Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মায় পানি কমলেও স্বস্তি আসেনি

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজশাহী ব্যুরো : পদ্মায় সামান্য পানি কমলেও বানভাসী মানুষের দূর্ভোগ কমেনি। ঘরবাড়ি জমি জিরাত পানি বন্দী। বাতাসের ঝাপটায় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরের ঘরবাড়ি গুলোর উপর। গত তিনদিনে পানি কমেছে দশ সেন্টিমিটারের মত। এতে করে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। পানি আর না বাড়লেও পদ্মায় বেড়েছে তীব্র শ্রোত। সাথে ঝড়ো হাওয়া। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশখুটির ঘরগুলো যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে।
পদ্মার ভাঙন থেকে নগর রক্ষার জন্য গ্রোয়েন ও স্পার নির্মাণ করলেও সংস্কারের অভাবে সেগুলোর অবস্থাও নাজুক। অনেক স্থানে অস্তিত্ব নেই। মুল গ্রোয়েন হলো শ্রীরামপুরে টি গ্রোয়েন। এটি মুলত টিকিয়ে রেখেছে শহর রক্ষা বাঁধকে। যদি কোন কারনে ভেঙ্গে যায় তবে মুহূর্তের মধ্যে শহর তলিয়ে যাবে আট দশ ফুট পানির নীচে। কেননা পদ্মার তলদেশ ভরাট হতে হতে নগরীর তলদেশের চেয়ে সাত আট ফুট উঁচু হয়ে গেছে। পানি প্রবেশ করলে তা বের হবার রাস্তাও নেই। সেই টি গ্রোয়েন পর্যন্ত সংস্কারের অভাবে পড়েছে ঝুঁকির মুখে। গত কদিন ধরে হঠাৎ করে ফাটল দেখা দেয়ায় আতংকিত নগরবাসী। প্রথমে আট দশ ইঞ্চির মত স্থানে ফাটল হলেও এখন অনেক বড়। বাধের পশ্চিমাংশ পাঁচ থেকে ফুট দেবে গেছে। সবচেয়ে ঝুকির বিষয় হলো পানির নীচের গ্রোয়েনের অবস্থা। গ্রোয়েনের উপর পানির প্রচ- চাপ। শ্রোতের ঘুর্ণী চলছে মাথায়। নীচে কেমন অবস্থা বোঝার উপায় নেই। প্যাথম্যাট্রি সার্ভের পানির নীচের অবস্থা জানা যায়। সে ব্যবস্থা এখানকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নেই। গ্রোয়েনের ফাটল প্রথমে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা খুব একটা কাজে আসছেনা বলে এখন বড় বড় বোল্ডার ফেলা হচ্ছ্ েশত শত বস্তা জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এরপর ফেলা হচ্ছে বড় বড় বোল্ডার। তীব্র শ্রোতের কারনে ফেলা জিও ব্যাগ ও বোল্ডার ঠিকমত স্থানে থাকছে কিনা তা খুব একটা বোঝা যাচ্ছেনা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আতংকের কিছু নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার কাজ চলছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ হচ্ছে। গ্রোয়েন এলাকায় মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নগরীর পূর্বাঞ্চলে পঞ্চবটি এলাকায় নির্মিত কংক্রীটের আইবাঁধ আছড়ে পড়ছে পানি। অনেক আগে নির্মিত বড়কুঠি, হাদিরমোড় এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্পারের অস্তিত্ব আর নেই। সাধারন মানুষ দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে। গত বছর মুল গ্রোয়েন টি বাঁধের সামান্য পশ্চিমে বেশ খানিকটা অংশ হঠাৎ করে ধ্বসে গেলেও তা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি মেরামত করতে পারেনি। নদীর ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষার জন্য তীর সংরক্ষণের কোন কার্যক্রম নেই। ভাঙন রোধ করতে না পারার কারনে দক্ষিণের বিশাল জনপদ চলে গেছে নদী গর্ভে। এমনকি সীমান্ত ফাঁড়ি সীমানা পিলারও চলেগেছে। এখন ঐসব স্থানে আর্ন্তজাতিক আইনের দোহাই দিয়ে ভারত তাদের দখলীস্বত্ব কায়েম করেছে। চরখিদিরপুর খানপুর ভেঙে যাওয়ায় ভারতীয় বিএসএফ তাদের অভ্যন্তরের পাঁচ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত মোহনগঞ্জ ক্যাম্প সরিয়ে এনেছে। নদী গর্ভে চলে যাওয়া ভুখ-ে বাংলাদেশীদের নৌকা চলাচলে তারা বাধা দিচ্ছে হয়রানী করছে। যেকটি গ্রাম বাকী রয়েছে তা রক্ষার উদ্দ্যোগ না নিলে সেগুলো চলে যাবে নদী গর্ভে। আর বাংলাদেশ হারাবে তারা একক জমির মালিকানা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তারা দক্ষিণে ও উত্তরে তীর রক্ষার জন্য হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাঠিয়েছিল কিন্তু তা অনুমোদন লাভ করেনি। এ ব্যাপারে তাদের দোষারপ করার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন । পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞ বলছেন মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে আজ পদ্মার এমন বেহাল দশা। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি গঙ্গা ব্যারেজ নির্মান আর জরুরী প্রয়োজন পদ্মায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং। নদীর উভয় তীর সুরক্ষার জন্য পরিকল্পিত কর্মকা- শুরু। নইলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মায় পানি কমলেও স্বস্তি আসেনি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ