পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
রেজাউল করিম রাজু : দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা বা কোরবানীর ঈদ। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের কোরবানী দাতারা ছুটছেন এ হাট থেকে ও হাটে। গতবারের চেয়ে দাম এবার চড়া। তাই এ হাট থেকে ও হাটে যাওয়া। দাম যাচাই করা। পশুহাটে মানুষের আগমনে জমে উঠতে শুরু করেছে হাটগুলো। বিশেষ করে গত ছুটির দু’দিন ব্যস্ত সময় কাটায় মানুষ। হাটগুলোয় জনসমাগম ঘটলেও বেচাকেনা তেমন হচ্ছেনা বলে জানান গরু-খাসি বিক্রেতারা। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে জমে উঠবে হাটগুলো। হাট ঘুরে দেখা যায় এবার দেশী গরু উঠছে বেশী। সে তুলনায় ভারতীয় গরু কম। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানাচ্ছে, রাজশাহীতে কোরবানী করার মত পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। যার সংখ্যা প্রায় সোয়া তিন লাখ। আর চাহিদা হলো আড়াই লাখের কিছু বেশী। এর মধ্যে গরু হলো ৫৪ হাজার ছাগল আড়াই লাখ মহিষ দেড় হাজার ও ভেড়া চৌদ্দ হাজার। এর সাথে যোগ হচ্ছে ভারত থেকে আসা গরু মহিষ। কাস্টমসের হিসাবে রাজশাহী অঞ্চলের নয়টি করিডোর দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দু’হাজার গরু মহিষ ছাড়পত্র নিচ্ছে। এর বাইরেও রয়েছে করিডোর বাইপাস করা গরু-মহিষ। এসব হিসেবের সাথে মিলছে না হাটের গরু মহিষের দামের সাথে। চাহিদার থেকে যোগান বেশী থাকলে দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তব উল্টো। গতবারের চেয়ে এবার গরুপ্রতি দাম পনের থেকে কুড়ি হাজার টাকা বেশী। হাট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ছোট আকারের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা, মাঝারী সাইজের গরু পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন হাজার। আর বড় গরু আশি হাজার থেকে দেড় লাখ। ছোট খাসির দামও আট দশ হাজার টাকার নীচে নেই। এমন চড়া দামের কারণে ক্রেতাদের ছুটোছুটি করতে হচ্ছে এ হাট থেকে ও হাটে। এর বাইরেও যাচ্ছেন গড়ে ওঠা ছোট ছোট খামার আর গেরস্থের বাড়ির গোয়ালে। ক্রেতাদের এমন ছুটোছুটির আঁচ লেগেছে এসব স্থানেও। তারাও ইচ্ছেমত দাম হাঁকাচ্ছেন। সারা বছর ধরে লালন পালন করা কৃষাণ-কৃষাণীও তাদের দু’একটা গরু ছাগলের প্রত্যাশিত দামের আশায় চেয়ে আছেন ক্রেতার পানে। যারা প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন তারা ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার অনেকে সামনে আরো ক’টাদিন আছে এমন অপেক্ষায় রয়েছেন। এবার গরু ছাগরের দাম বেশী হওয়া প্রসঙ্গে হাট ব্যবসায়ী সূত্র জানায় হাট থেকে গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্র মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া দালাররা তৎপর রয়েছে। এরা উল্টোপাল্টা দাম চেয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। বাংলাদেশে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করার পর থেকে বছর দুয়েক ধরে গ্রামে গ্রামে বেড়েছে গরু ছাগল লালন পালন। দশ বিশটা গরু নিয়ে অনেকে খামারও গড়েছেন। কেউ কেউ করছেন গরু মোটাতাজা করণ। এখন তাদের আশা প্রত্যাশিত দাম। তবে শংকা রয়েছে ফড়িয়া দালালদের অপতৎপরতার কারণে উল্টোপাল্টা হবার। ক্রেতারাও অপেক্ষায় রয়েছে। শেষ মুহূর্তে দাম কমার। নগরীর উপকন্ঠ নওদাপাড়ায় মিনি খামার করেছেন সাবেক এনজিও কর্মী মরিয়ম বেগম। অবসরে কিছু করার জন্য খামার করা। দশটা গরু নিয়ে শুরু গতবছর থেকে। মোটাতাজা করণের কোন ওষুধ ব্যবহার করেননি। ইতোমধ্যে চারটা বিক্রি হয়েছে। বাকীগুলোর জন্য ক্রেতারা আসছেন। মরিয়ম বেগমের মত অনেকে দশ বিশটা গরু নিয়ে খামার গড়েছেন। আবার বড় খামারে বিশাল দেহী বিদেশী জাতের গরু দেখা যায়। অনেকে ্অসাধু পন্থায় মোটাতাজা করেছে। যদিও এবার হাটে হাটে দেখা মিলছে ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের। গরু-ছাগলের দাম বেশী প্রসঙ্গে লালন-পালনকারীদের বক্তব্য খাবারে দাম বেশী পড়ছে। তারপর হাটে নেয়া আসা খরচ রয়েছে। ভারতীয় গরুর ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত কর্তৃপক্ষ বিধি-নিষেধ আরোপ করায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আনছেন। এরপর ওপার এপারে দুপারেই ঘাটে ঘাটে দিতে হচ্ছে আগের চেয়ে বেশী অর্থ। একটা গরু আনতে খরচ পড়ে যাচ্ছে দশ পনের হাজার টাকা। গরুর দাম আনা নেয়ার খরচ ধরে দাম বেশী পড়ে যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহী সিটিহাট সপ্তাহ দু’দিন বসলেও এখন প্রতিদিন বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররাও আসছেন। মহিম তপন নামে গরু ব্যবসায়ী জানালেন প্রয়োজনের তুলনায় হাটে ভারতীয় গরু কম। দেশী গরু বেশী। তবে দুটোরই দাম চড়া। হাটের ইজারাদার কালু জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসছে। এরপর রয়েছে এখানকার কোরবানীদাতারা। এখন বেচাকেনা না জমলেও তা সামনের দিনগুলোতে জমে উঠবে। একটা পশু কিনতে সঙ্গে বেশ কয়েকজন করে আসায় ভিড় বেশী মনে হচ্ছে। এরপর দাম বেশী হবার কারণে শেষ মুহূর্তের বেচা কেনায় অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে যাদের রাখার মত স্থান নেই তারা একেবারে শেষ প্রান্তে আসে কেনে। এখন কেউ জেতে কেউ হারে। শুধু সিটি হাট নয়, মহিশাল বাড়ি কাঁকন মচমইল নওহাটা সাবাইহাট কেশরহাট, তেবাড়িয়া বানেশ্বর কাটাখালি হাটও জমে উঠতে শুরু করেছে। গত বছর শেষের দিকে গরু ছাগলের দাম হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ায় অনেকেই গরু ছাগল বিক্রি করতে পারেনি। এবার সে দিকটাও খেয়াল রাখা হচ্ছ্ েহাটে হাটে বসানো হয়েছে জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিন। নগরীর প্রখ্যাত গোশত ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, এখন গরুর ওজন অনুমান করে দাম হাঁকা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয়শো টাকা ধরে হিসাব করা হচ্ছে। রমজান মাস থেকে গোশতের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব কোরবানীর হাটেও পড়েছে। তিনি ভেটেরিনারি ডাক্তারদের প্রতি অনুরোধ জানান কেউ যেন কোরবানীর বয়স না হওয়া গরু বিক্রি করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেবার। দেখতে অনেক মোটাতাজা হলেও দু’দাঁত হয়নি। এমন গরুও হাটে আসছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের একজন কর্মী জানান, আগামী বছর হাটে বিদেশী বাহামা জাতের বড় বড় গরু পাওয়া যাবে। যা শুধু গোশতের জন্য তৈরী করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় পরীক্ষা মূলকভাবে এসব গরুর প্রজনন করা হচ্ছে। ফলাফল আশানুরূপ। এসব গরু লাল-পালন হলে একেকটি গরুর ওজন হবে আটশো থেকে হাজার কেজি। তখন আর মোটা তাজা করণের অসাধু প্রক্রিয়া থাকবে না। গরুর খামারীরা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন পরীক্ষামূলক খামারীদের দিকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।