পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তীব্র সমালোচনার একদিন পর নরম সুর
ইনকিলাব ডেস্ক : ভালো সন্ত্রাসী আর খারাপ সন্ত্রাসীর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করার একদিন পর নিজের কথায় ভারসাম্য আনতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বুধবার বলেন, পাকিস্তান নিজেও ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার এবং সহিংসতামূলক কাজে দেশটির ৫০ হাজার লোক নিহত হয়েছে। খবর লাইভমিন্ট।
দিল্লীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি)-তে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি তীব্র ‘পুশব্যাক’ ও ‘ব্লোব্যাক’ সম্পর্কে বলেন যা এ ধরনের গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ব্যবস্থা গ্রহণ কঠিন করে তুলেছে। কেরি মঙ্গলবার যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া কথা বলেন, তখন তার পাশে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি জঙ্গি গ্রুপগুলোর জন্য পাকিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়সমূহ ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি মঙ্গলবার বলেন, এসব বিষয় (সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিদের আশ্রয়দান) মোকাবেলায় পাকিস্তানের জন্য অন্যদেশগুলোর সাথে যোগ দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। তার একথা ছিল ভারতের অবস্থানের প্রতি সুস্পষ্ট সমর্থন যে শান্তি আলোচনা ও সন্ত্রাস এক সাথে চলতে পারে না। কিন্তু তার বুধবারের মন্তব্যকে আগুনে পানি ঢালা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বুধবার কেরি বলেন, সত্যি বলতে কি, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের ফলে ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। মানুষ মহান ধর্ম ইসলামকে যেভাবে দেখছে তা এ ধর্মের প্রতিফলন নয়। সন্ত্রাসীরা তাকে চুরি করেছে, ছিনতাই করেছে। পাকিস্তান যখন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেছে তখন তীব্রভাবে ‘পুশব্যাক’ ও ‘ব্লোব্যাক’ সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলাকে কঠিন করে তুলেছে।
ভারত পাকিস্তান ও যেসব দেশ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের শিকার বলে আখ্যায়িত করে তাদের সবারই সমালোচনা করে এ বলে যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং সে যে পাল্টা আঘাতের শিকার হচ্ছে তা কিছু গ্রুপের জন্য যাদের দেশটি লালন করলেও তারা তারই বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ভারত বলে আসছে যে, সে পাকিস্তানের মদদকৃত সন্ত্রাসের শিকার। এর মধ্য দিয়ে ভারত পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গ্রুপগুলো যেমন লশকর-ই-তৈয়েবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদীর মত সংগঠনগুলোর হামলার কথা বুঝিয়ে থাকে।
কেরি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের যন্ত্রণা বোঝে এবং নতুন কোনো ট্রাজেডি পরিহার করতে দু’দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য বিনিময় করছে। তিনি বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই সহিংস উগ্রপন্থার মূলে আঘাত করতে হবে, একেক দেশের ক্ষেত্রে এ কারণ আলাদা। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেক ধর্মের মধ্যে সহিষ্ণুতা ও গ্রহণের সেতু তৈরি করতে হবে, আর তা করতে হবে সম্মানজনক পন্থায়।
ভারত-মার্কিন কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সংলাপে (এসঅ্যান্ডসিডি) সহসভাপতিত্ব করতে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি প্রিট্জকারের সাথে কেরি ভারত সফরে রয়েছেন। গত সোমবার বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে তিনি নয়াদিল্লী পৌঁছেন। বুধবার তার ভারত ছাড়ার কথা থাকলেও তিনি তা স্থগিত করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেন, সপ্তাহান্তে জি-২০ বৈঠকে তার চীন সফরে যাবার কথা থাকায় কেরি তার ভারত সফরের মেয়াদ বর্ধিত করেছেন।
মঙ্গলবার দু’দেশ নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সম্মত হয়। তার মধ্যে রয়েছে একটি উন্নত বিদ্যুত গ্রিডে মার্কিন অর্র্থায়ন এবং একটি সাইবারসিটি কাঠামো।
ভারত যেহেতু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায় সেজন্য কেরি আরো বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নিয়ম-কানুন সহজ করার জন্য ভারতের প্রতি আহবান জানান।
তিনি পণ্য ও সেবাকর (জিএসটি)-এর মত কর সংস্কার চালুর সাথে বাণিজ্য করার জন্য রীতিনীতি সহজ করার মোদি সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তবে সরকারের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার মোতাবেক ভারত সরকার তার জনগণের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে কিনা, কেরি সে প্রশ্ন করেন।
কেরি বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা আকর্ষণীয় অর্জন প্রত্যক্ষ করছি। তারপরও আসল একটি প্রশ্ন রয়ে যায় যে আমরা খুব দ্রুত বেশি করছি কিনা এবং এ ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু অংকের ব্যাপার এসে যায়। এ গতি বজায় রাখতে হলে ভারতকে বছরে ১ কোটি ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করতে হবে। যে কোনো বিচারেই হোক, এটা কোনো সহজ কাজ নয়।
কেরি উল্লেখ করেন, উদ্যোক্তাদের লাল ফিতার জটিলতামুক্ত অবস্থায় নতুন চিন্তার স্বাধীনতা দিতে হবে। তিনি বলেন, নিয়মবিধিকে মূলস্রোতে আনতে হবে ও তা অর্থবোধক করতে হবে। আপনাদেরকে এমন শর্তের আওতায় সব পরিচালনা করতে হবে যা বিনিয়োগ মূলধন আকর্ষণ করবে তা সে বিদেশী বা দেশী যে বিনিয়োগই হোক না কেন। তিনি বলেন, আপনাদের একটি সুবিবেচনা, স্বচ্ছতাভিত্তিক বাজার থাকতে হবে; আপনাদের থাকতে হবে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।
বুধবার পরের দিকে কেরি ও প্রিট্জকার প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে সাক্ষাত করেন।
বিগত দু’বছরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিস্তৃত ও শক্তিশালী হওয়ায় এবং সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ায় মোদি তার সন্তোষ প্রকাশ করেন। তার অফিস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, জুনে ওবামার সাথে শীর্ষ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নে দ্রুত অগ্রগতি ও সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করার দিকে তিনি তাকিয়ে আছেন।
মোদি বলেন, হ্যাংঝুতে জি-২০ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে সাক্ষাতের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন।
আইআইটিতে বক্তৃতায় কেরি বাংলাদেশের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধে বাংলাদেশের পক্ষে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে নেয়ায় ভারতের প্রশংসা করেন।
তিনি চীনের পদক্ষেপের ব্যাপারে দেয়া রায় ভারতের মেনে নেয়ার বিরোধিতা করেন। চীন দক্ষিণ চীন সাগরে হেগ আদালতের দেয়া রায় মেনে নেয়নি। এস অ্যান্ড সিডির পর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধে জড়িত সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পন্থায় সকল বিরোধ নিরসনের আহবান জানাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।