পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পতেঙ্গা সৈকতে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো এক কিশোরী। তার সামনেই আরেক কিশোরীকে নির্দয়ভাবে কিল ঘুষি মারছে এক কিশোর। পেছন থেকে ওই কিশোরীর হুংকার ‘আমি চাইলে এখান থেকে জিন্দা যেতে পারবি না। এখানেই তোর লাশ ফেলে দেব।’ বারবার আকুতি জানিয়েও মারপিট থেকে রেহাই পায়নি ওই কিশোরী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক মিনিটের ভিডিওতে নির্যাতনের হুকুমদাতা ওই কিশোরীর নাম তাহমিনা সিমি ওরফে সিমরান (১৯)। লেডি ডন হিসেবে পরিচিত এ কিশোরী পতেঙ্গা এলাকার ‘লেডি গ্যাং লিডার।’ তার নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর পতেঙ্গা, ইপিজেডসহ বিভিন্ন এলাকায়।
ওই ভিডিওর সূত্র ধরে শনিবার সিমরানকে পাকড়াও করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। রাতেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেন মারধরের শিকার ওয়াসিকা। গতকাল রোববার মামলায় সিমরানকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। পুলিশ জানায়, এমন এক গ্যাংয়ের হাত ধরেই উঠে আসে সিমরান। এখন সে বড় একটি গ্যাংয়ের লিডার। তার দলে রয়েছে অর্ধশত কিশোর-কিশোরী। নগরীর কিশোর গ্যাংগুলোতে কিশোরীদের অংশগ্রহণও বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে।
নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, পাড়া-মহল্লায় গড়েউঠা কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আধিপত্য বিস্তারে কলহ-বিরোধ, হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। খুন-খারাবি থেকে শুরু করে ছিনতাই, দস্যুতা, মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-কিশোরী আর উঠতি যুবকেরা। রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতায়ও অগ্রভাগে থাকছে কিশোর অপরাধীরা। কোনো কোনো এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে তটস্থ এলাকাবাসী।
কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতকে নগরীর আইন-শৃঙ্খলার প্রধান হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে নানা উদ্যোগও নেয় পুলিশ। পাড়ায়-মহল্লায় গড়েউঠা কিশোর গ্যাং এবং তাদের গডফাদারদের তালিকাও করা হয়। কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডা-আস্তানায় সাঁড়াশি অভিযানও চলে। এতকিছুর পরও থামছে না বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য।
পতেঙ্গায় লেডি গ্যাং লিডার সিমরান এবং তার গ্যাং সদস্যদের দাপট চলে পতেঙ্গা সৈকতে। পুলিশ জানায়, সেখানে চাঁদাবাজি, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে জড়িত এ গ্যাংয়ের সদস্যরা। সৈকত এলাকার হোটেল-মোটেলে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে অনেক কিশোরী। মাত্র ১৯ বছর বয়সে সিমরান জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সিমরান ছোটকাল থেকেই ডানপিটে স্বভাবের ছিলো। ছয় বছর আগে তার বাবা মারা যান। এরপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠে সিমি। এর মধ্যে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাসায় ঢুকে এক তরুণীকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনায় আসেন এই তরুণী। ওই ঘটনার দায়ের করা মামলার জেরে সেসময় আটক হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন এই লেডি কিশোর গ্যাং লিডার।
পতেঙ্গায় ওই কিশোরীকে নির্যাতনের চিত্র ভিডিওতে ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেয় সিমরান। কিশোরীর মা অভিযোগ করেছেন, তার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর তার মেয়েকে অনৈতিক কাজে নামতে চাপ দেয় সিমরান। এতে সে অস্বীকৃতি জানালে তার উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের এ ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়, যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। পতেঙ্গা থানার ওসি জুবায়ের সৈয়দ বলেন, ওই ভিডিওর সূত্র ধরে সিমরানকে প্রথমে আটক এবং পরে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
এদিকে মহানগরীর প্রতিটি এলাকায় চলছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। নগরীর ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে ১১ জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। এরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত বলে জানায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর স্টেশন এলাকা থেকে ছয় কিশোর-কিশোরীকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তাদের দুইজন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী এবং বাকি চারজন বন্ধু-বান্ধবী পরিচয় দিতেই পুলিশের সন্দেহ হয়।
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে বিয়ে করতে পালিয়ে আসে ওই ছয় কিশোর-কিশোরী। পরে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, ওই ছয়জনসহ কিশোর-কিশোরীদের একটি গ্রুপ গড়ে উঠে। তারা অভিভাবকের অমতে নিজেদের পছন্দমত পাত্র-পাত্র ঠিক করে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ বয়সে তারা এখনও শিশু। মাত্র ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে পড়ছে তারা। অভিভাবকদের অবহেলার কারণে এমন অনৈতিক পথে পা বাড়িয়েছে এসব শিশুরা।
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে খুনের ঘটনাও ঘটছে। খুনোখুনিতে কিশোররা মারা যাচ্ছে আবার কিশোর গ্যাংয়ের হাতে বড়রাও খুন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ছোটপুলে বিরোধে খুন হয় এক কিশোর। পুলিশ কর্মকর্তারা জানানা, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা, খুনসহ প্রায় সব অপরাধের ঘটনায় কিশোরদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি চান্দগাঁও এলাকায় এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় গ্রেফতার হয় বেশ কয়েকজন কিশোর। ছিনতাই, অস্ত্রবাজির ঘটনায় এবং মাদকসহ প্রতিনিয়তই কিশোররা ধরা পড়ছে। এর আগে নগরীর ষোলশহর এলাকায় এক কিশোরকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় এক কিশোরী গ্রেফতার হয়।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, পরিবারের অসচেতনতা, নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং সঙ্গ দোষে কিশোরেরা বিপথগামী হচ্ছে। স্বাভাবিক পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এ প্রবণতা রোধ সম্ভব নয়। এজন্য দরকার পরিবার এবং সামাজিক সচেতনতা। কিশোর অপরাধীদের দাপট কমাতে পুলিশ সক্রিয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় কিশোরদের উৎপাত এবং আড্ডা রয়েছে সেখানে নিয়মিত অভিযান চলছে। সন্ধ্যার পর কিশোরদের আড্ডায় পাওয়া গেলে তাদের ধরে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়া হচ্ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক মদদের কারণে কিশোর অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও ক্যাডার-মাস্তানেরা তাদের দল ভারী করতে কিশোরদের বিপদগামী করছে। রাজনৈতিক মদদ বন্ধের পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন, নৈতিক শিক্ষা এবং সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া এ প্রবণতা রোধ করা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।