পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অনেকটা বিস্ময়কর শিল্প নৈপুন্য। কাদামাটি দিয়ে টালি থেকে টাইলস তৈরি আধুনিক শিল্পের প্রয়াস। রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে তা ছিল কল্পনাতীত। মৃৎশিল্পীরা সাধারণত যুগ যুগ ধরে কাদামাটি দিয়ে হাড়ি, পাতিল, কলস, থালা, বাসন তৈরি করতেন। বর্তমানে তারা টালি আর টাইলস ছাড়া এসব তৈরি করেন না। উন্নতমানের টাইলস রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ায় তারা অনেক খুশি।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি পালপাড়ার মৃৎশিল্পীদের পরিবর্তনের খবর। অস্থিমজ্জায় মিশে থাকা কাদা মাটিতে ভাগ্য ফিরেছে তাদের। করোনাসহ নানা কারণে এখন টাইলস জোয়ারে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তারপরও উৎপাদন ও রফতানি থেমে নেই। সংশ্লিষ্টদের কথা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা পেলে সম্ভাবনাময় মৃৎশিল্প মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সুনাম ছড়ানোর পাশাপাশি আসবে বৈদেশিক মুদ্রা।
টাইলস ইতালিতে রফতানি হওয়ায় মুরারীকাটি পালপাড়া পরিচিতি পেয়েছে ইতালি নগর। সরেজমিন দেখা গেছে, নিভৃত কুটিরে কায়িক পরিশ্রমের মাঝে চলছে উল্লাস কোলাহল। প্রতিটি কারখানার সামনে মাটির ঢিবি। মাটি আর পানি মিশিয়ে বানানো হচ্ছে তুলতুলে কাদা। ইট তৈরির পদ্ধতিতে নরম মাটি কাঠের ফ্র্রেমে ফেলে শুকানো হচ্ছে রোদে। সাজানো হচ্ছে কারখানার বড় চুলার উপর। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পুড়িয়ে মাটির রং লালচে করার মধ্যদিয়ে হয়ে যাচ্ছে পোড়া মাটির সোনা।
উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ার শ্রীকান্ত পাল, লক্ষণ পাল, ময়না পাল, হরিকান্ত পাল ও অর্জূন পাল জানালেন, কাদামাটি নেড়েচেড়ে ভাগ্য খুলবে তারা কল্পনাও করতে পারেননি। টালি আর টাইলস তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। এটি এখন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পরিবার পরিজন মিলেমিশে তারা রাতদিন পরিশ্রম করে নানা সাইজের টাইলস তৈরি করছেন। বাংলার টাইলসের এতটা কদর সৃষ্টি হবে দেশে ও বিদেশে, তা রীতিমতো অভাবনীয়।
তারা বলেন, আরো কীভাবে বাংলার পোড়া মাটির সোনা মানসন্মত করা যায়, তার চেষ্টা চলছে। যার জন্য দিন দিন চাহিদা ও কদর বাড়ছেই। বিশেষ করে ইতালির বাজার দখল করছে বাংলার টাইলস। ইতালিতে টাইলস যাবার পর সেখানে এক ধরণের কেমিক্যাল লাগানো হচ্ছে। যার রং উজ্জ্বল, মজবুত ও টেকসই। যা সিরামিক টাইলসের মতো মেঝেতে ও দেয়ালে ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিটি মৌসুমে নতুন নতুন ডিজাইন দিয়ে টাইলস তৈরির অর্ডার আসছে ইতালি থেকে। টাইলস কারখানা ঘিরে শুধু মৃৎশিল্পীরা নন, টাইলস রফতানি হওয়ায় রফতানিকারক, পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য পরিবারে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সতীশচন্দ্র পাল নামে এক ব্যক্তি ১৯৫২ সালের দিকে ঘরের ছাউনি টালি তৈরি শুরু করেছিলেন। একে একে সেখানে মৃৎশিল্পীদের বিস্তৃতি ঘটে। সতীশচন্দ্র্র ছিলেন স্থানীয় পাল সম্রাট। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি মারা যান। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বহুদিন পর নতুন স্বপ্ন দেখতে পারছেন মৃৎশিল্পীরা। তারা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। নিকট অতীতে টালি থেকে টাইলস তৈরি করে বিপ্লব ঘটান কলারোয়ার মৃৎ ভান্ডারের সম্রাট হিসেবে পরিচিত রুহুল আমিন। মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটের একটি সূত্র জানায়, কলারোয়ার মাটি এঁটেল ও দোয়াশ। এখানকার মাটির তৈরি টালি ও টাইলস হয় খুবই মজবুত ও টেকসই।
জানা গেছে, অন্তত ২০ রকমের টাইলস তৈরি হচ্ছে। ছোট-বড় দেড় শতাধিক টালি কারখানায় টালি ও টাইলস তৈরি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী আকৃতির ডাইস তৈরি ও সেই আকৃতির টাইলস সরবরাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে পালপাড়ায়। এতে ৬ সহস্রাধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কলারোয়ার মুরারীকাটির পালপাড়া ছাড়াও সাতক্ষীরা ও কলারোয়ার আশেপাশে ঝাউডাঙ্গা, তুজলপুর, ব্রজবক্স ও ধুলিহরসহ বিভিন্ন গ্রামের পালপাড়ায় প্রযুক্তিটি ছড়িয়ে পড়েছে।
২০০৩ সালে ইতালিতে প্রথম টাইলস রফতানি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন রুহুল আমিন। এখন তিনি নেই কলারোয়ায়। ইতিপূর্বে দৈনিক ইনকিলাবে সরেজমিন প্রতিবেদনের পর আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবিøউ মজিনা কলারোয়া সফর করে পালপাড়া ঘুরে মৃৎশিল্পীদের বিস্ময়কর সাফল্যের গল্প শোনেন এবং টাইলস তৈরির নৈপুন্য দেখেন।
টাইলস কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি গোষ্ঠ চন্দ্র পাল জানালেন, উৎপাদনকারিরা সরকারি প্রণোদনা পান না। রফতানিকারকরা নিজেদের উৎপাদনকারি ও রফতানিকারী উল্লেখ করে সরকারি প্রণোদনা নিয়ে থাকেন। যার কারণে কারখানা মালিকরা পুঁজি সঙ্কটে থাকেন। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসিন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা পেলে টাইলস উৎপাদন আরো বাড়তো। ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাহিদানুযায়ী টাইলস রফতানির মাধ্যমে দেশে আসত বৈদেশিক মুদ্রা। বেশ কয়েকজন রফতানিকারক জানান, টাইলস রফতানিতে পুঁজি বিনিয়োগ করে বিরাট লাভবান হচ্ছেন তারা। কলারোয়া ক্লে-টাইলস প্রোপ্রাইটার গোষ্ঠ চন্দ্র পালসহ টাইলস রফতানিকারকরা জানান, কলারোয়া থেকে কাঠের বাক্সে প্যাকিং করে সড়কপথে মোংলা সমুদ্রবন্দরে নেওয়ার পর সেখান থেকে নৌপথে বাংলার টাইলস যাচ্ছে ইতালিতে।
সংশিষ্টদের কথা, সম্ভাবনাময় শিল্পটিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নানামুখী প্রতিবন্ধকতারও সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে টাইলস আমদানি করে ইতালিতে রং উজ্জ্বল কিংবা ফিনিশিং করার যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা যদি দেশেই ব্যবহার করা যায়, তাহলে আর্থিকভাবে শিল্পটি বিরাট লাভবান হবে।
সূত্র জানায়, আমেরিকার কয়েকজন আমদানিকারকও বাংলার টাইলস আমদানির জন্য খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ইদানীং রাজধানী ঢাকা, যশোর ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্নস্থানেও কাদামাটির তৈরি টাইলস এর চাহিদা বেড়েছে। শিল্পটি ঘিরে মৃৎশিল্পীদের কর্মচাঞ্চল্যতা বেড়েছে। টাইলস ছাড়াও কলারোয়ায় তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের টালি। গরীবের ঘরের ছাদ হচ্ছে টালি। একসময় আসলেই টালি ব্যবহার করত একেবারেই গরীব লোকজন। এখন গরীবের ঘর থেকে টালি সমাজের সকলস্তরে এমনকি বিদেশে ধনীর প্রাসাদ পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।