Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের ফারাক্কানীতি বন্ধুত্বের নয় -খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আ’লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছিল জিয়া ফিরিয়ে এনেছেন জঙ্গিদের কেন গুলি করে মেরে ফেলা হয়?
স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের ফারাক্কা নীতির সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্ষাকালে ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশ প্লাবিত হয়; শুকনো মৌসুমে যতটুকু পানি পাওয়ার কথা তা-ও পাইনি। তখন পানির অভাবে খরা হয়। এই নীতিকে তো বন্ধুত্ব বলে না। জঙ্গিদের গ্রেফতারের পর মেরে ফেলা হয় কেন তা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে আর শহীদ জিয়াউর রহমান তা ফিরিয়ে এনেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় ‘অরাজগতা-হট্টগোল-বিশৃঙ্খলা’ পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া দলের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা দেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখবো। আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখবো। কিন্তু মাথা উঁচু করে আমরা থাকবো। মাথা নিচু করে পেছনের দরজা দিয়ে আমরা শুধুমাত্র ক্ষমতায় গিয়ে সবকিছু বিক্রি করে দেয়ার জন্য নয়।
ফারাক্কা বাঁধের ফলে দেশে উত্তরাঞ্চলে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয়। এভাবে আমরা প্রতিটি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। এখনো আমরা যেসব চুক্তি শুনতে পাই, দেখতে পাই, সেটা কিন্তু একটাও দেশের পক্ষে বা জনগণের স্বার্থে নয়। সবকিছু করা হচ্ছে দেশের স্বার্থবিরোধী ও জনগণের বিরুদ্ধে। কি সেই চুক্তি তা কেউ জানে না, আমরাও জানি না। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের স্বার্থবিরোধী বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও আমরা আরও যেসব চুক্তি শুনতে পাই বা দেখতে পাই তার একটাও দেশের পক্ষে বা জনগণের স্বার্থে নয়। সমস্ত কিছু করা হচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে, দেশের স্বার্থবিরোধী। আর কী সেই চুক্তিগুলো, তা সবাই জানে না। আমরাও জানি না কী করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বিএনপি একটি প্রগ্রেসিভ দল। বাংলাদেশটা একদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে, মানুষের আয় বাড়বে, গড় আয়ু বাড়বে, শিক্ষার হার বাড়বে এবং সর্বক্ষেত্রে উন্নতি করবে। আমাদেও দেশের মানুষ ও ছেলেদের দিয়ে এই উন্নতি করার সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই দিন আসবেই আসবে।
আমি বলতে চাই, আমাদের সকলকে ধৈর্য ধরে, আমাদের সাহস নিয়ে এবং কোনো অরাজগতা, হট্টগোল বিশৃঙ্খলা নয়, যা নির্দেশ দেয়া হবে, সেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ। সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাবে এবং এই দেশে হারানো গণতন্ত্র আবার ফিরে আসবে। এজন্য দলের নবীন ও প্রবীণ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বানও জানান খালেদা জিয়া।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭৮ সালের এই দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।
ভোরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল সোয়া ১১টায় শেরে বাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ সিনিয়র নেতারা।
জঙ্গি প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, কিছুদিন পর কথায় কথায় সরকার জঙ্গি ধুয়া তুলে। অমুক জায়গায় এতজন জঙ্গি আছে, ওতজন জঙ্গি পাওয়া গেছে, তারপরে জঙ্গিগুলোকে ধরে। তারা সত্যিকারের জঙ্গি কিনা জানি না। কিছু লোক তাদের ধরা থাকে। এগুলোকে না খেয়ে খেয়ে দীর্ঘদিন বন্দি করে রেখে রেখে তাদের দাড়ি-চুল-টুল এতো বড় হয়ে যায়, তাদের ভুতুড়ে একটা চেহারা হয়ে যায়। তারপরে তাদেরকে জঙ্গি বলে সামনে (গণমাধ্যম) নিয়ে আসে। আর পুলিশে বর্তমানে কিছু আছে, তারা অস্ত্রশস্ত্র সুন্দর করে সাজিয়ে বলে, এরা জেএমবি। এরা এই করেছে, সেই করেছে, মানুষ মেরেছে, এদের আমরা ধরেছি। আর কিছুদিন পরে দেখা যায়, তাদেরকে গুলি করে মেওে ফেলা নেয়া হয়। কেনো গুলি করে মেরে ফেলা হয়?
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এখানে তো আইন আছে, আদালত আছে। পুলিশ আছে, তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে, দরকার হলে আদালতে নিয়ে যাবে। কিন্তু তা না করে গুলি মেরে ফেলা হয়, কারণটা কী? এর ভেতরে রহস্য নিশ্চয়ই আছে। আদালত থেকে রিমান্ডে এনে একজন জঙ্গিকে হাতকড়া অবস্থায় বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যাকা-ের ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে উল্লেখ করে যশোর, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার ঘটনার কোনো জঙ্গিকে আটক করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। ওই সময়ে ওইসব ঘটনায় একটা জঙ্গিও তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ধরেনি, কাউকে সাজা দেয়নি। বিএনপি যখন সরকারের আসলো তখন আমরা জঙ্গিদের ধরেছি। হরকাতুল জেহাদ ও জেএমবিকে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। এদের বড় বড় নেতা যেমন বাংলা ভাই, শাইখ আবদুর রহমান তাদের ধরা হয়েছে। তাদেরকে জীবিত অবস্থায় ধরে বিচার করা হয়েছে, শাস্তি দেয়া হয়েছে।
রামপাল প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমি এখনো বলব, রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়া উচিত নয়। এই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। এমনিতে ওই অঞ্চলে একবার সিডর, একবার আইলা হয়েছে, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রামপাল প্রকল্প যদি হয়, আমাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। আমরা কোনো সময় বলিনি যে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে। আমি বলেছি, বিদ্যুৎ প্রয়োজন আছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে। তবে সেটা অন্য জায়গা হতে পারে, যেখানে মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি হবে না।
তিনি বলেন, গায়ের জোরে সরকার রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে চাচ্ছে। অথচ প্রতিবেশী দেশে এই প্রকল্প করতে চেয়েছে কিন্তু সেদেশের জনগণ তার বিরোধিতায় সেটা হয়নি। ওই দেশের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত বলে তারা জনগণের আন্দোলনের মুখে সেই প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার হচ্ছে, দেশের স্বার্থবিরোধী, জনগণবিরোধী এবং উন্নয়নের কথা বলে কোনো উন্নয়ন করেনি। এমন এমন বড় বড় প্রকল্প নেয় যে, দুই মাস পর পর উন্নয়ন ব্যয় বাড়ায়। এই বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে কমিশন। প্রত্যেকটা প্রকল্পের পেছনে কমিশনের ব্যাপার আছে, ওই কমিশনের টাকা পকেটে নিয়ে দেশের বাইরে পাচার করা হয়। পদ্মাসেতু প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধির কথা বলেন বেগম খালেদা জিয়া।
ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আর্থিক ব্যাংকসমূহ থেকে বিরাট অংকের ঋণ নিয়ে তা দেশের বাইরে পাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠান সচল থাকতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের কথা যদি বলি। নির্বাচন কমিশন কী কমিশন আছে? এটি আওয়ামী লীগের একটা অঙ্গসংগঠন হয়েছে। সিভিল প্রশাসনের কথা বলি। এটি দলীয়করণ করা হয়েছে। বহু অফিসার এখন ওএসডি হয়ে আছেন। কেনো ওএসডি, তারা নাকি বিএনপি করেন বা বিএনপির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে, সেজন্য তারা ওএসডি। প্রশাসনের বহুলোককে বিদায় করা হয়েছে। এথেকে হিন্দু অফিসারও বাদ যায়নি।
দেশে সরকার ও বিরোধী দলের জন্য আইনের দুই রকম প্রয়োগ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা খুন করলো, নারী নির্যাতন করলো, লুটপাট করলো, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গায়ের হাত দিলো, সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালালো, তারা কিন্তু অপরাধী নয়, তারা অপরাধী নয়। তাদের ধরা হয় না।
আর বিএনপির নেতা-কর্মীরা কিছু না করলেও তাদের গ্রেফতার করা হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়। কত নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন। আমাদের জন্য এরকম আইন। আজকে বিচার বলে কিছু নাই।
দলের নেতৃত্বে ব্যাপকসংখ্যক নবীনদের স্থান দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তাদেরকে জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে কাজ করার আহ্বানও জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন।
মিডিয়া প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এই মিডিয়া কী সব কথা লিখতে পারে, সব কথা প্রচার করতে পারে। পারে না। সেখানেও নিয়ন্ত্রণ আছে। যারা এসে সেখান বাধার সৃষ্টি করে, তাদেরকে (সাংবাদিক) স্বাধীনভাবে লিখতে দেয় না। সেজন্য বিদেশিদের একথা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সকল দলের সমান অধিকার। আইনের শাসন সকলের জন্য সমান। এসব এখন এখানে নাই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আসম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অঙ্গসংগঠন যুব দলের আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের নুরে-ই আরা সাফা, মহানগর বিএনপির কাজী আবুল বাশার, ছাত্র দলের রাজীব আহসানও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নাজমুল হক নান্নু, আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Raju Kor ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:২১ এএম says : 0
    right.
    Total Reply(0) Reply
  • Tania ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৪১ এএম says : 0
    রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়া উচিত নয়। এই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতের ফারাক্কানীতি বন্ধুত্বের নয় -খালেদা জিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ