পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি
চট্টগ্রাম ব্যুরো : মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় চট্টগ্রামে সন্তোষ প্রকাশ করে আনন্দ-উল্লাস ও মিষ্টিমুখ করেছে মুক্তিযোদ্ধা ও গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। মুক্তিযোদ্ধারা তার যাবতীয় সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও দাবি জানিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ মানবতা বিরোধী অপরাধে দ-িতদের সন্তানরা যাতে রাজনীতি কিংবা নির্বাচন করতে না পারে সে ধরনের আইন করারও দাবি তুলেছে।
গতকাল (রোববার) নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ। সমাবেশ থেকে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সন্তানরা যাতে নির্বাচন করতে না পারে সে আইন পাস করার দাবি জানান। এসময় বক্তারা বলেন, মীর কাসেম আলী একাত্তরে চট্টগ্রামের মুক্তিকামী বাঙালিদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামকে মীর কাসেম আলীরা জল্লাদখানা বানিয়েছিল। চট্টগ্রাম কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
তারা বলেন, মীর কাসেম আলীসহ যেসব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে তাদের প্রায় সবার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে বিত্তশালী। রাজনীতিতেও তাদের প্রভাব আছে। ভবিষ্যতে তারা রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে মন্ত্রী-এমপি হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের যে কোন নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্য আইন করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না। তারা কোন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেনা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে রাজাকার-আলবদরের সন্তানেরা যেন কোনদিন ফণা তুলতে না পারে সেজন্য আইন করতে হবে।
এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে মীর কাসেম আলীর সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে যাবার দাবি জানানো হয়েছে। মীর কাসেম আলীর তৈরি করা ডেথ ফ্যাক্টরি ডালিম হোটেল অধিগ্রহণ করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর করারও দাবি জানিয়েছেন তারা। পরে গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য সচিব ডা. চন্দন দাশ এবং সমন্বয়কারী শরীফ চৌহানের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি আন্দরকিল্লা ঘুরে আবারও চেরাগিতে এসে শেষ হয়।
এসময় মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানান খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ সভাপতি সুনীল ধর এবং সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রীতম দাশ।
এদিকে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন একাত্তরে চট্টগ্রামে এই বদর কমান্ডারের পরিচালিত ‘মৃত্যুঘর’ ডালিম হোটেলের নির্যাতিতরা। এই ডালিম হোটেলে মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ছয়জনকে হত্যায় শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। এরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেখানে নির্যাতিতদের কয়েকজন বলেন, এই শাস্তির মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। বুকের ওপর থেকে যেন পাথর নেমে গেছে তাদের। মীর কাসেমের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করার দাবি করেছেন তাদের একজন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার টনের বোঝা নেমে গেছে। জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। আমরা যারা সেখানে নির্যাতিত হয়েছি, যারা তাদের স্বজন হারিয়েছে তাদের মনের দুঃখ মিটেছে। আমি খুবই আনন্দিত তার ফাঁসি হওয়ায়।
ডালিম হোটেলে নির্যাতিত অপর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোহাম্মদ এমরান বলেন, কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে তার হাতে নির্যাতিত একজন হিসেবে আমি খুবই খুশি। তার ফাঁসি হওয়ার মাধ্যমে জাতি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু মীর কাসেমের বিশাল সা¤্রাজ্য রয়ে গেছে। তা বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যবহার করা হোক।
মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সে চট্টগ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করেছিল। ৪৫ বছর পর ফাঁসির সাজা কার্যকর হল, এটি চট্টগ্রামের জন্য আনন্দের। মীর কাসেমের হাতে নির্যাতিত হিসেবে আমি এ দ- কার্যকরে অত্যন্ত খুশি, দেশবাসীও খুশি। এ শাস্তি তার প্রাপ্য ছিল। কোনোক্রমেই এর কম হওয়া উচিত ছিল না।
মীর কাসেম আলীসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন করেছিল জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাব উদ্দীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছিল। ডালিম হোটেলকে জল্লাদখানায় পরিণত করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী এই রাজাকার স্বাধীন দেশে তার অর্থ-বিত্ত দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার অর্থে জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। মীর কাসেম আলীর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে দেওয়ারও দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের পর শনিবার রাতে ডালিম হোটেলের সামনে জ্বলন্ত মোমবাতি নিয়ে মিছিল করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শহীদ সন্তান ও নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে নগর যুবলীগ নেতা এস এম সাঈদ সুমন, নেছার আহমেদ, শেখ নাছির, দেলোয়ার হোসেন দেলু, হোসেন সরওয়ার্দ্দী, কাজী রাজেশ ইমরান, অলিউর রহমান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোটালীপাড়া ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল
কোটালীপাড়া উপজেলা সংবাদদাতা:
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- কার্যকর করায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। রবিবার উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একটি মিছিল উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আওয়ামীলীগের প্রধান কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এসময় ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান মুন, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি বাবুল হাজরা, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হাজরা (মন্নু), আওয়ামীলীগ নেতা কবিরুল ইসলাম রুনি, সিরাজ সরদার, চারু চন্দ্র গাইন, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ সাধারন সম্পাদক বুলবুল হাজরা, ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী সেলিম আহম্মেদ ছোটন, তরিকুল ইসলাম সরদার সহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জাবি ছাত্রলীগের আনন্দ মিছিল
জাবি সংবাদদাতাঃ
জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করায় আনন্দ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ সালাম-বরকত হল, কামাল উদ্দিন হল, মওলানা ভাসানী হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল- হলে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করে। প্রসঙ্গত,শনিবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।