Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গবন্ধুর জীবনের সংক্ষিপ্ত রেখাচিত্র

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

(১৯২০-১৯৭৫)
১৯২০
জন্ম ১৭ মার্চ। গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বাবা শেখ লুৎফর রহমান। মা সায়েরা খাতুন।
১৯২৭
শেখ মুজিবের বয়স তখন সাত বছর। তাঁকে ভর্তি করা হলো গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বাবা চাকরি করতেন গোপালগঞ্জে। নয় বছর বয়সে মুজিবকে নিজের কাছে নিয়ে রাখলেন বাবা। তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলেন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে।
১৯৩৪
বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলেন মুজিব। চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। জীবনে প্রথমবার কলকাতায় গেলেন মুজিব।
১৯৩৬
গোপালগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে মাদারীপুর আসেন শেখ লুৎফর রহমান। বাবার সঙ্গে শেখ মুজিবও মাদারীপুর এলেন। ভর্তি হলেন মাদারীপুর হাইস্কুলে। আবারও সপ্তম শ্রেণিতে। আবার চোখের ব্যামো। এবার ধরা পড়ল গøুকোমা। আবারও তাকে নিয়ে যাওয়া হলো কলকাতায়। অপারেশনের পর সুস্থ হলেন।
১৯৩৭
অসুস্থতার জন্য টানা কয়েক বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল তার। আবার বদলি হয়ে বাবা এলেন গোপালগঞ্জ। শেখ মুজিব ভর্তি হলেন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে।
১৯৩৮
মিশন স্কুল পরিদর্শনে আসেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সখ্য তৈরি হলো মুজিবের।
এ বছরই প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন শেখ মুজিব। জেল খেটেছেন সাত দিন।
১৯৪১
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। থাকতেন ওই কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে।
১৯৪৩
ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয় বাংলায়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন সিভিল সাপ্লাই মন্ত্রী। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য কাজ করতে থাকেন শেখ মুজিব। দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ সম্মেলনে ডেলিগেট হিসেবে যোগ দেন।
১৯৪৪
মিল্লাত পত্রিকা প্রকাশিত হলে শেখ মুজিব সেখানে স্বেচ্ছাশ্রম দিতেন।
১৯৪৫
মুসলিম লীগের নির্বাচনী অফিস ও কর্মশিবির খোলার জন্য ফরিদপুর আসেন।
১৯৪৬
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে দিল্লিতে মুসলিম লীগের কনভেনশনে যোগ দেন। হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৪৭
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। দেশভাগের পর কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন। গঠন করেন গণতান্ত্রিক যুবলীগ।
১৯৪৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। কয়েকবার গ্রেফতার হন।
১৯৪৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও ছাত্রদের ধর্মঘটে সক্রিয় অংশ নেন। এ অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। মুক্তির পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। দেশে আসার পর গ্রেফতার হন।
১৯৫০
মামলার রায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড হয় তাঁর। জেলখানায় সুতাকাটার কাজ করেন।
১৯৫১
দীর্ঘসময় কারাগারে থাকার পর মুক্তি পান। কিন্তু তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি হয়।
১৯৫২
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় জেলে বন্দি ছিলেন। ফরিদপুর জেলে বদলি করা হয় তাঁকে। আমরণ অনশন শুরু করেন। টিউব দিয়ে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করায় আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন মুজিব।
২৮ ফেব্রæয়ারি মুক্তি পাওয়ার পর আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। করাচি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। করাচিতে সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন দাবির ব্যাখ্যা করেন। বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে পিকিং যান। বছর শেষে সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে বাংলাদেশের জেলায় জেলায় জনসভা করেন।
১৯৫৩
আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল সভায় সভাপতি হিসেবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিব নির্বাচিত হন। প্রথম সাধারণ নির্বাচনের জন্য সোহরাওয়ার্দী, ফজলুল হক ও ভাসানীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।
১৯৫৪
গোপালগঞ্জ থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্ট ৩০৯টি আসনের মধ্যে ২২৮টি আসন পায়। এই ২২৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ পায় ১৪৩টি আসন।
১৯৫৪
মে মাসে গঠিত পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভায় মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সমবায় ও কৃষি উন্নয়ন মন্ত্রী হন শেখ মুজিব। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কারণে বেশি দিন যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। গ্রেফতার হন শেখ মুজিব। আরো কিছু মামলা হয় তার নামে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী হন। মুক্তি পেয়ে সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মুজিব।
১৯৫৫
পাকিস্তান গণপরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। ঢাকায় দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগ করা হয়। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিবাদে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। আবারও মওলানা ভাসানী সভাপতি ও শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬
শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ভুখা মিছিলে চকবাজারে গুলি চালায় পুলিশ। তিনজন নিহত হয়। আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হন শেখ মুজিব।
১৯৫৭
আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন ভাসানী। সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের জন্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন মুজিব। চীন সফরে মাও সেতুং ও চৌ-এন-লাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
১৯৫৮
পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন ইস্কান্দার মির্জা। আইয়ুব খান হন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। ভাসানী, মুজিবসহ পূর্ব পাকিস্তানের অনেক নেতা গ্রেফতার হন। ইস্কান্দার মির্জাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ক্ষমতা দখল করেন আইয়ুব খান।
১৯৫৯
শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১০ ডিসেম্বর মুক্তি দিয়ে আবার জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। মৌলিক গণতন্ত্রের ঘোষণা দেন আইয়ুব খান।
১৯৬৩
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দেখতে লন্ডন যান মুজিব। ডিসেম্বরে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে রহস্যজনক মৃত্যুবরণ করেন সোহরাওয়ার্দী।
১৯৬৪
খুলনা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়। উদ্বাস্তু বিহারিরা হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়। দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন মুজিব। আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম লীগ থেকে আইয়ুব খান ও বিরোধী দল থেকে ফাতেমা জিন্নাহ প্রার্থী হন। করাচিতে ফাতেমা জিন্নাহর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ মুজিব।
১৯৬৫
মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আইয়ুব খান। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হয়। সেপ্টেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলে ১৭ দিন। এ সময় একেবারেই অরক্ষিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত রাখার তীব্র সমালোচনা করেন শেখ মুজিব।
১৯৬৬
দুই বছরের কারাদন্ড হয় মুজিবের। হাইকোর্টে জামিন লাভ করেন। লাহোরে বিরোধীদলীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ থেকে যোগ দেন শেখ মুজিব। আরো ছিলেন মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, তাজউদ্দীন আহমদসহ দশ নেতা। ১০ ফেব্রুয়ারি এই জাতীয় সম্মেলনে ছয় দফা উত্থাপন করেন মুজিব। ছয় দফা দাবিগুলো ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রদেশের; পূর্ব ও পশ্চিমাংশের জন্য পৃথক মুদ্রা; রাজস্ব ও কর আদায়ে প্রাদেশিক ক্ষমতা; প্রদেশকে পৃথক বৈদেশিক বাণিজ্য চালানো ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের অধিকার দেয়া এবং প্রদেশের আঞ্চলিক সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দেয়া। ছয় দফার পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায় পূর্ব পাকিস্তানে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ছয় দফাকে আওয়ামী লীগের মূল কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়।
১৯৬৮
শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি ও ৩৫ জন সামরিক-বেসামরিক নাগরিককে অভিযুক্ত করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। বিচার শুরু হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনালে।
১৯৬৯
ডাকসু সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ পরিষদ থেকে ১১ দফা ঘোষণা করা হয়। জানুয়ারির ২০ তারিখ আসাদ ও ২৪ তারিখ পুলিশের গুলিতে মতিয়ুর নিহত হন। আন্দোলন রূপান্তরিত হয় গণঅভ্যুত্থানে। ২৫ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় কারফিউ জারি করে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি। শেখ মুজিবের মুক্তি ও আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। অনিবার্য পতনের মুখে পড়ে যান আইয়ুব খান। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান করেন আইয়ুব। শেখ মুজিবকে বন্দি রেখে বৈঠকে যোগদানে অস্বীকৃতি জানায় আওয়ামী লীগ। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হননি শেখ মুজিবও। ২০ ফেব্রæয়ারি কারফিউ প্রত্যাহার করে সরকার। ২২ ফেব্রæয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবসহ সকল বন্দিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।
২৩ ফেব্রæয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১০ থেকে ১৩ মার্চ রাওয়ালপিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে ছয় ও এগারো দফার ভিত্তিতে সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সরকার গঠন, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও বৈষম্য দূরীকরণের দাবি জানান শেখ মুজিব। কিন্তু তার সকল দাবি অগ্রাহ্য হয়। ২৫ মার্চ পদত্যাগ করেন আইয়ুব খান। সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান।
১৯৭০
জুনে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দুই পাকিস্তানের উভয় কমিটির সভাপতি হলেন বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্সের জনসভায় ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে ভাষণ শেষ করলেন শেখ মুজিব। নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াসে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ১৬২ আসনে। আর প্রাদেশিক পরিষদে ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৮৮ আসন।
১৯৭১
৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান জুলফিকার আলি ভুট্টো। ১ মার্চ বেতার ভাষণে অধিবেশন মুলতবি করেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন মুজিব। বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৬ মার্চ ঢাকায় ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা শুরু হলো। ২১ মার্চ পর্যন্ত ৫ বার বৈঠক হয়। ২২ মার্চ আলোচনায় অংশ নিতে আসেন ভুট্টো। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় বৈঠক অসমাপ্ত রেখে গোপনে ঢাকা ছাড়েন ইয়াহিয়া। মাঝরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করে। মৃত ও ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা।
রাত ১২টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের শুরুতেই ওয়্যারলেস ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। রাত ১টার কিছু পরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তিন দিন আটকে রাখে ঢাকায়। পরে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় করাচিতে। ২৬ মার্চ বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চরম শাস্তিদান ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ইয়াহিয়া খান।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপ্রধান করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ সরকার। মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে ভারত। সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে চীন বাদে সকল সমাজতান্ত্রিক দেশ সমর্থন জানায় বাংলাদেশকে।
লয়ালপুর কারাগারে নির্জন সেলে আটক রাখা হয় বঙ্গবন্ধুকে। ৩ আগস্ট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয়। চার মাস বিচারের পর ৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। যদিও নানান চাপে এ রায় কার্যকর করতে পারেনি পাকিস্তান সরকার। ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী সম্মিলিত অভিযান শুরু করে। এদিন ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানের মিত্ররা জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনে মুক্তিযুদ্ধ থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। খোড়া অজুহাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায়।
১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে লয়ালপুর থেকে মিয়ানওয়ালি জেলে স্থানান্তর করা হয়। ২৬ ডিসেম্বরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাওয়ালপিন্ডির অতিথি ভবনে।
১৯৭২
৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মিলে ফেডারেশন করার প্রস্তাব করলে অসম্মতি জানান বঙ্গবন্ধু। ৮ জানুয়ারি বিশেষ বিমানে করে বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেন লন্ডনে যান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ ও বিরোধী নেতা উইলসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে দিল্লি আসেন ৯ জানুয়ারি বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে স্বাগত জানান। ১০ জানুয়ারি ঢাকা আসেন বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্সের জনসভায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী হন নতুন রাষ্ট্রপতি। ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগের আগে বঙ্গবন্ধুকে বিদায়ী সালাম জানায় মিত্রবাহিনী। তিন মাসের মধ্যে দখল ছেড়ে যাওয়ার এমন নজির বিশ্ব-ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। ২৬ মার্চ ভারী শিল্পকারখানা, ব্যাংক-বিমা প্রভৃতি জাতীয়করণ করেন বঙ্গবন্ধু। মার্চে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন।
৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। মূলনীতি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
১৯৭৩
মার্চে নির্বাচনে জয়ী হয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন মুজিব। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। বিশ্বশান্তিতে অবদানের জন্য জুলিওকুরি পদকে ভূষিত হন।
১৯৭৪
ফেব্রæয়ারিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান। লাহোরে ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন শেখ মুজিব। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন শেখ মুজিব। বিশ্বের ১২৬টি দেশ স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে।
দেশে ১৯টির মধ্যে ১৭টি জেলা বন্যায় ডুবে যায়। শস্য বিনষ্ট ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে চরম খাদ্যসংকট শুরু হয় দেশে।
১৯৭৫
১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে একদল বিপথগামী সেনা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে হামলা চালায়। নির্মমভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন টুঙ্গিপাড়ায়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয় দখল করে আছেন চিরদিনের জন্য।
সূত্র: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্ম স্মারক গ্রন্থ থেকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন