Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংসার চালাতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে

রমজানের আগেই বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করল সরকার সরকার স্বার্থ রক্ষা করছে ব্যাসায়ীদের :ক্যাব

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

পবিত্র রমজান শুরু হতে এখনো এক মাস সময় বাকি। এরমধ্যে হু হু করে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। রমজানে যাতে কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে এজন্য কয়েক দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই পণ্যের দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের সে কৌশলের কাছে সরকারও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। তাইতো ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় রমজানের আগে সরকার নিজেই ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ম‚ল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে লুজ সয়াবিন তেলের মূল্য প্রতিলিটার ২টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ৪টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১ অনুযায়ী গঠিত জাতীয় কমিটিতে ভোজ্যতেলের মূল্য ও সরবরাহ বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বিস্তারিত নিরীক্ষার পর অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ মূল্যে নির্ধারণ করা হয়।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্তদের এখন সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বাজারে গিয়ে চাল কিনলে তেল কিনতে পারছে না। তেল কিনলে ডাল কিনতে পারছে না। বলা যায় মানুষের এক নাভিশ্বাস অবস্থা যাচ্ছে। নি¤œ আয়ের মানুষের আরও করুন অবস্থা। তাদেরতো খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের কাপড়ের দোকানদার ছালম মিয়ার সাথে গতকাল কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা শুরুর পর থেকে কাপড়েরর দোকানে বেচা-বিক্রি অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। এমন অনেক দিন যায় সারাদিনে হাজার টাকাও বিক্রি হয়না। দোকানভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে গত ছয়মাস ধরে লসের মধ্যে আছি। এ অবস্থায় চাল, ডাল, তেল, মুরগি এসব নিত্যপণ্যের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছি। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে গত দ’মাস যাবৎ গরু গোশত কিনতে পারছি না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ইনকিলাবকে বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনা না করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। ভোজ্যতেলের দাম দু’দফা বাড়িয়ে সরকার সেটাই প্রমাণ করেছে। সরকারের উচিত তাদের বিপনন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে তেল, ডাল, চিনিসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্য সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা।

এদিকে আসছে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি পণ্য নিয়ে মাঠে নামবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২১ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই চাহিদা প্রায় ৪ লাখ টন। একইভাবে সারাবছর চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। রমজানে চাহিদা ৩ লাখ টনের। এছাড়া সারা বছর ৫ লাখ টন মসুর ডালের মধ্যে রমজানে চাহিদা ৮০ হাজার টন। আর বছর জুড়ে ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদার ৯০ শতাংশই লাগে রমজানে। সেই সঙ্গে সারা বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে প্রায় ৫ লাখ টন পেঁয়াজের।

অথচ এই চাহিদার বিপরীতে রমজানে টিসিবি আড়াই কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, ১৩ হাজার টন চিনি, ১৭ হাজার টন পেঁয়াজ ও অন্যান্য আরো কিছু পণ্য বিক্রি করবে বলে জানা গেছে। এপ্রিলের শুরু থেকে সারা দেশে ৫০০ ডিলারের মধ্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে রাজধানীতে শতাধিক ডিলার পণ্য বিক্রি করবে। টিসিবির এই পণ্য চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই বাজারে এর কোন প্রভাব পড়বে বলে ভোক্তারা মনে করেন না।

গত প্রায় দুই মাস ধরে ভোজ্য তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। এ ছাড়া লাগামহীন রয়েছে চালের বাজার। স¤প্রতি দুই দফায় আবার বেড়েছে চালের দাম। এর বাইরে গত এক সপ্তাহে যে সব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলো হচ্ছে পেঁয়াজ, আদা, ডিম ও আটা। এ ছাড়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। ফলে ভোক্তারা এখনই শঙ্কিত রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়ে ৫০/৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারিমানের চাল পাইজাম/লতা কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের দাম। বর্তমানে নাজিরশাইল/মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। চালের পাশাপাশি গত কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, আদা ও মুরগির। গত এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সোনালী মুরগির। এ মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। একদিনের ব্যবধানে সোনালী মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। লেয়ার মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা, যা দুইদিন আগেও ছিল ১৮০ টাকা। গরুর গোশত সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্য ৫৫০ টাকা কেজি কোথাও বিক্রি হচ্ছে না। রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারেই ৫৭০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে গরু গোশত বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশতেরও একই অবস্থা, ৯০০টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ