Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাসিরের জীবন পাল্টে দিয়েছে বল সুন্দরী

কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক বেকারের

এস এম আলী আহসান পান্না ও ফারুক মল্লিক, মুজিবনগর থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২১, ১২:০৭ এএম

পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় ফল কুল। মেহেরপুরের মুজিবনগরের যুবক মো. নাসির শাহ কুলের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি এখন বেকার যুবকদের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। দেশিয় প্রযুক্তিতে চাষিরা ভাগ্য বদলের চেষ্টায় পুরোপুরি সফল না হলেও প্রযুক্তির সমন্বয়ে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী কুলের বাগান করে নাসির সফল হয়েছেন। তিনি একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, অপরদিকে তাকে অনুকরণ করে অন্য যুবকরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। একই জমিতে সাথী ফসল আবাদ করে রীতিমত তিনি এলাকায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন।

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে নাসির শাহর বাড়ি। বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি বেকার অবস্থায় কর্মসংস্থানের কথা ভাবছিলেন। ঠিক সেই সময় ইউটিউবে কৃষকদের আইডল শাইখ সিরাজের কাশ্মীরি কুলের প্রতিবেদন দেখে উৎসাহী হন।

ওই প্রতিবেদন তাকে আপেল কুলের আবাদ করার পরিকল্পনা গ্রহণে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন স্থান থেকে বল সুন্দরী কুলের চারা সংগ্রহ করেন। প্রথমে ১০ হাজার টাকা বিঘা হিসাবে ৩ বিঘা জমি লিজ নেন। প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ করে চারা লাগান। ৩ বিঘাতে ৬০০ চারা রোপন করেন। প্রতি চারা ৭৫ টাকা করে কিনে আনেন। সেগুলো পরিচর্যা করে ৭ মাসের মাথায় ফুল ও ফল ধরে।

প্রতি গাছে প্রায় ৫৫ কেজি করে বল সুন্দরী কুল পান। ফলগুলো তিনি প্রায় ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। বিঘা প্রতি তার খরচ হয় ৩০ হাজার করে টাকা। বল সুন্দরী কুল চাষে অর্ধেক লাভ দেখে তিনি পরের মৌসুমে আরো ৪ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেন। পরবর্তী মৌসুমে তিনি মোট ৭ বিঘা জমিতে ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেন।

এছাড়াও তিনি আরোও ৩ বিঘা জমি লিজ নেন। সেখানে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতি বছরে ৩ লাখ চারা উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি চারা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন। বাগানে উৎপাদিত চারা সারাদেশে সরবরাহ করছেন। বাগানকে কেন্দ্র করে শাহ নার্সারি নামে একটি নার্সারিও গড়েছেন। উন্নত মানের হাইব্রিড আম, লিচু, বল সুন্দরী কুল, কাশ্মীরি কুল, মাল্টা, কমলা, চায়না কমলা, গোল্ডেন-৮ পেয়ারা, থাই সুপার-১০ পেয়ারা চারা উৎপাদন করছেন। তিনি বাগান করে নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার বাগানে কাজ করেও বেশ কয়েকজন বেকার শ্রমিকও কর্মসংস্থানের পথ পেয়েছেন।

মচমচে, রসালো, টকমিষ্টি ও সুস্বাদু ফল হিসাবে বল সুন্দরী কুলের কোন তুলনা নেই। ভালো দাম ও ব্যাপক চাহিদার কারণে কুল চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে হাইব্রিড জাতের এ কুল। অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে লাভজনক সুস্বাদু ফল কুল চাষে বিপ্লব ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে মো. নাসির শাহ বলেন, সঠিক পথে বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রম করতে পারলেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। পরিশ্রম করলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। যারা বেকার তারা চেষ্টা করলেই আমার মত বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের দিকে নজর করলেই বেকার যুবকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সরকার সুদমুক্ত ঋণ দিলে বেকার যুবকরা কুল চাষে বিপ্লব ঘটাবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ