পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শঙ্কামুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা : ছদ্মনামে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গি মুরাদ : নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হতে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ : ৯টি গুলির চিহ্ন নিহতের শরীরে
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর রূপনগরে অভিযানকালে জঙ্গি হামলায় আহত চার পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে গুরুতর দু’জন এখন শঙ্কামুক্ত। তাদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এদিকে নিহত জঙ্গি মুরাদ নিজেকে জাহাঙ্গীর পরিচয়ে রূপনগরের বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তার পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পুলিশ আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখবে। জঙ্গি এই নেতা নিহত হওয়ার পর তার পরিবারকে খুঁজছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল মর্গে মুরাদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। নিহতের শরীরের মোট নয়টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। জঙ্গি মুরাদ নিউ জেএমবির প্রধান প্রশিক্ষক ছিল। প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকায় তাকে মেজর মুরাদ নামে ডাকা হতো। রূপনগরের অভিজাত বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়েই ভাড়া থাকতো সে। পুলিশের ওপর সে একাই হামলা চালায়।
শুক্রবার রাতে রূপনগরে অভিযানকালে জঙ্গি হামলায় আহত হন চার পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক ছিলেন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহীদ আলম এবং ওসি (তদন্ত) শাহীন ফকির। জঙ্গির গুলি ও চাপাতির কোপে তারা আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতেই স্কয়ার হাসপাতালে তাদের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর দুজনই শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান। এছাড়া একই ঘটনায় আহত এসআই মমিনুর রহমান ও এএসআই বোখারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারাও শঙ্কামুক্ত।
আলিশান বাড়িতে সপরিবারেই থাকত জঙ্গি মুরাদ
রূপনগর থানা এলাকার যে বাড়িতে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় জঙ্গি মুরাদ সেখানে সপরিবারেই বসবাস করত সে। গত ১ জুলাই রূপনগরের ৩৩নং সড়কের ৩৪ নম্বরের ৬ তলার আলিশান ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। সেই থেকে মুরাদ স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এডিশনাল কমিশনার দিদার আহমেদ জানান, ওই বাসায় দুটি বেড রুম, ড্রয়িং রুম ও ডাইনিং রুম রয়েছে। বাসার ভেতরে খাট ও ডাইনিং টেবিল ছাড়াও ছিল দামি সোফাসেট ও মূল্যবান মালামাল। গত ২৮ আগস্ট তারা সেখান থেকে চলে যায়। তবে সব মালামাল নেয়নি। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ওই বাড়িতে একাধিক চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশ সম্প্রতি যে বাড়িতে অভিযান চালায় সেখানে মুরাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এ পর্যন্ত মুরাদের তিনটি নাম পাওয়া গেছেÑমুরাদ, ওমর ও জাহাঙ্গীর। রূপনগরের বাসা ভাড়া নেয়ার সময় নিজেকে জাহাঙ্গীর বলে পরিচয় দিয়েছিল।
মুরাদের শরীরের ৯টি গুলি
গুলির আঘাতে নিহত হয়েছে জঙ্গি মুরাদ। তার দেহে মোট ৯টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে মাথায় তিনটি এবং বাকিগুলো হাত, পা ও বুকে। নিহত মুরাদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ এ তথ্য জানান। তিনি আরো বলেন, দূর থেকেই গুলি চালানো হয়। প্রতিটি গুলি দেহের একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেকপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ডা. সোহেল বলেন, গুলির আঘাতেই মুরাদের একটি হাত ভেঙে গিয়েছিল। ধরা পড়ার মুহূর্তে মুরাদ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুরাদ এমন কোনো চেষ্টা করেনি। ভিসেরা রিপোর্ট তৈরির জন্য মুরাদের রক্ত, চুল, থাই মাসল ও ইউরিন সংগ্রহ করা হয়েছে। কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গি ও নারায়ণগঞ্জে নিহত ৩ জঙ্গির লাশের মতো মুরাদের লাশও ঢাকা মেডিকেলের মরচুয়ারিতে রাখা হবে বলে জানান চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ।
কে এই মুরাদ
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, নব্য জেএমবিতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় মুরাদকে মেজর মুরাদ নামে ডাকা হতো। মেজর মুরাদ তার সাংগঠনিক নাম। এছাড়া ওমর, জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন নামে সে পালিয়ে বেড়াত। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযানের পরদিনই রূপনগরে অভিযান চালানো হয়। তবে তার আগেই মুরাদ পালিয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত মুরাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো মুরাদের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তার বয়স ৪৬ বছর উল্লেখ করেছে। তবে তার পিতা এবং ঠিকানা অজ্ঞাত বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। পুলিশ জানায়, গুলশানে জঙ্গি হামলা ও শোলাকিয়ায় হামলা চালানো জঙ্গিদের প্রশিক্ষক ছিল মুরাদ। সে নব্য জেএমবির নেতা এবং নারায়ণগঞ্জে নিহত হলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড। মুরাদ রূপনগরের ভাড়া বাসায় সঠিক পরিচয় নিয়ে ওঠেনি। সেখানে নিজের নাম জাহাঙ্গীর বলেছে। ঠিকানাও ঠিক নয়। পুলিশের দাবি, নিহত মুরাদ যে জঙ্গি, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
মুরাদের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে
নিহত জঙ্গি মুরাদের পরিচয় শনাক্ত করতে তার আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে। এই ছাপ মিলিয়ে দেখবে নির্বাচন কমিশন। গতকাল শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, নিহত জঙ্গি মুরাদ তার নাম-পরিচয় গোপন করে রূপনগরের বাসা ভাড়া নিয়েছিল। তাই তার পরিচয় শনাক্ত করতে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখে প্রকৃত নাম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মুরাদের পরিবারকে খুঁজছে পুলিশ
রূপনগরের বাসায় পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করছিল জঙ্গি মুরাদ। তার সঙ্গে স্ত্রী ও দুই মেয়েও থাকত। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রূপনগরের বাসায় গত ১ জুলাই পরিবার নিয়ে ভাড়ায় ওঠে মুরাদ। সেখানে সপরিবারে ২৮ দিন বসবাস করেছে। গত ২৮ জুলাই পরিবারসহ বাসা ছেড়ে চলে যায়। বাসাটি এর পর থেকে তালাবদ্ধই ছিল। এর পর থেকে সে পরিবার নিয়ে অন্য কোথাও ছিল। অভিযানের পর ওই বাসা থেকে চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, নিহতের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে জঙ্গি কার্যক্রম ও সহযোগী জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে। তাই মুরাদের সহযোগীদের পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ৩৪ নম্বর বাসায় প্রথমে অভিযান চালায় রূপনগর থানা পুলিশ। পরে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটি) ইউনিট ও ডিবি এ অভিযানে যোগ দেয়। পুলিশের এ অভিযানে গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় মুরাদ। অপরদিকে জঙ্গি মুরাদের হামলায় আহত হন রূপনগর থানার ওসি, ওসি (তদন্ত)-সহ পুলিশের মোট ৪ কর্মকর্তা। তারা এখনো চিকিৎসাধীন।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে রূপনগর আবাসিক এলাকার ওই বাসায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়। পুলিশ বাসায় প্রবেশ করতে গেলে মুরাদ প্রথমে পিস্তল দিয়ে গুলি করে এবং ছুরি দিয়ে পুলিশকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ সদস্যরাও এ সময় পাল্টা গুলি চালালে মুরাদ মারা যায়।
এদিকে এ ঘটনায় গতরাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে রূপনগর থানা পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।