Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বুকে চেপে বসা পাথর নামল -মুক্তিযোদ্ধা জসিমের বোন

প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক
মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ৪৫ বছর ধরে ‘বুকে চেপে বসা পাথর’ নেমেছে একাত্তরে চট্টগ্রামে নিহত মুক্তিযোদ্ধা জসিমের বোন হসিনা খাতুনের। একাত্তরে এই জসিমসহ ছয়জনকে হত্যার দায়ে চট্টগ্রামের আল-বদর কমান্ডার মীর কাসেমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় গত রাতে।
এরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ৭৫ বছর বয়সী হাসিনা বলেন, “আমার কোনো আপন ভাই নেই। ফুফাতো ভাই জসিমের প্রতি আমার বিশেষ টান ছিল। যখন শুনেছি যুদ্ধের সময় ডালিম হোটেলে নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে, তখন থেকেই চেয়েছি খুনির বিচার হোক।”
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর কমিটির সভাপতি মীর কাসেমই সে সময় সেখানে বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।
নগরীর আন্দরকিল্লার তিনতলা ‘মহামায়া ভবন’ দখল করে ‘ডালিম হোটেল’ নাম দিয়ে সেখানে নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয় কাসেমের নেতৃত্বে। ওই কেন্দ্রে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ ছয়জনকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের মৃত্যুদ-ের চূড়ান্ত রায় আসে। একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে হাসিনা খাতুন বলেন, তখন জসিমের বয়স ছিল সতের-আঠারো। সন্দ্বীপে থাকতেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
“ডালিম হোটেলে আটকে রেখে জসিমকে অমানুষিক নির্যাতন করা হত। একদিন নির্যাতন করার পর জসিম একটু পানি খেতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা দেয়নি।”
“সে সময় সেখানে থাকা আরেক বন্দি অ্যাডভোকেট শফিউল আলম জমিয়ে রাখা হাত ধোয়া পানি জসিমকে খেতে দিয়েছিলেন।” দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শফিউল আলমসহ আরও কয়েকজন ডালিম হোটেল থেকে মুক্তি পান। তখন শফিউলের কাছ থেকেই জসিমকে সেই নির্যাতনের কথা জানতে পারেন বলে জানান হাসিনা খাতুন।
জসিমকে ধরে নেওয়ার ঘটনা বর্ণনায় তিনি বলেন, একাত্তরের নভেম্বর মাসে ঈদুল ফিতরের পরদিন নগরীর পোরীপাড়ায় তার বাসায় এসে পোলাও খেতে চেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জসিম। ফুফাতো ভাইয়ের আবদার মেটাতে তাকে পোলাও রান্না করে খাওয়ান তিনি। ওই বাসা থেকে বের হওয়ার পরই জসিমকে ধরে নিয়ে যায় আল-বদর বাহিনী।
মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও তার নেতৃত্বে আল-বদর সদস্যরা জসিমকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় বলে আদালতে প্রমাণ হয়েছে। জসিমকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ডালিম হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরও পাঁচজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয় পুরনো নেতারা। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে ফেরার পর তাদের ছাত্র সংগঠন নাম বদলে হয় ইসলামী ছাত্র শিবির, যার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মীর কাসেম। পরে তিনি হয়ে ওঠেন জামায়াতের প্রধান অর্থ যোগানদাতা। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করে সরকারেরও অংশীদার হয় জামায়াত। সে সময়ের দিকে ইঙ্গিত করে একাত্তরে স্বজন হারানো হাসিনা বলেন, এই বিচার পাবেন তা এক সময় ভাবতে পারেননি।
“অবশেষে বিচার পেয়েছি সেটাই আনন্দের। বুক থেকে পাথর নেমে গেছে। শুধু আমার নয়, যারা নির্যাতিত হয়েছে, যাদের ডালিম হোটেলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে তারাও এতে খুশি।”
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছিলেন এই নারী। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বুকে চেপে বসা পাথর নামল -মুক্তিযোদ্ধা জসিমের বোন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ