পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা : হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ২৭ বছর পর নাটোরে নিজ বাড়িতে মনোয়ারাকে ফিরে পেয়ে মা ও ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই এখন খুশীতে আত্মহারা। সবাইকে খুঁজে পেয়ে হারিয়ে যাওয়া মনোয়ারাও আনন্দের আতিসায্যে হয়ে পড়েছে দিশেহারা। নাটোর সদর উপজেলার একটি পাট গুদামের কর্মচারী আব্দুস সাত্তার গাজীর আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। আর্থিক অনটনের কারণে ১৯৮৮ সালের দিকে সাত বছর বয়সের তার চতুর্থ মেয়ে মনোয়ারা বেগমকে নাটোরের এক মহিলার মাধ্যমে ঢাকার এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেন তিনি। পুরান ঢাকার আলু বাজারে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ করতো মনোয়ারা। বাবা-মা ও বড় ভাই দু’তিনবার সেখানে গিয়ে তাকে দেখেও এসেছেন। এর পর সেই বাড়ির লোকজন মনোয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে সে পালিয়ে অন্য এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ নেয়। এরপর থেকেই পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাড়ির লোকজন কয়েকবার ঢাকায় গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। এভাবেই কেটে গেছে ২৭টি বছর। এরমধ্যে যে বাসায় সে কাজ করতো সেই বাড়ির লোকজন মনোয়ারাকে স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হারুন-অর-রশিদের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর মনোয়ারা গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে সংসারের হাল ধরে। তার কোলে একে একে দু’টি পুত্রসন্তান আসে। বড় ছেলে আকাশ (১২) এবং ছোট ছেলে আয়ানকে (৬) নিয়ে তার সংসার ভালো চললেও তার মন পড়ে থাকতো নাটোরের হারিয়ে যাওয়া বাবা-মা আর ভাই-বোনদের জন্য। তার ছেলেদের মাঝে ঢাকায় দাদা-দাদীকে দেখে নানা-নানী আর মামা-খালাদের দেখার আগ্রহ আরো তীব্র হয়ে ওঠে। মনোয়ারার সাথে বছর তিনেক আগে ঢাকার এক গার্মেন্টে কর্মরত নাটোরের এক মহিলার পরিচয় হয়। মনোয়ারা সেই গার্মেন্টে কর্মীর মাধ্যমে নাটোরে পরিবারের লোকজনের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করে। ঠিকানা ভালো মতো বলতে না পারায় সেই মহিলা মনোয়ারকে পরিবারের খোঁজ-খবর দিতে ব্যর্থ হন। মনোয়ারা এরপরেও হতাশ না হয়ে পরিবারের লোকজনকে খুঁজে পেতে উদগ্রীব থাকে। এরপর যোগাযোগ হয় ঢাকার গার্মেন্টে কর্মরত এক ব্যক্তির সাথে যার বাড়ি তার পাশের গ্রাম পাটুলে। এবার সাহস করে সে গত ২৯ জানুয়ারি, শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিচিত ওই ব্যক্তির সাথে নাটোরে আসে। তার মনে থাকা স্মৃতি থেকে সে রাতেই আমহাটি এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজতে যায়। ভাটোদারা কালী মন্দিরের কাছে গিয়ে মনে পরে যায় তার দুই বোন সাজেদা ও মাজেদার বিয়ে হয়েছিল ওই এলাকার চক আমহাটিতে। সেই সূত্র ধরে সে খুঁজে বের করে মেজ বোন সাজেদাকে। পরে যোগাযোগ হয় সেজ বোন মাজেদার সাথে। তারা বড় ভাই ডেকোরেটর ব্যবসায়ী খলিল গাজীকে খবর দিলে তিনি গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছোট বোনকে দেখে চিনতে পেরে জড়িয়ে ধরেন। সে তখনই জানতে পারে যে তাদের বাবা আব্দুস সাত্তার গাজী চার বছর আগে মারা গেছেন। এর পর সবাই মিলে তাকে রায় আমহাটির গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে দেখা হয় তার গর্ভধারিণী মা চন্দ্র বানুর সাথে। দীর্ঘ ২৭বছর পর মা-মেয়ে একে অন্যকে ফিরে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরে অনেক সময় ধরে কাঁদতে থাকেন। মেয়েকে ফিরে পেয়ে মা চন্দ্র বানু যেমন খুশি ঠিক তেমনই খুশি মনোয়ারাও। এসময় এক এক করে দেখা হয় ছোট ভাই মখলেস গাজী বড় বোন কুলসুম ও ছোট বোন নূর বানু সহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সাথে। পরিবারের লোকজনকে ফিরে পাওয়ার খবর পেয়ে মনোয়ারার স্বামী হারুন-অর-রশিদ তার ছেলে আকাশ এবং আয়ানকে সাথে নিয়ে শনিবার রাতেই নাটোরে আসেন। সবাই মিলে এখন তারা তাদের অন্যান্য আত্মীয়দের বাড়িতে সবার সাথে দেখা করে বেড়াচ্ছেন আবার অনেকেই আসছেন তাদের সাথে দেখা করতে। গত দশ দিন ধরে রায় আমহাটির ওই বাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। গ্রামের সবার মুখেই এখন মনোয়ারার কথা। মনোয়ারা ফিরে আসায় সারা গ্রামের লোকই যেন খুশিতে ভাসছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।