Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষি যন্ত্রাংশে ঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনীহা

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : কৃষিতে শ্রমিক সঙ্কটের পাশাপাশি হেক্টর প্রতি ফলন বাড়ানো ও ফসল-উত্তর ক্ষতি কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে কৃষি যন্ত্রাংশ। তবে এসব যন্ত্রাংশ ক্রয়ে বড় ধরনের অর্থের প্রয়োজন বিধায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে মোট কৃষি ঋণের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বিতরণ করা হচ্ছে। আর এক বছরের ব্যবধানে ঋণ প্রদান কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মোট ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে দেশের সবগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে কৃষি যন্ত্রাংশে মাত্র ১৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। যদিও এ ঋণের পরিমাণ গত অর্থ বছরে ছিলো ১৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের একটি দেশে পরিণত করতে প্রতি বছর ৭ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি দরকার। সেখানে কৃষিক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪-৪.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। সেটি অর্জনে ক্রমহ্রাসমান আবাদী জমিতে উন্নত উপকরণ ও নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। তাছাড়া শস্য খাতে উৎপাদন এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আর সেটা ধরে রেখেই পর্যায়ক্রমে আরো উন্নত করতে অবশ্যই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তাই কৃষিখাতকে টেকসই, সমৃদ্ধ এবং কৃষি ঋণকে অন্তর্ভূক্তিমূলক করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর ব্যাংকগুলো জোর দিতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সুপারনিউমারি অধ্যাপক ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম নজরদারী ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। তবে এ খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের স্বার্থেই ঋণ প্রদানে বহুমুখিতা আনতে পারে। প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশে ঋণ দিলে শস্য উৎপাদনে অবশ্যই কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হবে। আর খরচ কমলে কৃষকের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। ফলে সে দ্রুত ঋণ ফেরত দিতে উদ্বুদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি যন্ত্রপাতি যেমনÑ ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, বারি সিডার (বীজ বপণ যন্ত্র), বারি উইডার (আগাছা নিড়ানি যন্ত্র), অটোমেটিক সিডলিং নার্সারি মেশিন ইত্যাদি উপখাতে ব্যবহারকারী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ঋণের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সারের অপচয় রোধ, উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং এর বিপরীতে উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যাংকসমূহ দানাদার ও গুঁটি ইউরিয়া তৈরির মেশিন প্রস্তুতকারীদের ঋণ প্রদান বিবেচনা করতে পারবে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য কারণে পাকা ফসল ঘরে উঠাতে যাতে দেরি না হয় সেজন্য ফসল কাটা/মাড়াইয়ের যন্ত্র যেমন- পাওয়ার থ্রেসার, পাওয়ার ইউনোনেয়ার ও ড্রায়ার ইত্যাদি যন্ত্র বাবদ কৃষি ঋণ বিতরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছে। এজন্য প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি ঋণ বিতরণ করছে। তবে যন্ত্রাংশে খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে হলে অবশ্যই এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৃষকের পক্ষ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে ব্যাংকগুলো ইতিবাচকভাবে ঋণ প্রদানে উদ্বুদ্ধ হবে।
জানা গেছে, দেশের সকল বেসরকারি ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২ শতাংশ হারে এবং সর্বশেষ চালুকৃত ৯টি বেসরকারী ব্যাংকসমূহের মোট ঋণ ও অগ্রিমের ৫ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি ও পলী ঋণ কর্মসূচির আওতাভুক্ত খাত ও উপখাতসমূহ হলোÑ শস্য বা ফসল, মৎস্য সম্পদ, প্রাণিসম্পদ, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন, শস্যগুদাম ও বাজারজাতকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় উৎসারী কর্মকা-। তবে মোট ঋণের ৬০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য খাতে এ ধরনের কোন লক্ষ্যমাত্রা না থাকায় ব্যাংকগুলো স্বাধীনভাবে ঋণ বিতরণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ খাত। তবে কৃষি ঋণের অর্থের খাত ভিত্তিক সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে বলে জানান কৃষি ঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাস চন্দ্র মল্লিক।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি যন্ত্রাংশে ঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনীহা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ