিয়েছিল সেটাও তার পক্ষে যায়। যদিও নাত মেয়েরা তাৎক্ষণিক ভাবে কাখানার কজে যোগ দিয়েছিল , কিন্ত পরে সব কারখানাই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কারণ হল চীন ভারতীয় মাংসের জন্য তার বাজার বন্ধ করে দিয়েছিল, আর ব্রাজিলের মুদ্রার মূূল্য ভীষণ ভাবে হ্রাস পাওয়ায় ভারতীয় মহিষের মাংসের চেয়ে তাদের দেশের মাংসই সস্তা হয়ে পড়ে। ফলে তাদের কারোরই আর কারখানার কাজে প্রয়োজন ছিল না।
রোশান ভারিক্কি চালে বলে, দেখÑ আমাদের সমাজে নারী নারীই, আর পুরুষ পুরুষই। এখানে এটাই রীতি। পুরুষদের মর্যাদা উঁচুতে, মেয়েদের মর্যাদা নিচুতে। আরো কোনো মেয়ে যদি এ নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে তাহলে আমরা শান্ত গলায় ভদ্রভাবে তাদের বলব যে এটা ভালো কথা নয়।
আখে খেতে আড়ালে সূর্য ডুবে যায়। সে রাতে রোশান আর সঙ্গীরা প্রাণভরে হাসে। সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস। (শেষ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।