পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
২০২১ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাইড্রোজেন চালিত কার যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আনা হবে। জনসচেতনতা ও প্রদর্শনের জন্য প্রকল্পে সংযোজিত হবে হাইড্রোজেন রি-ফুয়েলিং স্টেশন ও হাইড্রোজেন ফুয়েলসেল কার। পর্যায়ক্রমে তার প্রসারতা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে দাবি করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নগরীরর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ (আইইবি) টেকসই ও নবায়নযোগ্য কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) আয়োজিত ‘প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব হাইড্রোজেন ফুয়েল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় স্রেডা’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আফতাব আলী শেখ। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আবদুস সালাম।
সিনিয়র সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? গ্যাস বা কয়লা একদিন ফুরিয়ে যাবে আমাদের বিকল্প চিন্তা ভাবনা করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া হাইড্রোজেন জ্বালানিতে অনেক এগিয়ে গেছে। জার্মানিও অনেক এগিয়ে গেছে। সারা পৃথিবী এটা নিয়ে কাজ করছে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? এক বছরের মধ্যেই হাইড্রোজেন কার আসবে।
সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলস্তর যেমন বৃদ্ধি পায়, বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন হয়, ম্যালেরিয়া এবং নতুন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তেমনই কৃষি উৎপাদনশীলতা কমে যায়। তবে হাইড্রোজেন জ্বালানি পরিবেশ বান্ধব। বায়ু ও পানি থেকে এই জ্বালানি তৈরি করা যায়। যতোদিন হিমালয় পর্বত আছে ততোদিন দেশে পানির অভাব হবে না। হাইড্রোজেন জ্বালানি দিয়ে কিছু গাড়ি ঘোড়া চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও বায়োমাস আছে। পানি ও বায়েমাাসকে কাচাঁমাল হিসাবে সফল ব্যবহারে অসংখ্য ইউনিট হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশে কাচাঁমাল হিসাবে এ দুটির সফল ব্যবহারের মাধ্যমে একটি মজবুত জ্বালানি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর,উইন্ড ও হাইড্রো) সাধারণত বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় অন্যথায় সম্ভাবনাময় হাইড্রোজেন জ্বালানি হিসাবে দেশকে স্বনির্ভর করতে সক্ষম।
হাইড্রোজেনকে পরিবহন, শিল্পকারখানা এবং বিল্ডিংয়ের তাপ ও শক্তি উৎপাদনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। প্রচলিত জ্বালানির পরিপূরক জ্বালানি হিসাবে ইহার ব্যবহার সম্ভব। বৃহৎ পরিমাণের বিদ্যুৎশক্তিকে হাইড্রোজেন (রাসায়নিক শক্তিতে) শক্তিতে মজুদ করে পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে (প্রয়োজনে) জ্বালানি চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা যায়।
বক্তারা বলেন, সীমিত আকারের হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য পাইলট প্লান্ট স্থাপন, হাইড্রোজেন মজুদের জন্য ইনোভেটিভ পদার্থের সংশ্লেষ বা উন্নয়ন এবং হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রস্তুতকরনের পাশাপাশি প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট দক্ষ জনবল তৈরী করা চলমান হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ২২৭ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন টন বায়োমাস উৎপন্ন হয়েছে যা প্রায় ৪৭মিলিয়ন টন বায়োমাস উৎপন্ন হয়েছে যা প্রায় ৪৭ দশমিক ৭১৪মিলিয়ন টন কয়লার সমতুল্য, যা হতে ১৮ দশমিক ২২ মিলিয়ন টন হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভব। যার প্রকৃত মূল্য ৩৪ লাখ ২৮ হাজার ০৮৩ মিলিয়ন টাকা যা বাংলাদেশের আমদানিকৃত জ্বালানি মূল্যের অধিক। অন্যদিকে কাঁচামাল হিসাবে পানির উপযোগীতাও সম্ভাবনা শধুমাত্র প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা লাভ মাত্র। ৯ লিটার পানি তড়িৎ বিশ্লেষনে হতে ১ কেজি হাইড্রোজেন ও ৮ কেজি অক্সিজেন পাওয়া যায় যার উৎপাদন খরচ অপারেশন টাইমের ভিত্তিতে দেড় থেকে ১০ ডলার।
প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বেশী হলেও পরিবেশ রোধ ব্যবস্থাপনা এবং বাই-প্রোডাক্ড খরচ বিবেচনায় নিলে হাইড্রোজেন উৎপাদন খরচ প্রতিযোগীতামূলক হয়।
প্রচলিত জ্বালানি ব্যবস্থা হতে হাইড্রোজেন ইকোনমিতে ট্রানজিশনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপি হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের কর্মসূচীকে ৪টি দশায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ম দশায় প্রযুক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫ সাল। ২য় দশায়, প্রাথমিক বাজার স¤প্রসারণ লক্ষ্যমাত্রা ২০১৮ সাল। ৩য় দশায়,বাজার স¤প্রসারণ ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ লক্ষ্যমাত্রা ২০৩৫ সাল। ৪র্থ দশা; হাইড্রোজেন ইকোনমি অনুধাবন/পূর্ণমাত্রার ইহার ব্যবহার। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ২০১৮ সাল হতে গবেষণা অবকাঠামো নির্মানসহ হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ ও হাইড্রোজেন ফুয়েল প্রস্তুতের সেলের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা ছাড়া পর্যাপ্ত হাইড্রোজেন উৎপাদনের পন্থা ও সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। এই চাহিদা হতে হবে বিভিন্ন উৎস ও অসংখ্য প্রান্তিক ব্যবহারকারী যারা বিভিন্ন যন্ত্রে ও ব্যবহার সামগ্রীতে ইহার প্রয়োগ নিশ্চিত করে। একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া জনসাধারণ এর ব্যবহারে যতœবান হবে না। ডিকার্বনাইজেশন পলিসির আবশ্যকতা ও দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের উপর সরকারের পলিসির বাস্তবায়ন পদক্ষেপ চাহিদা সৃষ্টিতে প্রধান ভ‚মিকা রাখবে। যে সকল সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বাস্তবায়নে হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্প, বিসিএসিআইআর কাজ করছেÑ দেশীয় কাচাঁমাল (পানি ও বায়োমাস) ব্যবহারে হাইড্রোজেন উৎপাদনের উপযুক্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এনার্জি মিক্সে হাইড্রোজেনকে সংযোজন করে এনার্জি মিক্সে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শেয়ারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। বাংলাদেশের জ্বালানি ও শক্তি সংকট মোকাবেলায় সম্ভাবনাময় হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ এবং সরবরাহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা। উদ্ভাবিত হাইড্রোজেন উৎপাদন পাইলট প্লান্ট বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ও গৃহে স্বল্প খরচে স্থাপনের মাধ্যমে শক্তি ও জ্বালানি চাহিদা পূরণের প্রযুক্তি সহায়তাদান। দেশীয় কাঁচামালের প্রয়োগে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রস্তুতকরণ সহ হাইড্রোজেন চালিত সমন্বিত হিট ও পাওয়ার ইউনিট, বয়লার, বার্নার ও রূপান্তরিত গ্যাস টারবাইন এর মাধ্যমে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদনের মাধ্যম এনার্জি চাহিদা মেটানো। এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে, নবায়নযোগ্য ও দূষণমুক্ত জ্বালানি প্রযুক্তির নিশ্চিতকরনসহ ক্লিন এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ ও বাস্তবায়ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।