Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্ধ হচ্ছে না ডিজিটাল প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদ

সারা দেশে ৭০টি বেশি প্রতারক চক্র এক বছরে গ্রেফতার পাঁচ হাজার

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রতিদিন সাধারণ মানুষ ডিজিটাল প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়ছে। ইন্টারনেট, ইউটিউব ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই ডিজিটাল প্রতারক চক্রগুলি। এদের উৎপাত দিনকে দিন বেড়েই চলছে। প্রতারকদের নিত্যনতুন কৌশলে সাধারণ মানুষ ধরাশায়ী হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার চাকরিজীবীরা এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ৭০টি বেশি এ ধরনের প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী। এদের মধ্যে অনেকেই গ্রেফতারের পর আবার আগের মতোই প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ার তথ্য রয়েছে সংশ্লিষ্ট্রদের কাছে।

একটি সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ডিজিটাল প্রতারণার ভয়ঙ্কর তথ্য। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন রাজধানীসহ সারাদেশে ছোট-বড় প্রতারণার শিকার হচ্ছে শত শত মানুষ। আর প্রতিবছর সারাদেশে ছোট-বড় প্রতারণার শিকার হচ্ছে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ। এই ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শত শত কোটি টাকা খুইয়েছেন তারা। অনেকে জীবনের সব সঞ্চয় খুইয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। কিছু ভুক্তোভোগী পুলিশের কাছে গেলেও অধিকাংশই লোকলজ্জার ভয়ে ও ঝামেলার ভয়ে পুলিশ কাছে যায় না। এতে বহু প্রতারণার ঘটনা আড়াল হয়ে যায়। আইনশৃখলা প্রয়োগকারী সংস্থা নানা পর্যায়ের নজরদারির কারণে গত এক বছরে ভয়ঙ্কর প্রতারক সাহেদ, ডা. সাবরিনা ও আরিফ দম্পত্তিসহ ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে শতাধিক বিদেশি নাগরিক রয়েছে। এসব ভয়ঙ্কর প্রতারকের পিলে চমকানো কৌশল জেনে অবাক হচ্ছেন পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা। তারপরও থেমে নেই প্রতারকচক্রের কারসাজি।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে অনলাইনভিত্তিক কাজ বেড়েছে। মানুষের প্রযুক্তিমুখী হওয়ার সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে অপরাধচক্র। তারা সাইবারজগতে ফাঁদ পেতে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, ফেলছে বিপদে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ধরা পড়লেও সব ধরনের প্রতারণার সাজা একই হওয়ায় বড় অপরাধ করেও অনেকে ছাড় পেয়ে আরও বড় অপরাধে জড়াচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বর্তমানে অপরাধের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে সাইবার অপরাধ। দেশের অধিকাংশ মানুষের সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে খুব একটা জানাশোনা নেই। ফলে না বুঝেই ইন্টারনেটে অনেক কাজ করে বিপদে পড়ছে, প্রতারকদের খপ্পরে পড়ছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

অতি স¤প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন টার্মিনাল-৩-এ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক ও সুপারভাইজর পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে একটি চক্র অন্তত ১৫০ জনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টার্মিনাল-৩ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার এ ধরনের নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তিই গণমাধ্যমে দেননি। তাহলে কিভাবে এমন নিয়োগের কথা জানতে পারলেন চাকরিপ্রার্থীরা? প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। ভুয়া নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক পদে চাকরি দিতে ৫০হাজার এবং সুপারভাইজর পদের জন্য এক লাখ টাকা ‘ঘুষ’ দাবি করে। টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতারণার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় সিআইডি গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল প্রতারকচক্রের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডিতে এমন অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি ‘দুর্লভ নাসা’র কয়েন বিক্রির নামে প্রতারণা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে পিবিআই। প্রতারক চক্রটি প্রলোভন দেখাতো-কাঠের তৈরি কথিত এ কয়েন কিনে আবার বিক্রি করলে কোটি কোটি টাকা লাভ হবে। গবেষণার কাজে নাসা কয়েনটি ব্যবহার করে। এটি কিনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা যাবে। কয়েনটির ব্যাপক চাহিদা। একেকটির ক্রয়মূল্য ১০কোটি টাকা। ২ মার্চ রাতে রাজধানীর রামপুরা ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি অভিনব প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এরা জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে বিভিন্ন লোকের এনআইডির ছবি পরিবর্তন করে ওই এনআইডি দিয়ে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ তুলে লাপাত্তা হয়ে যেত। ঋণ নেয়ার কাজে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স, ভুয়া টিআইএনও ব্যবহার করত চক্রটি। এভাবে এরা ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

২৩ ফেব্রুয়ারি একটি প্রতারক চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এরা রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে ২৪ মাসে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ চক্র বিভিন্ন স্থানে অফিস খুলে বসে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিত। এরপর অফিস পরিবর্তন করে আবার নতুন নামে প্রতারণা চালাত। এভাবে তারা ৫ শতাধিক লোককে সর্বস্বান্ত করেছে। এদের টার্গেটের শিকার হয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ এলাকা থেকে জহিরুল আলম, রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম ও উত্তম তালুকদার নামে ৪ প্রতারককে গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা চাকরি এবং বিদেশে পাঠানোর নামে চাকরি প্রার্থী লোকজনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিআইডি একজন কর্মকর্তা জানান, জহিরুল ইসলাম নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করত। এর আগে নাসির নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে এসএসএফ কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা করত। বগুড়ার এক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। বিয়ের কথাও ছিল প্রায় পাকাপাকি। এ অবস্থায় মেয়ের বাবা খোঁজ নিতে এসে বুঝতে পারেন সে প্রতারক। পরে পুলিশ তাকে গণভবন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিজিটাল প্রতারণা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ