Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ড. কলিমুল্লাহর নাকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ!

বেরোবি’র উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৪৫ অভিযোগ তদন্ত করবে ইউজিসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০৪ এএম

কলিমুল্লাহর বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত-রুচি বিবর্জিত : শিক্ষা মন্ত্রণালয়


ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিপপের হয়ে ‘বিশ্ব দরবারে’ সাফাইস্বাক্ষী দেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তারই পুরস্কার হিসেবে তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য পদ পান। ২০১৭ সালের জুন মাসে সাপ্তাহে ৫ দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করার শর্তে তাকে বেরোবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি মাসে গড়ে ৪ থেকে ৬ দিন ক্যাম্পাসে যান এবং সারামাস ঢাকায় অবস্থান করেন। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে; সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ৪৫টি অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগ তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পত্র গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষক বরাবর পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে এই পত্রের অনুলিপি ভিসির একান্ত সচিবকেও দেয়া হয়েছে। এতে ১৪ মার্চ বেলা ১১টায় তদন্তকাজ পরিচালনা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অতপর এ নিয়ে গতকাল রাজধানী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেরোবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তিনি বলেছেন, দায়িত্বে অবহেলা করাটা চরিত্রের মধ্যে নেই। বরং তিনি প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দৈনিক ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা কাজ করেন। মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমান বলে জানান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে দোষারোপ করেন। অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, এ ধরনের জায়গা থেকে এমন অভিযোগ তোলা রাজনৈতিক অপকৌশল। এ সময় তিনি নিজের এলাকার সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমার পরিচিত সবাই জানেন, আমি একজন কাজ পাগল মানুষ। দায়িত্বে অবহেলা আমার চরিত্রে নেই। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমি বেরোবির উপাচার্য। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, উপাচার্যের পদ আবাসিক নয় রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব আবাসিক।

বেরোবি উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা শিক্ষামন্ত্রীর আশ্রয়, প্রশ্রয় ও আশকারায় হয়েছে। আগের উপাচার্যের সময় একটি বিশেষ এলাকা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাই অবরোধ আন্দোলন করে আসছেন। আমাকে ঘেরাও করতেই নাকি ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- আমাকে পাওয়া যায় না, আমি নিখোঁজ হয়ে যাই, আমি ঢাকা থাকি। অথচ আমি প্রতিদিন ২০/২২ ঘণ্টা কাজ করি। ঢাকায় থাকলে লিয়াঁজো অফিসে কাজ করি। রংপুরে থাকলে বাসায় থেকে কাজ করি। দায়িত্বগ্রহণের পর স্বাভাবিকভাবেই সব চলছিল। কিন্তু মিথ্যা ও অসংলগ্ন যেসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে দেয়া হচ্ছে, তা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
এদিকে আগামী ১৪ মার্চ বেরোবির উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৪৫ অভিযোগের তদন্ত শুরু হবে। ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে এই ৪৫ অভিযোগ করেন। তারা সরেজমিন তদন্তের দাবি জানান। এখন ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন করছে অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য।

উপাচার্যের বিরুদ্ধে আনা ৪৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়েও অনুপস্থিত থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছামতো পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক-প্রশাসনিক পদ দখল, ক্রয়-প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন ইত্যাদি

উল্লেখ. গত ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুস্থ-নিরপেক্ষ হয়েছে এবং ভোটারগণ নির্বিঘ্ন ভোট দিয়েছে বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অভিমত দিয়েছিলেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
এদিকে গতকাল রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওামী লীগ পন্থী শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ১৩৫৬ কর্ম দিবসের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ১১১৯ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।

কলিমুল্লাহ’র বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত-রুচি বিবর্জিত: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য দিয়েছে তা অনাকাক্সিক্ষত ও রুচি বিবর্জিত বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বরাবর তদন্তের জন্য প্রতিবেদন প্রেরণের অনুরোধ জানানো হয়। ইউজিসি তাদের নিয়ম অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণে তদন্ত সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করে। ইউজিসি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এজন্য এ প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ নেই এবং এ সংক্রান্ত নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অভিযোগ অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

কলিমুল্লাহ সরাসরি শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন যা নিতান্তই অনভিপ্রেত। তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে যে সভাটিতে মন্ত্রীর দেরিতে উপস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন সে সভাটি গত ১৯ ফেব্রæয়ারি সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরে সভাটির সময় পরিবর্তন করে বিকালে নেয়া হয়। ঐ একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকা প্রণয়ন সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা থাকায় এবং সে সভাটি ভিসিদের সাথে আলোচনার পূর্বে হলে ভালো হয় এজন্য সভার সময় পরিবর্তন করা হয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন ন্যূনতম নির্দেশিকার সভাটি নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অনেক দেরিতে হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, সচিব এবং ইউজিসির চেয়ারম্যান সহ প্রতিনিধিবৃন্দের সভায় যোগ দিতে দেরি হয়। মন্ত্রী উপস্থিত সকলের কাছে অনিচ্ছাকৃত এই বিলম্বের জন্য বিশেষভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেদিনের সবারই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কলিমুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনকই নয় নিতান্তই রুচি বিবর্জিত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকাশনার জন্য মন্ত্রীর একটি বাণী একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাওয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বড় ধরনের ছাত্র আন্দোলন চলছিল। সে পরিস্থিতিতে মন্ত্রী সে বাণীটি দেয়া সমীচীন মনে করেননি এবং এরপরে বিগত এক বছরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মন্ত্রীর কাছে আর কোন বাণী চাওয়া হয়নি। মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে রাজনীতিকে জড়িয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন কলিমুল্লাহ। যার সাথে মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ের কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কলিমুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে যেসব বক্তব্য রেখেছেন সে সকল বিষয়ে এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে। কারণ তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন স¤প্রতি মন্ত্রণালয়ে ইউজিসির মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। সে বিষয়ে শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভিসিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।

ভিসি কলিমউল্লাহকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা
একের পর এক দুর্নীতি, শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা এবং ঢাকায় বসে মিথ্যাচার করার অভিযোগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ড. কলিমুল্লাহ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ