পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুজিব শতবর্ষেই দেশে চালু হচ্ছে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে সারাদেশে আধুনিক ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার। শুধু নামাজ আদায় নয়, মসজিদ হবে গবেষণা, ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। আগামী ১৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পর্বে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন।
মসজিদ হচ্ছে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার অন্যতম স্থান। এ দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য মসজিদে একত্র হয়ে থাকেন। নবনির্মিত মডেল মসজিদগুলোতে আগত মুসল্লিরা নিয়মিত ইসলামি জ্ঞানচর্চায় অংশ নিতে পারবেন। এমন লক্ষ্য নিয়েই সারাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ জেলা-উপজেলায় এসব মডেল মসজিদ গড়ে তুলছে সরকার।
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পরিষদের জমি ব্যবহারের জন্য সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম শেখ আব্দুল্লাহর সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব মসজিদ নির্মাণে ৮৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান গতকাল সোমবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সুধি সমাবেশে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে যেভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে, তেমনি নিজস্ব অর্থায়নে মডেল মসজিদও নির্মাণ করা হচ্ছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নতি হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় মডেল মসজিদগুলো নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণের স্থান এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে লোকসমাগম বেশি হয়। এতে করে মানুষ ধর্মীয় কাজে সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মসজিদে ইমাম ও হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। মহিলাদের নামাজের পৃথক ব্যবস্থা, ইফার অফিস এবং মুসাফিরখানাও থাকবে।
মডেল মসজিদ প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান গতকাল রাতে ইনকিলাবকে বলেন, মুজিববর্ষে ১৭০টি মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে ইনশা আল্লাহ। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আসন্ন রোজার আগেই ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন। সারাদেশে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলেও তিনি জানান।
প্রকল্প পরিচালক আরোও বলেন, ৫৬০টি মডেল মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। প্রকল্পের মোট কাজের ৩২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়ে নজিবর রহমান বলেন, সেপ্টেম্বরে ৬০টি এবং মুজিববর্ষের শেষ ভাগে ডিসেম্বর মাসে আরও ৬০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজস্ব অর্থায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে সরকার। মুসলিম বিশ্বের এই প্রথম বাংলাদেশ সরকার প্রধান একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছে। এর আগে কোনো মুসলিম শাসক বা সরকার প্রধান এক সঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ করেননি।
৪০ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলার জন্য ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার। বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নীচ তলা ফাঁকা থাকবে।
একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা; উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরপক্ষে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯ শ’ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপেক্সে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরী, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও অটিজম সেন্টার, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে। মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মুজিববর্ষে প্রথম পর্বে যে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে তা’হচ্ছে ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা, ফরিদপুর জেলার মধুখালী ও সালথা উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া ও কুলিয়ারচর, মানিকগঞ্জ জেলার শিবায়ল উপজেলা, রাজবাড়ি জেলার সদর উপজেলা, শরিয়তপুর জেলার সদর উপজেলা ও গোসাইরহাট উপজেলা। রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও কাহালু উপজেলা, নওগাঁ জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলা, পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা, সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা সদর ও সদর উপজেলা, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলা। রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার খানসামা ও বিরল উপজেলা, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা, পঞ্জগড় জেলার দেবীগঞ্জ ও সদর উপজেলা, রংপুর জেলার জেলা সদর, মিঠাপুকুর, সদর উপজেলা, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা, ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলা। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও সদর উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও ও তারাকান্দ উপজেলা। বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার সদর উপজেলা, ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা।
চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর ও নবিনগর উপজেলা, চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলা। চট্টগ্রাম জেলার জেলা সদর, লোহাগড়া, মিরমরাই ও সন্দীপ উপজেলা, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলা, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলা, নোয়াখালী জেলার সুবর্নচর উপজেলা। খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার জেলা সদর, চুয়াডাঙ্গ জেলার জেলা সদর, কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলা এবং সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।